Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
অর্থ-হীন ৩০ দিন

নোট নেই, ধন্দ বাড়াচ্ছে গোপনীয়তা

পূর্ণিমাদেবী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলকে চেনেন না। চেনার আগ্রহও নেই। তিনি শুধু জানতে চান, মাসের সাত তারিখেও সামান্য ক’টা টাকা পেনশন তুলতে ব্যাঙ্ক তাঁকে এ ভাবে বারবার ঘোরাচ্ছে কেন?

উর্জিত পটেল

উর্জিত পটেল

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৫৯
Share: Save:

পূর্ণিমাদেবী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলকে চেনেন না। চেনার আগ্রহও নেই। তিনি শুধু জানতে চান, মাসের সাত তারিখেও সামান্য ক’টা টাকা পেনশন তুলতে ব্যাঙ্ক তাঁকে এ ভাবে বারবার ঘোরাচ্ছে কেন? সপ্তাহে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত তোলা যাবে বলেও কেন এখন ছ’হাজার দিতে আপত্তি? তবে কি এখনও এতটাই কম ছাপা হয়েছে নতুন পাঁচশো, দু’হাজারের নোট? না কি পর্যাপ্ত সংখ্যায় তা এসে পৌঁছয়নি এ রাজ্যে?

অসুস্থ, বৃদ্ধা পূর্ণিমাদেবীর কথা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের কানে পৌঁছনোর কথা নয়, পৌঁছয়নিও। কিন্তু তাঁর প্রশ্ন বেশ কিছু দিন ধরেই তুলছেন অনেক সাধারণ মানুষ। অভিযোগের তির ছুঁড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর দাবি, ‘‘এ রাজ্যে ইচ্ছে করেই তুলনায় কম নোট পাঠানো হচ্ছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেশ করা হোক।’’ আমজনতা, ব্যাঙ্ককর্মী থেকে শুরু করে বিরোধীদের জিজ্ঞাসা, এত বড় নোট-কাণ্ডে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর কোথায়? কত নোট ছাপা হচ্ছে, তা কোথায় যাচ্ছে— এ সব নিয়ে কীসের এত ঢাকঢাক-গুড়গুড়? কেন এত গোপনীয়তা? বুধবার এই প্রশ্ন উঠল রাজ্যসভাতেও। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ প্রশ্ন তুললেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কোথায়, কত নোট পাঠাচ্ছে, রোজ সেই তথ্য তারা দিচ্ছে না কেন?

এ দিন ঋণনীতি ঘোষণার সাংবাদিক বৈঠকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের দেখা পাওয়া গেল। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর মিলল না। নোট নিয়ে শীর্ষ ব্যাঙ্ক কিছু শুকনো পরিসংখ্যান দিল ঠিকই, কিন্তু নতুন নোট ছাপার সংখ্যা কিংবা তা পাঠানো নিয়ে প্রশ্নের উত্তর তাতে নেই।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রের অবশ্য দাবি, এ ভাবে কোনও দিন তথ্য দেওয়া হয় না। কারণ, কোন রাজ্যে কত নোট যাচ্ছে, তা তার ভৌগোলিক অবস্থান থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। সে সব বাদ দিয়ে কোথায় কত নোট গিয়েছে, শুধু সেই তথ্য দিলে অকারণে বৈষম্যের অভিযোগ উঠতে পারে।

শীর্ষ ব্যাঙ্ক যেটুকু জানিয়েছে, তা-ও অবশ্য কিছুটা গোলমেলে ঠেকছে অর্থনীতির মাস্টারমশাইদের। এ দিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক বলেছে, ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের সরকারি ফরমানের পর থেকে ব্যাঙ্কের ঘরে পুরনো পাঁচশো ও হাজারের নোট ফিরে এসেছে মোট ১১.৫ লক্ষ কোটির। তার মানে, ওই দুই নোটে ৮ নভেম্বরের আগে মোট যা টাকা (১৪.১৩ লক্ষ কোটি) অর্থনীতিতে ছিল, তার প্রায় ৮০ শতাংশ। ৩০ ডিসেম্বর এখনও সপ্তাহ তিনেক বাকি। সেই সময়ে আরও পুরনো নোট ব্যাঙ্কে ফিরবে। ফলে অর্থনীতির অনেক অধ্যাপকের

জিজ্ঞাসা, তা হলে নগদে কালো টাকা আদপে কতটুকু? তার জন্য আমজনতার এত ভোগান্তি যুক্তিযুক্ত কি? না কি তার সিংহভাগই রাস্তা খুঁজে নিয়েছে সাদা হওয়ার?

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আরও জানিয়েছে, নোট বাতিলের পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৩.৮১ লক্ষ কোটি টাকার নোট বাজারে ছেড়েছে তারা। অর্থাৎ, তুলে নেওয়া টাকার মোটে এক-তৃতীয়াংশ। তাতেই এক মাস কাবার। প্রধানমন্ত্রীর ‘মাত্র ৫০ দিন কষ্টের’ বয়ান এর পরেও টিকবে তো?

আর সেই কারণেই ক্রমশ জোরদার হচ্ছে এই দাবি যে, নোট জোগানের বিষয়ে পরিষ্কার তথ্য দিক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। নোট বাতিলের পর থেকেই তারা নিয়মিত বলে চলেছে, বাজারে নোটের জোগান যথেষ্ট। কিন্তু ব্যাঙ্কে গিয়ে বা এটিএমে তা আদৌ মনে হচ্ছে না। ব্যাঙ্কে একবারে সপ্তাহে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত তোলার ছাড়পত্র রয়েছে খাতায়-কলমে। কিন্তু ব্যাঙ্কে লাইনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা তা বলছে না। এটিএমে পাঁচশোর নোট পাওয়াও লটারি জেতার সামিল।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর আর গাঁধীর দাবি, ‘‘নোট ছাপতে ছাপাখানাগুলি দিনভর কাজ করছে। ১০০ টাকা ও তার কম টাকার নোটই ছাড়া হয়েছে ১,৯১০ কোটি। গত তিন বছরে মোট যত নোট জোগানো হয়েছে, তার থেকেও বেশি।’’

পূর্ণিমাদেবী অবশ্য এত অঙ্ক বোঝেন না। তিনি শুধু নিজের পেনশনটুকু হাতে পেতে চান।

নজরে নোট

৮ নভেম্বরের পর থেকে...

• ব্যাঙ্কে ফিরেছে ১১.৫ লক্ষ কোটির বাতিল নোট n বাজারে জোগান ৩.৮১ লক্ষ কোটির

• ১০০ বা তার কম টাকার নোট ছাড়া হয়েছে ১,৯১০ কোটি

কিন্তু...

• ২০০০ ও নতুন ৫০০ টাকার নোটের সংখ্যা জানা নেই n কোন রাজ্যে কত নোট, তথ্য নেই সে সম্পর্কেও

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Urjit Patel Demonetisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE