Advertisement
E-Paper

অস্তশশীর কুশলী চালে আপাতত পিছিয়ে পনীর

ইয়ার আরত্তা মুদাল আমাইচার? পরের মুখ্যমন্ত্রী কে! শুধু তামিল রাজনীতি নয়, আপাতত এই একটি প্রশ্নকে ঘিরে তোলপাড় জাতীয় রাজনীতিও।সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আজ দোষী সাব্যস্ত হতেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড় থেকেই ছিটকে যান শশিকলা।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩০
রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাওয়ের (ডান দিকে) সঙ্গে পালানিসামি। মঙ্গলবার চেন্নাই রাজভবনে। ছবি: পিটিআই।

রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাওয়ের (ডান দিকে) সঙ্গে পালানিসামি। মঙ্গলবার চেন্নাই রাজভবনে। ছবি: পিটিআই।

ইয়ার আরত্তা মুদাল আমাইচার? পরের মুখ্যমন্ত্রী কে!

শুধু তামিল রাজনীতি নয়, আপাতত এই একটি প্রশ্নকে ঘিরে তোলপাড় জাতীয় রাজনীতিও।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আজ দোষী সাব্যস্ত হতেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড় থেকেই ছিটকে যান শশিকলা। ওই রায়ের দৌলতে প্রতিদ্বন্দ্বী পনীরসেলভম শুরুতে এগিয়ে গেলেও, রায় ঘোষণার আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই চার বারের বিধায়ক ও সড়কমন্ত্রী ই কে পালানিসামিকে বিধায়ক দলের নেতা হিসাবে নির্বাচিত করে পাল্টা চাল দেয় শশী শিবির। শুধু তাই নয়, বিকাল পাঁচটায় রাজ্যপাল সি বিদ্যাসাগর রাওয়ের সঙ্গে দেখা করে, সরকার গড়ার দাবি জানিয়ে ১৩৪ জন বিধায়কের স্বাক্ষর করা চিঠিও জমা দিয়ে আসেন পালানিসামি। শশিকলা দ্রুত বিকল্প রাস্তা ধরায় প্যাঁচে পড়ে যায় পনীর শিবির। বিধায়কদের সমর্থন আদায়ে পিছিয়ে থেকেও, সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ সরকার গড়ার দাবি জানিয়ে রাজ্যপালের কাছে যান পনীর-ঘনিষ্ঠ দুই নেতা ভি মৈত্রেয়ন ও কে পান্ডিয়ারাজন। রাজ্যপালের কাছে দুই শিবিরের দ্বারস্থ হওয়ার অর্থ— এখন একই দলের দুই নেতা মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হয়ে সম্মুখ সমরে।

প্রশ্ন হল— পনীর না পালানিসামি, কাকে আগে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে ডাকবেন রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাও? নাকি দু’শিবিরের নেতাকেই একই দিনে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এক এক করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বলবেন রাজ্যপাল? শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন রাওই। তবে দ্রুত বিধানসভার অধিবেশন ডেকে দুই শিবিরকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি।

আরও পড়ুন:

সরকার হবে কারও সাহায্য ছাড়া, দাবি পনীরের

ভোটাভুটির ফলাফল কী হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও, উভয় শিবিরই তাল ঠুকে জেতার দাবি করে চলেছে। রাজ্যপালের কাছে আজ পালানিসামি বলেন, তাঁর কাছে ১৩৪ জন বিধায়কের স্বাক্ষর করা চিঠি রয়েছে। অন্য দিকে পনীরসেলভমের দাবি, ভোটাভুটি হলেই প্রমাণ হয়ে যাবে যে বিধায়করা তাঁর পক্ষে রয়েছেন। সকালে আটকে থাকা বিধায়কদের খোলা চিঠি লিখে সাময়িক মতপার্থক্য ভুলে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু সকালে শশীর সাজা ঘোষণার পরে পনীর-শিবির যে ভাবে উচ্ছ্বসিত ছিল, বেলা গড়াতেই সেই উত্তেজনায় ভাটা পড়ে যায়। দুপুরে পনীর সমর্থকদের একটি অংশ ‘গোল্ডেন বে’ রিসর্টে ঢুকে বিধায়কদের বার করে আনার চেষ্টা করলে তা রুখে দেয় পুলিশ। এর পর রিসর্টে গিয়ে বিধায়কদের সরাসরি বার্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন পনীরসেলভম। যা দেখে অনেকেই মনে করছেন, শশীর চালে কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়েছেন পনীর। জয়ললিতার বোনঝি দীপা জয়কুমার রাতে পনীর শিবিরে যোগ দিলেও তাতে খুব যে হিসেবের হেরফের হবে, অমনটা আশা করছেন না কেউই।

ক্ষমতা দখলে বিধায়কদের নিয়ে এ ভাবে টানাপড়েন তামিলনাড়ুতে নতুন হলেও, উত্তরপ্রদেশ কিন্তু এ ধরনের ঘোড়া কেনাবেচার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে পরিচিত। গত দু’দশকে একাধিক বার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে রাজ্যপালের সামনে বিধায়কদের লাইন দিয়ে প্যারেড করাতে দেখা গিয়েছে মায়াবতী বা মুলায়মকে। কিন্তু সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন মিছিল একটি ‘প্রথা’ হতে পারে, কিন্তু সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃত নয়। আবার নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শঙ্করদয়াল শর্মার কাছে সরকার গড়ার দাবি জানিয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। সে সময়ে বাজপেয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদ থাকার যে যুক্তি তুলে ধরেছিলেন, তাতে তিনি সন্তুষ্ট হওয়ায় এনডিএ-কে প্রথমে সরকার গড়ার সুযোগ দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেছিলেন শর্মা। যদিও পরে প্রায় একই পরিস্থিতিতে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণন দাবিদার দু’শিবিরকে সমর্থনকারী দল ও সাংসদদের স্বাক্ষর করা তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে নানা জনের নানা মত যে রয়েছে, তা স্পষ্ট।

এ ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন রাজ্যপাল? এডিএমকের এই বিতর্কে শুরু থেকেই দূরত্ব রেখে চলেছেন রাজ্যপাল। প্রতিটি পদক্ষেপই করেছেন কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে।

আজ শশীর জেলে যাওয়া নিশ্চিত হতেই ফের দুই শিবিরকে এক সঙ্গে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের পক্ষে সওয়াল করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী তার বিরোধিতা করলেও, আজ রোহতগি বলেন, ‘‘এর আগে উত্তরপ্রদেশে কল্যাণ সিংহ ও জগদম্বিকা পাল— একই দলের দুই নেতা মুখ্যমন্ত্রিত্বের লড়াইয়ে নেমেছিলেন। সেই ফয়সালাও বিধানসভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে মীমাংসা হয়েছিল। এখানেও রাজ্যপালের উচিত কেবল মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য একটি বিশেষ অধিবেশন ডাকা। ১৫ মিনিটেই প্রমাণ হয়ে যাবে কার পাল্লা ভারী।’’ রোহতগির এই মন্তব্য সমর্থন করেছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমও। তাঁর কথায়, ‘‘এক জন দাবিদার হলে সমস্যা নেই। দু’জন দাবিদার হলে উত্তরপ্রদেশ মডেল অনুসরণ করা উচিত।’’ সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে রোহতগির পরামর্শ মেনে বিধানসভায় এক সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সিদ্ধান্তে সিলমোহর বসানোর পক্ষপাতী বিদ্যাসাগর।

বিধায়ক সমর্থন কার দিকে রয়েছে?

সুপ্রিম কোর্টে দোষী সাব্যস্ত হলে শশিকলার শিবির তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে— এমনটাই আশা করছিলেন পনীরসেলভম শিবির। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, জেল যাত্রা নিশ্চিত হওয়া সত্ত্বেও নিজের ঘর অনেকাংশেই ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন শশী। জেলে যেতেই হবে বুঝে তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে দলের দায়িত্ব তুলে দেন এডাপাড্ডির বিধায়ক তথা সড়ক-বন্দরমন্ত্রী পালানিসামির হাতে। প্রভাবশালী গৌন্দর সম্প্রদায়ের ওই নেতা জয়ার ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু শশীকে মুখ্যমন্ত্রী করার দাবিতে তিনিই প্রথম প্রকাশ্যে সরব হয়েছিলেন। ধারে-ভারে জয়ার মন্ত্রিসভার তিন নম্বর মন্ত্রী ছিলেন তিনি।

শেষ খবর, ক্ষমতা হস্তান্তর নির্বিঘ্নে করে যেতে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অন্তত এক মাসের জন্য জেল যাত্রা আটকাতে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শশী। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, জেলে বসেই দলের যাবতীয় ভাল-মন্দ দেখভাল করবেন। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে আগামী দশ বছর তিনি নির্বাচনে না-লড়তে পারলেও, প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল সোলি সোরাবজির কথায়— ‘‘শশীর দল পরিচলনা করাকে আটকাতে পারে না এই রায়।’’

O. Panneerselvam VK Sasikala EK Palanisamy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy