লোকসভা নির্বাচনের আগে পাকিস্তান প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যতই ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব নিন, তলে তলে দুই দেশই বোঝাপড়ার চেষ্টা করছে। দ্বিপাক্ষিক বরফ গলানোর লক্ষ্যে দু’দেশের নেতৃত্বই কূটনৈতিক ও অন্যান্য স্তরে আলোচনা শুরু করেছেন। তবে আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে বেশি দূর এগোনো যে সম্ভব নয়, তা বুঝিয়ে দিয়েছে ভারত।
প্রবীণ হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করেন কেন্দ্রের এক প্রতিনিধি। সেই আলোচনার ভিত্তিতে এক কাশ্মীরি প্রতিনিধিকে পাঠানো হয় ইসলামাবাদে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খকন আব্বাসির সঙ্গে গোপন বৈঠক করার জন্য। সেই বৈঠকে পাক সেনাবাহিনীর ‘চেয়ারম্যান অব জয়েন্ট স্টাফ’ ও প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি হাজির ছিলেন।। এই বৈঠকের আগেই ইসলামাবাদের কাশ্মীর হাউসে ওই ভারতীয় প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী রাজা ফারুক হায়দর। তিনিই পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন।
পাকিস্তানের তরফে জানানো হয়েছে, এক— যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদেশ সচিব পর্যায়ে আলোচনা শুরু করতে চায় ইসলামাবাদ। দুই— এই গ্রীষ্মে সীমান্তে অনুপ্রবেশ বন্ধ থাকবে। কোনও ভাবেই এই মে-জুন মাসে অনুপ্রবেশ বাড়াবে না পাকিস্তান। সে কারণে এখনও পর্যন্ত সীমান্তে সন্ত্রাস কম। এ সব প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি বৈঠকে উপস্থিত পাক সেনা প্রতিনিধি অভিযোগ করেছেন, ভারতীয় সেনার চপার ব্যবহার করে আইএস পাকিস্তানে সন্ত্রাস চালাচ্ছে।
এই বৈঠকের পরে এ বার ব্যাঙ্ককে দু’দেশের মধ্যে ট্র্যাক-টু কূটনীতি শুরু হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে ইসলামাবাদের জিন্না ইনস্টিটিউট ও ভারতের একটি সংস্থা দু’দেশের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা শুরু করছে। দিল্লিও এই কূটনৈতিক প্রয়াসকে সমর্থন করেছে।
পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হবে জুলাইয়ে। তার আগে ভারতের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই বলে বার্তা দিয়েছে ইসলামাবাদ। তাদের যুক্তি, পাকিস্তানের ভোটে যা-ই হোক, তা আসলে নিয়ন্ত্রণ করে সেনাবাহিনী। দেশে ভোট হলে পাকিস্তান বিরোধিতা ভারতের কাছে যতটা প্রয়োজনীয়, পাকিস্তানের কাছে ততটা নয়।
ভারতীয় প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে পাক-প্রধানমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, পাক সেনা কাশ্মীর নিয়ে এমন কিছু করতে চাইছে না, যাতে তাদের মুখ পোড়ে। ভারতের তরফে অবশ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ২০১৯-এ লোকসভা ভোটের আগে শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে বেশি দূর এগোনো সম্ভব নয়। পাক-বিরোধী বিবৃতি এবং হুঙ্কারের রাজনীতি চলবে। কিন্তু বাস্তবে দু’পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া রেখেই বরফ গলানোর কাজ চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy