Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
National News

প্রায় তিন দশক ধরে পুড়ে চলেছেন ‘রাবণ-চাচা’

বন্ধ ঘরে নিজেই বন্দি। বাইরে তখন নিজেই পুড়ছেন। বুঝতে পারছেন, শেষ হয়ে যাচ্ছেন তিল তিল করে। দেখতে চান না। শুনতে চান না। তবুও তাঁর দহনের শব্দ ভেদ করে আসছে ঘরের ভিতর।

রামলীলায় একাই একশো রাবন।—নিজস্ব চিত্র।

রামলীলায় একাই একশো রাবন।—নিজস্ব চিত্র।

অপরাজিতা মৈত্র
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৬ ১০:৪২
Share: Save:

বন্ধ ঘরে নিজেই বন্দি। বাইরে তখন নিজেই পুড়ছেন।

বুঝতে পারছেন, শেষ হয়ে যাচ্ছেন তিল তিল করে। দেখতে চান না। শুনতে চান না। তবুও তাঁর দহনের শব্দ ভেদ করে আসছে ঘরের ভিতর।

শুধু কি ন’দিন? তার আগে না জানি কত বছরের তপস্যা! তবে গিয়ে এই রাবণ প্রেম। ছোট্টবেলায় বাবার হাত ধরে রামলীলায় অভিনয় দেখতে আসতেন। তখন থেকেই রাবণের সঙ্গে এক অদ্ভূত আত্মীয়তা। তখন সবে ১২ বছর বয়স। হুট করে একবার মঞ্চে উঠেও পড়েন রোহতক কুমার। ২০ বছর বয়স থেকে দিল্লির ছত্তরপুরের রামলীলায় নিয়মিত রাবণের পাঠ করে আসছেন। তারপর কেটে গিয়েছে টানা ২৭ বছর। তাঁর আসল নামটিও বোধহয় আজ কেউ মনে রাখেননি। সকলেই তাঁকে রাবণ-চাচা বলে জানেই। নিজের বাড়ির নামটিও সাধ করে রেখেছিলেন ‘রাবণ হাউস’। যে নাম তাঁকে এত পরিচিতি দিয়েছে, তাঁকেই আগলে কেটে গিয়েছে প্রায় তিন দশক।

কিন্তু ফি-বছর আজকের দিনটি যেন সবথেকে বিষাদের। রামলীলায় টানা ন-দিন অভিনয় করেন রাবণের। মহালয় থেকে নবমী। রামের জন্ম থেকে রাজ্যাভিষেক। ফি-বছরই নবরাত্রির এই ন-টি দিন প্রাণভরে চুটিয়ে পালা করেন। বিলক্ষণ জানেন, রামই আসল হিরো। আর তিনি ভিলেন। কিন্তু এত বছরে এই ভিলেনের সঙ্গেই যেন এক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। নিজেই বললেন, “জানেন, এই সম্পর্কটা আর কেউ বুঝবে না। বাইরে থেকে কেউ টের পাবে না। আজ দশমীর দিন যখন আতসবাজির রোশনাইয়ে দশানন জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যায়, মনে হয় আমি নিজে পুড়ছি। এত বছরের সম্পর্ক তো! তবু আশায় থাকি, পরের বার আবার রাবণ আসবে। সেই তেজ, সেই অট্টহাসি নিয়ে। কেউ ভয় পাবেন, কেউ বা দুর্নাম করবেন, কেউ বা অভিনয়ের তারিফ।”

রাবন-চাচা রোহতক।—নিজস্ব চিত্র

নবরাত্রির গোড়ার দিন থেকে রোজ ঘড়ি ধরে রাত আটটায় শুরু হয় রামলীলা। শেষ হতে হতে মধ্যরাত। “...দেব, দানব, দন্ত, দনুজ দাতা ক্যহতে হ্যায় মুঝে/ যম, বরুণ, অগ্নি, পবন সর্দার ক্যাহতে হ্যায় মুঝে...” পাঠগুলি আর গ্রিনরুমে বসে শেষ মুহূর্তে ঝালিয়ে নিতে হয় না। এত বছরের অভ্যাস। একেবারে কন্ঠস্থ। এ পাড়াতেই একটি ছোট্ট স্টুডিও আছে নিজের। সারা বছরের পেট চালানোর পেশা সেটাই। আর নেশা শুধুই রাবণ। তাই ঠিক করেছেন, এ বারে আরও অভিনেতা তৈরি করবেন। এ বারে আর নিজে অভিনয় করবেন না। তৈরি করবেন নতুন প্রজন্মকে।

আজ যিনি রামের ভূমিকায় অভিয়ন করে সকলের চোখের ‘হিরো’, সেই নরেন্দ্র সিংহকেও নিজের হাতে তৈরি করেছেন তিনি। আগে সীতার সখির পাঠ করতেন ‘রাম’। হাসতে হাসতে সেই রাম-রূপী নরেন্দ্র সিংহ বললেন, “বলতে পারেন, রাবণই আমাদের হিরো। রামের পাঠ করার সুযোগ তিনিই আমাদের করে দেন। তারপর মঞ্চে উঠে বছরের পর বছর ওঁর সঙ্গেই রাম-রাবণের যুদ্ধ করেছি।”

নতুন রাবণের সন্ধানও শুরু করে দিয়েছেন রোহতক। অমিত সিংহ নামে একজনকে পেয়েও গিয়েছেন। তাঁর হাতেখড়ির পাঠ চলছে। রোহতক বললেন, “আসলে কী জানেন, রামায়ণের অনেক চরিত্রের মধ্যে বেশির ভাগই রাম বা লক্ষ্ণণের পাঠটি করতে চান। রাবণের চরিত্রটি সচরাচর করতে চান না। তার জন্য রাবণকে আরও ভাল করে বুঝতে হয়। ভালবাসতে হয়। তাঁর বীরত্বের কাহিনি জানতে হয়। এখনও অনেক জায়গায় রাবণের পুজো হয়।”

রাবণ-চাচা আসলে বুড়ো হচ্ছেন। তাই নতুন রাবণের হাতে দায়িত্ব সঁপে তিনি ছুটি নিতে চান। তবে হ্যাঁ, পাঠ ছাড়লেও নেশা ছাড়বেন না। প্রতি-বছর নিয়ম করে দেখবেন রামলীলা। ঝালিয়ে দেবেন পাঠগুলি। শিখিয়ে দেবেন রাবণের আদব-কায়দা। কিন্তু দোহাই, দশমীর দিন রাবণ দহন দেখতে পারবেন না। ওইদিন তিনি ঘরেই বন্দি থাকবেন।

আরও পড়ুন: প্রতিমার পাটের সাজ, রাজধানীতে গঙ্গাপারের বৃত্তান্ত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi Ramleela Ravana
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE