Advertisement
E-Paper

গরিবের পেট ভরান বাহাত্তুরে ‘রুটিবাবা’

বিহারের জহানাবাদ শহরে অনেকে তাঁকে ‘রুটিবাবা’ বলেই জানেন। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, এক দিনও নিজের ‘কাজ’ বন্ধ করেননি শর্মাজি। তাই স্থানীয় মানুষও তাঁকে সাধ্যমতো সাহায্য করেন।

দিবাকর রায়

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ০৩:১৫
ভরসা: জহানাবাদে বসন্ত শর্মা। —নিজস্ব চিত্র।

ভরসা: জহানাবাদে বসন্ত শর্মা। —নিজস্ব চিত্র।

তিনিও সান্তা। তবে বছরের এক দিন নন। গরিবদের জন্য প্রতিদিন। স্লেজে চেপে নন, সাড়ে ছ’কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে আসেন তিনি। বুভুক্ষু গরিব অসহায় মানুষের পেট ভরানোর জন্য বিলি করেন রুটি। গত দু’বছর ধরে এ কাজ করে আসছেন ৭২ বছরের বসন্ত শর্মা।

বিহারের জহানাবাদ শহরে অনেকে তাঁকে ‘রুটিবাবা’ বলেই জানেন। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, এক দিনও নিজের ‘কাজ’ বন্ধ করেননি শর্মাজি। তাই স্থানীয় মানুষও তাঁকে সাধ্যমতো সাহায্য করেন। শহরের প্রায় ২৫০ পরিবারের হাজার খানেক সদস্য প্রতিদিন নিজেদের খাবারের থেকে একটি করে রুটি তুলে রাখেন শর্মাজির জন্য। সেই রুটি সংগ্রহ করে গরিবদের বিলিয়ে দেন তিনি।

পটনা আর গয়া জেলার মাঝে রয়েছে জহানাবাদ জেলা। এক দিকে মাওবাদী, অন্য দিকে রণবীর সেনা, জাতপাতের সংঘর্ষ। ক’বছর আগেও জহানাবাদ থাকত শিরোনামে। সেখানে জাতপাতের বেড়া ভেঙে এই রুটি সংগ্রহ এবং তা বিতরণ নিঃসন্দেহে বিপ্লব।

আরও পড়ুন: ভাঁওয়ারি দেবী বেঁচে, কোর্টে দাবি বান্ধবীর

জহানাবাদ শহর থেকে প্রায় সাড়ে ছ’কিলোমিটার দূরের গ্রাম, চাতর। সেই গ্রামেই বাড়ি শর্মাজির। সেখান থেকেই সাইকেল চালিয়ে শহরে আসেন তিনি।

কী ভাবে শুরু করলেন এই অভিনব কাজ?

তাঁর কথায়, ‘‘বছর দু’য়েক আগে সাত-আট জন যুবক আমাদের গ্রামে এসেছিলেন। তাঁরাই বলেন, শহরে গরিব মানুষেরা খুব কষ্টে রয়েছেন। দু’বেলা খাবার পান না। অথচ সেখানে প্রতিদিনই অনেকের বাড়িতে খাবার নষ্ট হয়।’’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সেই যুবকদের কথা তাঁর মনে দাগ কাটে। এরপরে শহরে এসে ওই যুবকদের সাহায্যে একের পর এক বাড়িতে গিয়ে একটি করে রুটি দাবি করেন। প্রথমে অনেকে অবাক হয়েছিলেন। কিন্তু বৃদ্ধের কথা ফেলতে পারেননি।

সকলের জন্য রুটির লক্ষ্য নিয়ে সেই থেকেই রুটিবাবার পথে নামা। তাঁর উৎসাহ দেখে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয়রাও। সকলে মিলে তৈরি করেছেন ‘এক রোটি’ সংস্থা। সংস্থার ভারপ্রাপ্ত কর্তা আমনদীপ বলেন, ‘‘ভদ্রলোকের কাজ দেখে বাড়িতে বসে থাকতে পারিনি। আমরাও এগিয়ে এসেছি। আমাদের সংস্থায় সদস্য হতে গেলে কোনও চাঁদা দিতে হয় না। শুধু প্রতিদিন একটি করে রুটি দিতে হয়।’’

সংস্থার তরফে বাড়ি বাড়ি ছোট টিফিন বক্স দেওয়া হয়েছে। রুটি আর শুকনো কোনও তরকারি তৈরি করে রেখে দেন গৃহিনীরা। সকালে সাইকেলে চেপে ঘণ্টি বাজিয়ে হাজির হন শর্মাজি। বাড়ির বাইরে থাকা ঝোলানো ব্যাগে সেই রুটি ভর্তি টিফিন বক্স থাকে। তা সংগ্রহ করে নিজের বড় ক্যাসারোলে নিয়ে চলে যান তিনি। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত রুটি সংগ্রহের কাজ করে সন্ধ্যা ছ’টায় তা গরিবদের মধ্যে বিলি করেন। তারপরেই বাড়ি ফেরেন তিনি। আবার পরের দিন সকালে যাত্রা শুরু তাঁর।

Vasant Sharma বসন্ত শর্মা Bread জহানাবাদ বিহার bihar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy