Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিমা, শ্রম সংস্কার নিয়ে উদ্বেগে কেন্দ্র

সরকারের দু’মাসের মাথায় বড় আর্থিক সংস্কার করতে গিয়ে হোঁচট খেতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীকে। বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির পরিমাণ ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করানোর জন্য আজ রাজ্যসভায় বিমা বিলটি কার্যসূচিতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বিরোধীদের মধ্যে মতের মিল না হওয়ায় তা পেশ করাই যায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫১
Share: Save:

সরকারের দু’মাসের মাথায় বড় আর্থিক সংস্কার করতে গিয়ে হোঁচট খেতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদীকে।

বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির পরিমাণ ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করানোর জন্য আজ রাজ্যসভায় বিমা বিলটি কার্যসূচিতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বিরোধীদের মধ্যে মতের মিল না হওয়ায় তা পেশ করাই যায়নি। মোদী মন্ত্রিসভা শ্রম সংস্কারের বিলটিও সংসদে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বিমা বিলের বিরোধিতার আবহেই শ্রম সংস্কার বিলটি নিয়েও বিরোধিতা দানা বাঁধতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় সংসদের চলতি অধিবেশনের বাকি দশ দিনে সংস্কারের বিলগুলি পাশ করানো নিয়ে সংশয়ে মোদী সরকার।

লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। ফলে কোনও বিলই লোকসভায় পাশ করানো নিয়ে উদ্বেগ নেই। কিন্তু রাজ্যসভাতে এখনও সংখ্যালঘু বিজেপি। সরকারকে কোণঠাসা করতে তাই কখনও নৃপেন্দ্র মিশ্রের নিয়োগ, কখনও বা নিতিন গডকড়ীর বাড়িতে আড়ি পাতার অভিযোগ নিয়ে বিরোধীরা একজোট হচ্ছেন। মোদীর সংস্কারের বিলগুলি নিয়ে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের যে বড়সড় আপত্তি রয়েছে, তা নয়। কিন্তু কৌশলগত ভাবেই নতুন সরকারকে এই বিলগুলি পাশের কৃতিত্ব দিতে রাজি নয় তারা। বিশেষত যখন বিজেপি এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসকে লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদটি দেয়নি। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “বিমা বিলটি মনমোহন সিংহই আনতে চেয়েছিলেন। তখন বামেদের সঙ্গে মিলে বিজেপি বিরোধিতা করে। ক্ষমতায় এসে সেই বিলই পাশ করাতে চাইছে তারা।”

কিন্তু নীতিগতভাবে যেহেতু বিলের ব্যাপারে বিশেষ আপত্তি নেই, তাই প্রকাশ্যে কংগ্রেস নেতারা এর বিরোধিতা করছেন না। বরং গুলাম নবি আজাদ থেকে আনন্দ শর্মার মতো প্রাক্তন মন্ত্রীরা বলছেন, “নতুন সরকার বিলটি কী চেহারায় নিয়ে এসেছে, তা দেখেই সিদ্ধান্ত নেব। বিরোধী দল হিসেবে গঠনমূলক সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত।”

কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, কংগ্রেস আসলে এই অছিলায় বিলটি পেশ করা পিছিয়ে দিতে চাইছে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, “বিলটিতে এমন কিছু পরিবর্তন করা হয়নি। শুধুমাত্র ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করা হচ্ছে। সেটি ইউপিএ সরকারও চেয়েছিল। বাকি সংশোধনগুলি নামমাত্র। এতে আপত্তি থাকার কোনও কথা নয়।”

বিজেপি জানে, কংগ্রেসের সাহায্য ছাড়া রাজ্যসভার বৈতরণী পার করা যাবে না। তাই অরুণ জেটলি, বেঙ্কাইয়া নায়ডুর মতো নেতারা আলোচনা করছেন কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে। কিন্তু সেখানেও কংগ্রেসের একটি অংশ বিলটি সিলেক্ট কমিটির কাছে পাঠানোর প্রস্তাব দিচ্ছে।

শ্রম সংস্কারের ক্ষেত্রেও বড় পদক্ষেপ করতে চায় কেন্দ্র। কারখানা আইন, শিক্ষানবিশি আইন (অ্যাপ্রেনটিসশিপ অ্যাক্ট) ও কিছু সংস্থার রিটার্ন পেশ ও রেজিস্টার রাখা থেকে রেহাই সংক্রান্ত আইনের কয়েকটি বিষয় পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে শ্রম সংস্কার বিলে। প্রতি ৩ মাসে ওভারটাইমের সীমা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ ঘণ্টা করা, শ্রমিকদের সুরক্ষা বাড়ানো ও মহিলাদের রাতের শিফটে কাজ করতে দিতে চায় কেন্দ্র। সন্তানসম্ভবা মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের চলন্ত মেশিনে কাজ করা বন্ধের প্রস্তাবও রয়েছে বিলে। বাৎসরিক সবেতন ছুটির পরিমাণ ২৪০ দিন থেকে কমিয়ে ৯০ দিন করারও প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র। এই পরিবর্তনগুলি আনতে কারখানা আইন সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেশে শিক্ষানবিশি প্রকল্পের সাফল্যের হার উল্লেখযোগ্য নয় বলে বাজেট বক্তৃতাতেই জানান অরুণ জেটলি। সরকারি সূত্রে খবর, ওই প্রকল্পের ৪ লক্ষ ৯০ হাজার আসনের মধ্যে মাত্র ২ লক্ষ ৮০ হাজার আসনে শিক্ষার্থী পাওয়া যায়। তাই তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবা-সহ ৫০০টি নতুন পেশাকে শিক্ষানবিশি আইনের আওতায় আনতে চায় মোদী সরকার। যে প্রতিষ্ঠানের কর্মী সংখ্যা ৪০ বা তার কম, তাদের শ্রম আইনের আওতা থেকে ছাড়ও দিতে চায় সরকার।

প্রত্যাশিত ভাবেই শ্রম সংস্কারের বিলটি মন্ত্রিসভার ছাড়পত্র পাওয়া মাত্র বামেরা বিরোধিতা শুরু করেছেন। এআইটিইউসির সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, “বিলটি অনুমোদনের আগে কোনও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গেই কথা হয়নি। ওভারটাইম বাড়ানো বা মহিলাদের রাতে কাজ করার যে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে তা সমর্থন করা যাবে না।”

শিল্পমহল সরকারের এই প্রস্তাবিত শ্রম সংস্কারকে স্বাগত জানিয়েছে। বণিকসভা সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এই প্রস্তাব থেকে বোঝা যায়, সরকার ব্যবসার চাহিদা বোঝে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

insurance labour reform central government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE