Advertisement
E-Paper

সেই রাতেই হাওয়ালায় ‘ভ্যানিশ’ বহু কোটি

মঙ্গলবার রাত সওয়া ৮টা। জাতির উদ্দেশে নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা তখনও শেষ হয়নি। তবে সেদিনই মাঝরাত থেকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের কথা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। নয়াদিল্লির লাল কেল্লার কাছে চাঁদনি চক এলাকায় এক ধাক্কায় হাওয়ালায় টাকা পাচার কয়েক গুণ বেড়ে গেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১৩

মঙ্গলবার রাত সওয়া ৮টা। জাতির উদ্দেশে নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা তখনও শেষ হয়নি। তবে সেদিনই মাঝরাত থেকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের কথা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। নয়াদিল্লির লাল কেল্লার কাছে চাঁদনি চক এলাকায় এক ধাক্কায় হাওয়ালায় টাকা পাচার কয়েক গুণ বেড়ে গেল।

শুধু চাঁদনি চক নয়, দিল্লির পাশের শহর নয়ডা কিংবা লুধিয়ানা, চণ্ডীগড়, মুম্বই থেকেও সেদিন কালো টাকার কারবারিরা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের জন্য হাওয়ালা অপারেটরদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল বলে জানতে পেরেছে রাজস্ব গোয়েন্দা দফতর। অনেক হাওয়ালা অপারেটর তখনও জেনে উঠতে পারেনি যে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হতে চলেছে। তাই নিজেদের কালো টাকা বাঁচাতে আসা লোকেদের থেকে বুকিং নিয়ে নেয় তারা। গোয়েন্দাদের প্রাথমিক ভাবে অনুমান, প্রধানমন্ত্রীর হিন্দি ও ইংরেজিতে বক্তৃতা শেষ হওয়ার মধ্যেই গোটা দেশ থেকে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা হাওয়ালায় বুকিং হয়ে যায়।

রাজস্ব গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাত থেকেই হাওয়ালা লেনদেনের ঠেকগুলিতে হানা দিতে শুরু করেন আয়কর দফতরের কর্তারা। সেখান থেকে কোটি কোটি টাকা মূল্যের ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট উদ্ধার হয়েছে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, যারা কালো টাকা নগদে জমিয়ে রেখেছিলেন, কিছু ক্ষণ পরে সেই সব নোটের কোনও মূল্য থাকবে না বুঝে তারাই টাকাটা হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে দিতে দৌঁড়ন। যাতে পরে আবার বিদেশি মুদ্রার মাধ্যমে সেই অর্থ হাতে চলে আসে।

নজর যেখানে

হাওয়ালার কারবার

• রোজ লেনদেন ৪-৫ হাজার কোটি টাকা

• মঙ্গলবার রাতেই কয়েকশো গুণ লেনদেন

• এখন হাওয়ালা, সাট্টায় কারবার প্রায় বন্ধ

• কমিশন বেড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ

গয়নার দোকান

• মঙ্গলবার রাতে ও তার পরে নগদে বেচাকেনা

• পুরনো তারিখ বসানো বিল যাচাই

• ক্রেতাদের প্যান কার্ড, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ছবি

রাজস্ব দফতরের গোয়েন্দা কর্তারা বলছেন, ৫০০ ও ১০০০-এর নোট বাতিলের পরেই হাওয়ালা জগতে পরিস্থিতি একেবারে বদলে গিয়েছে। কমিশন পেতে যারা বুকিং নিয়েছে, এখন তাদের মাথায় হাত। কেননা, মোদীর ঘোষণার পরে হাওয়ালায় জমা হওয়া টাকা হয় পুড়িয়ে ফেলতে হবে। নতুবা কৌশলে অর্থ মন্ত্রককে ফাঁকি দিয়ে তা সাদা টাকায় পরিণত করতে হবে। সেটা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। এই ধাক্কাতেই দেশে হাওয়ালার কারবারের সিংহভাগ এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। দেশে রোজ হাওয়ালার মাধ্যমে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হতো। সেই হাওয়ালার কারবারিরা এখন পথে বসেছে। তবে গোয়েন্দারা জেনেছেন, এর পরেও অনেক হাওয়ালা অপারেটর এখনও ঝুঁকি নিয়ে পুরনো নোট নিচ্ছে। কিন্তু কমিশনের হারও বাড়িয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ করে দিয়েছে তারা। আগে খুব বেশি হলে যা ছিল ৫ শতাংশ।

একই ভাবে ধাক্কা খেয়েছে সাট্টার বাজারও। সেখানেও মূলত নগদেই লেনদেন হয়ে থাকে। সাট্টার কারবারিরাও ৫০০ ও ১০০০-এর নোট নিতে রাজি হচ্ছে না। যে সব হাওয়ালা অপারেটর মঙ্গলবার কিছু বোঝার আগেই ৫০০ ও ১০০০-এর নোট নিয়ে ফেলেছিল, তারা এখন সেগুলির কী গতি করবে, বুঝতে পারছে না। কারণ ওই পরিমাণ টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিতে গেলেই ধরা পড়ে যাবে। তাই অনেকেই ওই সব পুরনো নোট পুড়িয়ে ফেলার রাস্তা নিচ্ছে। কেন্দ্রের রাজস্ব সচিব হাসমুখ আঢিয়া বলেন, ‘‘কেউ নোট পুড়িয়ে ফেললে আমাদের ক্ষতি নেই। কেননা, তার বদলে সমান মূল্যের নতুন নোট দিতে হবে না। এতে সরকারেরই লাভ। ৫০০ ও ১০০০-এর সব নোট ব্যাঙ্কে ফিরে আসবে বলে আশাও করছি না।’’

শুধু হাওয়ালা নয়। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, আমদাবাদ, চণ্ডীগড়ের

মতো শহরে অনেকেই টাকার ব্যাগ নিয়ে গয়নার দোকানে গিয়ে হাজির হন বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। দিল্লির কনট প্লেস, করোল বাগ, মুম্বইয়ের ক্রফোর্ড মার্কেট, জাভেরি বাজার, কলাবতী এলাকায় অনেক গয়নার দোকান সেদিন মাঝরাত অবধি খোলা ছিল। ঘন্টা তিনেকের মধ্যে কোটি কোটি টাকার গয়না বিক্রি হয়ে যায়। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ওই গয়নার দোকানগুলিতেও হানা দেওয়া শুরু হয়। আজও দিল্লির বেশ কিছু গয়নার দোকানে হানা দিয়েছেন আয়কর অফিসাররা।

এই সব গয়নার দোকানে হানা দিয়ে আয়কর দফতরের কর্তারা দেখতে পান, বিক্রি গয়নার ক্ষেত্রে অনেকেই আগের তারিখ বসিয়ে বিল তৈরি করেছে। দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বুধবার থেকেও এই গয়নার দোকানগুলিতে ৫০০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিয়ে গয়না বিক্রি হচ্ছিল। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। কালো টাকা সাদা করার বিনিময়ে অনেক গয়নার দোকানের মালিক টাকার মূল্য ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কম ধরছিলেন। অর্থাৎ, কেউ ৬ হাজার টাকার গয়না কিনলে তাঁকে পুরনো নোটে ১০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছিল।

অরুণ জেটলির হুঁশিয়ারি, ‘‘এই অলঙ্কার ব্যবসায়ীদের কেউই পার পাবেন না। তাঁরা ব্যাঙ্কে পুরনো নোট জমা দিলেই হিসেব চাওয়া হবে।’’ প্যান কার্ড, গয়নার দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কালো টাকার মালিকদের পরিচয় জানা হবে। এর পর তাদের বাড়িতে হানা দেওয়া শুরু হবে। আজই প্রায় ৩০০ জন গয়না ব্যবসায়ীর কাছে সরকার জানতে চেয়েছে তাঁদের দোকানে এই মুহূর্তে ঠিক কত সোনা মজুত রয়েছে। বিদেশি মুদ্রা বিনিয়োগকারীদের থেকেও ব্যবসা সংক্রান্ত তথ্য জানতে নোটিস পাঠাচ্ছে ইডি।

Note Vanished Hawala
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy