Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভোল বদলে ডাকঘর হবে ব্যাঙ্ক

গল্পের পোস্টমাস্টার দাদাবাবু ‘স্বর-অ’, ‘স্বর-আ’ থেকে যুক্তাক্ষর পর্যন্ত শিখিয়েছিলেন গ্রামের রতনকে। এখন গ্রামের মানুষকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া ও জীবনবিমা করিয়ে দেওয়ার কাজ করতে হবে বাস্তবের পোস্টমাস্টারদের। কেন্দ্রীয় সরকার আমজনতার জন্য কী কী প্রকল্প এনেছে, তা জানানোর দায়িত্বও এ বার বর্তাচ্ছে তাঁদের ওপর। ব্যক্তিগত চিঠিচাপাটির দিন গিয়েছে। কিন্তু দেশের প্রতিটি গ্রামে এখনও রয়েছে ডাকঘর। ডাক বিভাগের এই পরিকাঠামোকে ব্যাঙ্ক ও বিমা পরিষেবার কাজে লাগানোর ভাবনা বহু দিন চলছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৭
Share: Save:

গল্পের পোস্টমাস্টার দাদাবাবু ‘স্বর-অ’, ‘স্বর-আ’ থেকে যুক্তাক্ষর পর্যন্ত শিখিয়েছিলেন গ্রামের রতনকে। এখন গ্রামের মানুষকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া ও জীবনবিমা করিয়ে দেওয়ার কাজ করতে হবে বাস্তবের পোস্টমাস্টারদের। কেন্দ্রীয় সরকার আমজনতার জন্য কী কী প্রকল্প এনেছে, তা জানানোর দায়িত্বও এ বার বর্তাচ্ছে তাঁদের ওপর।

ব্যক্তিগত চিঠিচাপাটির দিন গিয়েছে। কিন্তু দেশের প্রতিটি গ্রামে এখনও রয়েছে ডাকঘর। ডাক বিভাগের এই পরিকাঠামোকে ব্যাঙ্ক ও বিমা পরিষেবার কাজে লাগানোর ভাবনা বহু দিন চলছে। এ বার আইন করে ‘পোস্টাল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া’ বা ডাকঘর-ব্যাঙ্ক তৈরির পথে হাঁটতে চায় মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনায় ঘরে ঘরে ব্যাঙ্ক পরিষেবা পৌঁছে দিতেও এই ডাকঘর-ব্যাঙ্ককেই সেতু করতে চান মোদী। এখানেই শেষ নয়। প্রধানমন্ত্রীর মতে, গ্রামে ‘স্কুলমাস্টার’দের মতোই সম্মান পান পোস্টমাস্টাররা। ব্যাঙ্ক, বিমা, সরকারি পরিষেবা থেকে সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে তথ্য ছড়িয়ে দিতে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্তারা মনে করছেন, ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পে এখনও যে পরিমাণ টাকা জমা পড়ে, তাতে দেশের ডাক বিভাগ যে কোনও ব্যাঙ্ককে টেক্কা দিতে পারে। ডাকঘরে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ এখন ৬ লক্ষ কোটি টাকা। একমাত্র স্টেট ব্যাঙ্ক ছাড়া অন্য কোনও ব্যাঙ্কের সিন্দুকে এত অর্থ জমা নেই। শুধু গ্রামের মানুষ নন, পঞ্চায়েতের মতো সরকারি সংস্থাগুলিও এখানে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে।

সরকারি সূত্রের খবর, আগামী মাসের মধ্যেই পোস্টাল ব্যাঙ্ক চালু করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। ব্যাঙ্কের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আগেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন করেছিল ইন্ডিয়া পোস্ট। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বক্তব্য ছিল, এ বিষয়ে কেন্দ্রই সিদ্ধান্ত নেবে। ডাক বিভাগের তরফে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে, তারা পুরোপুরি ব্যাঙ্ক হয়ে উঠতে তৈরি। কেন্দ্র এ বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। পাশাপাশি আইন করে ইন্ডিয়া পোস্টকে ব্যাঙ্কে রূপান্তরিত করার বিষয়েও কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এ জন্য ১৮৯৮ সালের ইন্ডিয়ান পোস্টঅফিস আইনে সংশোধন করার কথা ভাবা হচ্ছে।

ইউরোপ তো বটেই, এশিয়ায় চিনের মতো দেশও ডাক বিভাগকে ব্যাঙ্কে রূপান্তরিত করেছে। চিনের পোস্টাল সেভিংস ব্যাঙ্ক সে দেশের প্রথম পাঁচটি বৃহত্তম ব্যাঙ্কের অন্যতম। এ দেশে ডাক বিভাগের পরিকাঠামোকে কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, তা খতিয়ে দেখতে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসেই একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করেন মোদী। প্রাক্তন ক্যাবিনেট সচিব টি এস আর সুব্রহ্মণ্যমের নেতৃত্বাধীন টাস্ক ফোর্স ডিসেম্বরে রিপোর্ট পেশ করেছে। সেই রিপোর্ট নিয়েই গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী, তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বৈঠকে বসেন। টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ, পোস্টাল ব্যাঙ্ক তৈরি করে প্রথম তিন বছরে প্রতিটি জেলায় একটি করে শাখা খোলা হোক। প্রধানমন্ত্রীর জন ধন যোজনার সবথেকে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠবে এই পোস্টাল ব্যাঙ্ক।

ই-কমার্সের দুনিয়ায় ডাক বিভাগ যে কোনও বেসরকারি সংস্থাকে টেক্কা দিতে পারে বলে সুব্রহ্মণ্যমের মত। ইন্টারনেটে কেনাবেচার জন্য তৈরি ই-কমার্স সংস্থাগুলি এখন শহুরে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। ডাক বিভাগ নিজস্ব ই-কমার্সের ব্যবসা খুলে গ্রামে ব্যবসা করতে পারে। দেশে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ডাকঘর রয়েছে। সেই ডাকঘরের মাধ্যমে বিমা পরিষেবাও পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। সুব্রহ্মণ্যমের রিপোর্ট বলছে, ব্যাঙ্ক, বিমা ও ই-কমার্স এখনই এই তিনটি ব্যবসা ডাক বিভাগের শুরু করা উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

post office postal bank of india
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE