Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
National News

রোহিঙ্গাদের জন্য দরজা বন্ধ, কিন্তু নাগরিক হচ্ছেন ১ লক্ষ চাকমা-হাজং

অরুণাচলে বসবাসকারী প্রায় ১ লক্ষ চাকমা-হাজং উদ্বাস্তুকে নাগরিকত্ব দিচ্ছে ভারত সরকার।

সুপ্রিম কোর্ট ২০১৫ সালেই চাকমা এবং হাজংদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এত দিনে রূপায়ণের পথে সেই নির্দেশ। —ফাইল চিত্র।

সুপ্রিম কোর্ট ২০১৫ সালেই চাকমা এবং হাজংদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এত দিনে রূপায়ণের পথে সেই নির্দেশ। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৮:১৬
Share: Save:

মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবে না ভারত, স্পষ্ট জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। নয়াদিল্লির এই সিদ্ধান্তের কড়া নিন্দা এসেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে। পাল্টা জবাব দিয়ে নয়াদিল্লি জানিয়েছে, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে ভারতই। কিন্তু এই চাপানউতোরের মধ্যেই চাকমাদের নিয়ে অন্য সুর সরকারের। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে আসা চাকমা এবং হাজংদের সরাসরি ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট ২০১৫ সালেই চাকমা ও হাজংদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। অরুণাচল প্রদেশের সরকার এই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সে আবেদন খারিজ করে দেয়। আদালতের সেই রায়ের প্রায় দু’বছর পরে নির্দেশ রূপায়ণে উদ্যোগী হল কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বিষয়টি নিয়ে বুধবার বৈঠক ডেকেছিলেন। সে বৈঠকে অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু জানান, চাকমা-হাজং জনগোষ্ঠীর প্রায় এক লক্ষ মানুষ অরুণাচলে রয়েছেন। তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হলে অরুণাচলের জনবিন্যাস বদলে যাবে এবং অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়বে। রাজ্যের মানুষ এতে খুশি হবেন না এবং অশান্তি হতে পারে বলেও মুখ্যমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কেন্দ্রকে মানতেই হবে। তাই আপাতত চাকমাদের নাগরিকত্ব দিলেও সম্পত্তির অধিকার দেওয়া হবে না বলে স্থির হয়েছে।

১৯৬৪ সাল থেকে এ ভাবেই উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে রয়েছেন চাকমা ও হাজংরা। —ফাইল চিত্র।

চাকমারা ধর্মবিশ্বাসে বৌদ্ধ এবং হাজংরা হিন্দু। পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং লাগোয়া মায়ানমারই তাঁদের আদি ভূমি। কিন্তু ধর্মবিশ্বাসের কারণে প্রথমে পূর্ব পাকিস্তানে এবং পরবর্তী কালে বাংলাদেশে চাকমা ও হাজংদের নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। ফলে সীমান্ত পেরিয়ে তাঁরা উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এবং পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় তাঁরা রয়েছেন অরুণাচলেই। অরুণাচলের রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলি বরাবরই বহিরাগত চাকমা-হাজংদের নাগরিকত্ব দেওয়ার তীব্র বিরোধী। তাই বিষয়টি থমকে ছিল। কেন্দ্র ও রাজ্যেও ছিল ভিন্ন দলের সরকার। কিন্তু এখন কেন্দ্রে মোদীর সরকার, রাজ্যও বিজেপির হাতে। তাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বলবৎ করা অনেক সহজ।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রশ্নে ফের সঙ্কটে মোদী সরকার

১৯৬৪ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়তে শুরু করেছিলেন চাকমা-হাজংরা। অসমের তৎকালীন লুসাই হিল জেলা (বর্তমানে যা মিজোরাম রাজ্য) হয়ে ভারতে ঢুকেছিলেন চাকমা-হাজংরা। আশ্রয় নিয়েছিলেন নেফা-য়, যা এখন অরুণাচল। রাজ্য সরকারের মতে, ১৯৬৪ সালে শরণার্থীর সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার। তা এখন বেড়ে এক লক্ষ হয়েছে।

আরও পড়ুন: দাউদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করছে ব্রিটেন

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু নিজে অরুণাচলেরই সাংসদ। তিনি বিষয়টি নিয়ে বেশ চাপে রয়েছেন। ইতিমধ্যেই রিজিজু স্পষ্ট জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী। তাদের ভারতে ঠাঁই দেওয়া যাবে না। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সীমান্ত পেরিয়ে মণিপুর-মিজোরামে ঢুকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা থাকায়, সীমান্তে নজরদারি কড়া করা হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেই অরুণাচলে লাখখানেক চাকমা-হাজংকে নাগরিকত্ব দেওয়া হলে কংগ্রেসের হাত শক্ত হতে পারে এবং বিজেপির বিপদ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE