দেওয়ালির আগের দিন পত্রবোমা ফাটিয়েছিলেন। বড়দিনের এক দিন আগে ফের আসরে ওঁরা!
তবে এ বারে আর বোমা ফাটানো নয়। বরং আগের থেকে অনেক বেশি সতর্ক হয়েই পা ফেলছেন বিজেপির বিক্ষুব্ধ প্রবীণেরা। কীর্তি আজাদকে সাসপেন্ড করা নিয়ে আজ বৈঠকে বসেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী, শান্তা কুমার, যশবন্ত সিন্হারা। এবং আগের বারের মতোই মুরলীমনোহর জোশীর বাড়িতে! কিন্তু আগের বারের মতো আর চিঠি লিখে বোমা ফাটালেন না। বরং কৌশল বদলে দলের মঞ্চে ক্ষোভ উগরে দেওয়ার রণনীতি নিয়ে দলের উপরেই চাপ বজায় রাখলেন। সকালেই কীর্তি সাংবাদিকদের মাধ্যমে আবেদন জানান, যাতে দলের প্রবীণরা এবং প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রবীণদের এই সক্রিয়তা।
বিহার-বিপর্যয়ের পরে যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন ওঁরা। এ বারে তা করেননি। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে এই নেতারা বলেছেন, তাঁদের দাবি মূলত তিনটি। এক, কীর্তি গত ন’বছর ধরেই দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার দুর্নীতি নিয়ে সরব। তিনি এখন নতুন কিছু করেননি, যার জন্য তাঁকে সরাসরি সাসপেন্ড করা হবে। দুই, অরুণ জেটলির বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা আছে কি না, তা তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল যে তদন্ত কমিশন গঠন করেছেন, তার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন আছে ঠিকই। কিন্তু মোদী সরকারের তো সেই কমিশন গঠনের এক্তিয়ার রয়েছে। তিন, বিহার-বিপর্যয় নিয়ে দল এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি। তারও জবাবদিহি প্রয়োজন।
গত ক’দিন ধরে আম আদমি পার্টি ও কংগ্রেসের সুরে সুর মিলিয়ে যে ভাবে বিজেপির সাংসদ হয়েও কীর্তি একা লড়ে গিয়েছেন, তার পিছনে যে দলেরই একটা অংশের মদত আছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি কারওরই। আজ যে ভাবে প্রবীণরদের সক্রিয়তায় নেপথ্যের কুশীলবদের ছবিটা স্পষ্ট হয়ে গেল। আডবাণী কাল থেকেই সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছিলেন। গত কাল জেটলি যখন সাংসদদের নিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারছিলেন, তখন আডবাণী বেনজির ভাবে নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের পাত পেড়ে খাওয়ান!
দলের এই প্রবীণদের বলে বলীয়ান হয়েই আজ সকালে নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতে দাঁড়িয়ে কীর্তি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বরাবর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা বলে এসেছেন। তাঁর উচিত, গোটা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করা। দলের মার্গদর্শক মণ্ডলীরও সক্রিয় হওয়া উচিত।’’ এই মার্গদর্শক মণ্ডলীতেই রয়েছেন আডবাণী, জোশীরা। যার একটিও আনুষ্ঠানিক বৈঠক আজ পর্যন্ত ডাকা হয়নি! কীর্তি জানান, ক্রিকেট দুর্নীতি নিয়ে তিনি ন’বছর ধরে সরব। কেন সেই একই বিষয় তোলার জন্য তাঁকে সাসপেন্ড করা হল, এই প্রশ্ন তুলে কীর্তি দলের কাছে পাল্টা চিঠি দিচ্ছেন, যার খসড়া লিখছেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। সেই স্বামী, যাঁর করা ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ মামলায় সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকে সম্প্রতি আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছিল! তখন কংগ্রেস বলেছিল, মোদী-জেটলির ইশারাতেই এমন করছেন স্বামী। আজ তারা বলেছে, ওটা ছিল বিজেপির রাজনৈতিক কর্মসূচি, আর এটা স্বামীর ‘নিজস্ব স্বার্থ’। কিসের স্বার্থ? কংগ্রেসের বক্তব্য, জেটলিকে সরিয়ে অর্থমন্ত্রী হতে চান সুব্রহ্মণ্যম স্বামী!
বিজেপির তরফে শ্রীকান্ত শর্মা গোটা ঘটনাকে লঘু করে দেখিয়ে বলেন, ‘‘এই প্রবীণদের দৌলতেই দল আজ এত বড় হয়েছে। তাঁদের পরামর্শ সব সময়ই শিরোধার্য।’’ কিন্তু নেতারা বুঝতে পারছেন, জেটলিকে আক্রমণ করলেও প্রবীণদের আসল নিশানা মোদী। সাম্প্রতিক অতীতে সুষমা স্বরাজ, শিবরাজ সিংহ চৌহানদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এঁরা সকলেই আডবাণী-ঘনিষ্ঠ। তখন কিন্তু প্রবীণরা সক্রিয় হননি। জেটলি যে হেতু মোদীর ঘনিষ্ঠতম, তাই তাঁর আড়ালে মোদীকেই নিশানা করছেন প্রবীণরা। যে ভাবে বিহার বিপর্যয়ের পর অমিত শাহকে আক্রমণ করে আসলে মোদীকেই নিশানা করতে চেয়েছিলেন তাঁরা।
এর মধ্যেই জেটলি ব্লগে কংগ্রেস ও আপ-এর বিরুদ্ধে ‘অশালীনতা ও দুর্বৃত্তায়নের’ অভিযোগ এনেছেন। জেটলির মতে, খোদ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে অশালীন ভাষা ব্যবহার করছেন। আর কংগ্রেস সংসদ স্তব্ধ রাখার কৌশল নিয়েছেন। জবাবে কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘এক সময় জেটলিই সংসদ স্তব্ধ রাখতেন। তাঁর জন্যই ইউপিএ আমলে অনেক বিল পাশ হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy