Advertisement
E-Paper

মুক্তি পেয়েই আজাদির ডাক, মোদীর চিন্তা বাড়িয়ে নতুন তারকার উদয়

সপ্তাহ তিনেক আগে তিনি ছিলেন এক মামুলি ছাত্রনেতা। আর কুড়ি দিন জেলে কাটিয়ে যখন ফিরলেন, তখন তিনি যেন পোড় খাওয়া এক রাজনীতিক, প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধতেও যিনি পিছপা হন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৬ ০৩:২৮
জামিনে মুক্তি পেয়ে তিহাড় জেল থেকে জেএনইউ ক্যাম্পাসে ফিরে পড়ুয়াদের সভায়। বৃহস্পতিবার রাতে প্রেম সিংহের তোলা ছবি।

জামিনে মুক্তি পেয়ে তিহাড় জেল থেকে জেএনইউ ক্যাম্পাসে ফিরে পড়ুয়াদের সভায়। বৃহস্পতিবার রাতে প্রেম সিংহের তোলা ছবি।

সপ্তাহ তিনেক আগে তিনি ছিলেন এক মামুলি ছাত্রনেতা। আর কুড়ি দিন জেলে কাটিয়ে যখন ফিরলেন, তখন তিনি যেন পোড় খাওয়া এক রাজনীতিক, প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধতেও যিনি পিছপা হন না।

অন্তর্বর্তী জামিন পেয়ে আজ সন্ধেবেলা তিহাড় জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন কানহাইয়া কুমার। পাক্কা কুড়ি দিন পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরলেন ছাত্র নেতা। এবং ফিরেই ছাত্র সমাবেশে মাইক হাতে নিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, কেন তাঁকে নিয়ে নরেন্দ্র মোদীকেও চিন্তায় পড়তে হতে পারে।

‘‘দেশ থেকে মুক্তি নয়, দেশের ভেতরে মুক্তি চাই আমরা’’— বললেন কানহাইয়া। স্লোগান তুললেন, ‘‘আজাদি পেটের জ্বালা থেকে, আজাদি দুর্নীতি থেকে, আজাদি মনুবাদ থেকে।’’ কানহাইয়া বলছেন, আর উল্লাসে ফেটে পড়ছে ভিড়। এখানেই থেমে থাকেননি ছাত্রনেতা। সোজাসুজি বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারকে বিঁধে বলেন, ‘‘তোমরা আমাদের যত চাপা দেওয়ার চেষ্টা করবে, আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠব।’’ প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘‘উনি ‘সত্যমেব জয়তে’ বলেন। সে কথা তো সংবিধানেই রয়েছে। আমরা তাই একই কথা বলি। উনি সব সময়ে ‘মন কি বাত’ বলেন, অন্য কারও মনের কথা শোনেন না।’’ হাসি হাসি মুখে আরও চোখা চোখা বিদ্রুপ ভাসিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে— ‘‘উনি লোকসভায় স্তালিনের কথা বলছিলেন, ক্রুশ্চেভের কথা বলছিলেন। সেটা শুনে মনে হল, স্ক্রিন ভেঙে টিভিতে ঢুকে ওঁর স্যুট ধরে জিজ্ঞাসা করি, একটু হিটলারের কথা বললেন না তো?’’

গত কালই ছ’মাসের জন্য অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন কানহাইয়া। আজ বিকেল থেকে তাই ভিড় বাড়ছিল তিহাড়ের সামনে। অন্যতম মূল প্রবেশদ্বার চার নম্বর গেটের সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন ছাত্রছাত্রীরা। সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষও। সকলেই চাইছিলেন এক বার কানহাইয়াকে দেখতে। তিন সপ্তাহে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠা বেগুসরাইয়ের ওই ছাত্রকে দেখতে গাড়ি থামিয়ে অপেক্ষা করেছেন অফিস ফেরত আম দিল্লিবাসীও।

কিন্তু কোথায় কানহাইয়া?

জেল থেকে এক-এক করে গাড়ি বেরোয়, আর ভিড় উল্লাসে ফেটে পড়ে ‘এই এল’ বলে। কিন্তু কোথায় কী! কানহাইয়া কখন বেরোবেন, পুলিশও সংবাদমাধ্যমের মতোই সংশয়ে। তারাও ঠাহর করতে পারছে না, কোন গেট দিয়ে কানহাইয়া বার হবেন।

বেলা চারটে। হঠাৎই উল্লাসে ফেটে পড়ল ছাত্রছাত্রীদের ভিড়টা। খোঁজ নিতেই জানা গেল, কানহাইয়াকে ক্লিনচিট দিয়েছে দিল্লি প্রশাসন। বিভিন্ন শিবির থেকে কানহাইয়াকে গ্রেফতারির প্রতিবাদ ওঠায় আলাদা ভাবে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল অরবিন্দ কেজরীবালের সরকার। আজ সেই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।

বিকেল পাঁচটা। তিহাড় জেলের সব ক’টি প্রবেশ পথে হঠাৎ পুলিশ পাহারা বাড়িয়ে দেওয়া হল। বোঝা গেল, কোন গেট দিয়ে কানহাইয়াকে বার করা হবে তা বুঝতে না দেওয়ার জন্য এই কৌশল নিয়েছে দিল্লি পুলিশ। জেল থেকে বেরোলে কানহাইয়ার উপর ফের হামলার আশঙ্কা রয়েছে, এই মর্মে আজ সমস্ত থানাকে সতর্ক করে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। সেই জন্যই জেলের সামনে বাড়তি সতর্কতা।

এরও প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টা পরে, পৌনে সাতটা নাগাদ তিহাড়ের সামনে উপস্থিত সংবাদমাধ্যমকে পুলিশ জানিয়ে দিল, জেল থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন কানহাইয়া।

পরে জেল সূত্রে জানা যায়, বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জেলে পৌঁছন কানহাইয়ার আইনজীবী। শুরু হয় জামিন সংক্রান্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখার পালা। জানা যায়, জেলকর্মীদের পরিবারেরা যে গেট ব্যবহার করে, সেখান দিয়ে বার করা হয় কানহাইয়াকে। তার পর তিনটি গাড়ি এসকর্ট করে তাঁকে পৌঁছে দেয় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১২ ফেব্রুয়ারি এই ক্যাম্পাসেই সাদা পোশাকের পুলিশ ঢুকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল ছাত্রসংগঠনের প্রেসিডেন্ট, বাম সংগঠন এআইএসএফের নেতা কানহাইয়াকে। তার পাঁচ দিন পরে, পাতিয়ালা হাউজ কোর্টের মধ্যে বিজেপি সমর্থক আইনজীবীদের হাতে বেদম মার খান তিনি। সে দিন মার খাওয়ার পরে কানহাইয়ার ভয়ার্ত মুখ আজ যেন ম্যাজিকে উধাও!

‘এই দেশ থেকে না, এই দেশেই আজাদি চাই’, দেখুন কানহাইয়ার বক্তব্যের ভিডিও

এক দিকে জেল থেকে মুক্তির স্বস্তি, অন্য দিকে আজ দিল্লি সরকারও জেএনইউ কাণ্ডে ক্লিনচিট দিয়েছে কানহাইয়াকে। তদন্তের দায়িত্বে থাকা জেলাশাসক সঞ্জয় কুমার তাঁর রিপোর্টে জানিয়েছেন, ‘‘কানহাইয়ার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ মেলেনি। কোনও সাক্ষী বা ভিডিও পাওয়া যায়নি, যার ভিত্তিতে কানহাইয়াকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়।’’ রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছে, সে দিনের ঘটনার যে সাতটি ভিডিও জেলাশাসকের হাতে জমা পড়েছিল, দেখা গিয়েছে তার তিনটি জাল।

জেলাশাসকের ওই রিপোর্টে কানহাইয়াকে রেহাই দেওয়া হলেও, আর এক ছাত্র উমর খালিদের ভূমিকা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ রিপোর্ট বলছে, বেশ কিছু ভিডিওতে খালিদকে আফজল গুরুর সমর্থনে স্লোগান দিতে দেখা গিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, অনির্বাণ ও আশুতোষও সম্ভবত আফজলের সমর্থনে স্লোগান দিচ্ছিলেন। ফলে তাঁদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

কানহাইয়ার গ্রেফতারিতে যখন জেএনইউ থেকে যাদবপুর সরগরম, মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি দাওয়াই দিয়েছিলেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জাতীয় পতাকা বসানো হোক। আজ কানহাইয়া যখন ছাত্র সমাবেশ মাতাচ্ছেন, মাথার উপর পত পত করে উড়ছিল তেরঙ্গা।

kahaniya kumar JNU Modi government MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy