মারমুখী সনিয়া গাঁধীকে কাবু করতে এ বার সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করল বিজেপি।
ইউপিএ জমানায় ভিভিআইপি হেলিকপ্টার দুর্নীতিতে বিজেপি তাঁর নাম নিতেই গত কাল থেকে পাল্টা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন সনিয়া। কংগ্রেস সভানেত্রী স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, কাউকে ভয় পান না তিনি। বিজেপি তাঁর চরিত্র হননের কৌশল নিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কপ্টার-দুর্নীতির তির শুধু মাত্র সনিয়ার দিকে রেখেই ঘুঁটি সাজাচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এক দিকে সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর মতো গাঁধী-বিরোধী নেতাকে দিয়ে সনিয়াকে লাগাতার আক্রমণের কৌশল নেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে আজ আসরে নেমেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টেও সনিয়ার বিরুদ্ধে একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে শুনানি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পর্রীকর এর মধ্যেই জানান, ইতালির আদালতের রায়ের কপি তাঁদের হাতে এসেছে। এখন তা হিন্দি ও ইংরেজিতে অনুবাদ করা হচ্ছে।
রাজ্যসভায় সুব্রহ্মণ্যম স্বামী আজ ফের এ নিয়ে বলতে শুরু করতেই গোটা কংগ্রেস শিবির হল্লা করে তাঁকে থামিয়ে দেয়। স্বামী পরে বলেন, ‘‘সনিয়া গাঁধী ঘুষের টাকা পেয়েছেন। সেটি জেনিভার সারাসিন ব্যাঙ্ক ও কিছু অর্থ পিকটেট ব্যাঙ্কে রাখা হয়েছে। এই ব্যাঙ্কের থেকে তথ্য নিলেই এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি) যাবতীয় হদিস পাবে।’’ আক্রমণ করতে ছাড়ছেন না দলীয় সভাপতি অমিত শাহও। আজ তিনি বলেন, ‘‘ঘুষ দেওয়ার কথা ইতালির আদালতে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। ঘুষ কে নিয়েছেন, তার জবাব দিন সনিয়া গাঁধী। উনি বলছেন, কাউকেই ভয় পান না। কিন্তু আমরা সংবিধান ও লোক-লাজে ভয় পাই। সনিয়া গাঁধী কাউকে ভয় পান না বলেই একের পর এক দুর্নীতি হয়েছে।’’
এরই মধ্যে আবার সুপ্রিম কোর্টে করা জনস্বার্থ মামলায় সনিয়া গাঁধী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও সনিয়ার রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থার দাবি করা হয়েছে। পটেল অবশ্য আজ দাবি করেছেন, অগুস্তা কপ্টারের সঙ্গে জড়িত কোনও ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর কোনও দিনই বৈঠক হয়নি। তাঁদের তিনি চেনেনই না। যে ‘এপি’ নিয়ে এত কথা হচ্ছে, তা তিনি নন। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার অবশ্য বক্তব্য, ইউপিএ জমানাতেই এই কপ্টার সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। সিবিআই এবং ইডির তদন্তও শুরু করা হয়েছিল।
কিন্তু শর্মার বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন অরুণ জেটলি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, আনন্দ শর্মা সত্যি বলছেন না। জেটলির ব্যাখ্যা, ‘‘অগুস্তাওয়েস্টল্যান্ডকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে এনডিএ সরকার আসার পর। আর সিবিআই তদন্তের নির্দেশও ইউপিএ সরকার দিয়েছে একেবারে শেষ বেলায়। তাদের সরকার চলে যাওয়ার সময়। কারণ, তারা বুঝে গিয়েছিল, এনডিএ এ বার ক্ষমতায় আসছে। ফলে কংগ্রেসের বক্তব্য ঠিক নয়।’’ কংগ্রেসের পাল্টা অভিযোগ, ইউপিএ সরকার কালো তালিকা ভুক্ত করার পরেও এই সংস্থাকে মোদী সরকার মেক-ইন-ইন্ডিয়াতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বিজেপি সরকার অবশ্য বলছে, নতুন কোনও বরাত তাদের দেওয়া হয়নি। পুরনো কাজগুলিই শুধু মাত্র বহাল রয়েছে।
বিজেপি নেতাদের একাংশের মতে, গত দু’বছর সংসদে গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি পাশ করানোর জন্য একাধিক বার কংগ্রেস সভানেত্রীর দ্বারস্থ হয়েছে সরকার পক্ষ। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সনিয়া-মনমোহনকে রেসকোর্সে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু পণ্য ও পরিষেবা কর-সহ সংস্কারের বিলগুলিতে সম্মতি দেয়নি গাঁধী পরিবার। জমি বিলও আটকে দিয়েছেন তাঁরা। সংসদের চলতি অধিবেশনেও পণ্য ও পরিষেবা বিল পাশের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই পরিস্থিতিতে সরাসরি টক্কর নেওয়ার কৌশলই বাঞ্ছনীয় বলে ভাবছে বিজেপি। আর একবার সনিয়া গাঁধীকে চাপে রাখতে পারলে উত্তরাখণ্ড নিয়েও বেশি ফোঁস করতে পারবে না কংগ্রেস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy