Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বরাকে হেনস্থা বাঙালিদের, নালিশ রাষ্ট্রপতিকে

অসমে বাঙালিদের নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে নালিশ জানাল বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০৮
Share: Save:

অসমে বাঙালিদের নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে নালিশ জানাল বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে সম্মেলনের কর্মকর্তারা জানান— শুধু বঙ্গভাষী বলে তাঁদের দফায় দফায় নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হচ্ছে। যখন তখন যাঁকে-তাঁকে বিদেশি সন্দেহে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সন্দেহভাজন তকমা লাগিয়ে মামলায় জড়ানো হচ্ছে। দিনের পর দিন ট্রাইব্যুনালে ঘুরতে হয় তাঁদের। অনেকের হাতে আদালতের নোটিস পৌঁছে না। কিন্তু একতরফা রায়ে বিদেশি বলে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এনআরসি, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের কথা উল্লেখ করে বরাক বঙ্গের প্রতিনিধিরা জানান, প্রতিটি ক্ষেত্রে বাঙালিদের হয়রান করাই মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে উঠছে। এনআরসি প্রসঙ্গে তাঁরা প্রণববাবুকে জানিয়েছেন, প্রথমে সবাইকে ১৯৭১ সালের আগের নথিপত্র জমা দিতে বলা হল। পরে এল ‘অরিজিনাল ইনহেবিটেন্ট’-এর (ওআই) কথা। বৈধ ও গ্রাহ্য যুক্তি ছাড়াই একাংশকে ওআই চিহ্নিত করে তাঁদের কোনও কাগজপত্র দেখানোর প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হল। বাঙালিদেরই নথিপত্রের নামে হেনস্তা করা হচ্ছে। এটা আত্মমর্যাদায় প্রচণ্ড আঘাত বলেই তাঁরা রাষ্ট্রপতিকে জানান। তাঁদের অভিযোগ, গোটা বিষয়টি প্রণালীবদ্ধ ভাবে জাতিগত বিদ্বেষ থেকে করা হচ্ছে।

বরাক উপত্যকার জনবিন্যাস ও ইতিহাস টেনে প্রতিনিধিদলটি জানান, নবম শতাব্দী থেকে বাঙালিরা এই উপত্যকায় বসবাস করছেন। এই ইতিহাসকে অস্বীকার করে বাঙালিদের পিঠে বাংলাদেশি তকমা সেঁটে দেওয়া হচ্ছে।

সেই সঙ্গে বাঙালিপ্রধান বরাক উপত্যকা যে স্বাধীনতার সাত দশক পরও পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে, তাও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়। রাষ্ট্রপতিকে জানানো হয়— ইস্ট-ওয়েস্ট করিডর, বিমানের নৈশ-অবতরণের মতো বহু বিষয় অনেক দিন থেকে ঝুলে রয়েছে।

বরাক বঙ্গের পক্ষে ওই প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতীশ ভট্টাচার্য, কাছাড় জেলা সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী, সঞ্জীব দেবলস্কর ও জয়দীপ বিশ্বাস। শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেবও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা রাষ্ট্রপতির হাতে একটি স্মারকপত্রও তুলে দেন।

তাতে তাঁরা উল্লেখ করেন, বর্তমানে হিন্দু উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলে সংসদে যে বিল পেশ করা হয়েছে, তার উদ্দেশ্যও স্পষ্ট নয়। এটি সমস্যা সমাধানে কতটা সহায়ক হবে, এ নিয়ে তাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করেন। বরং বিলটিতে সাংবিধানিক বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে বরাক বঙ্গ। রাষ্ট্রপতিকে তাঁরা জানান, যৌথ সংসদীয় দলের শুনানিতে তাঁরা যে এই জায়গাগুলি ধরিয়ে দিয়েছেন। প্রস্তাব দিয়েছেন, ধর্মীয় পরিচিতিতে নয়, উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হোক ‘দেশভাগের বলি’ শব্দবন্ধ প্রয়োগ করে।

এই অবস্থানের জন্য অবশ্য বরাক বঙ্গের সমালোচনায় সরব হয়েছে বৃহত্তর আসাম বাঙালি উন্নয়ন সমিতি। সংগঠনের জেলা সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি গুপ্ত বলেন, ‘‘১৯৪৭ সালে দেশভাগ ধর্মেরই ভিত্তিতে হয়েছে। ফলে হিন্দু, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি-দের কথা স্পষ্ট উল্লেখে দোষ কোথায়।’’! একই ধরনের বক্তব্যের জন্য তাঁরা নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ চৌধুরীরও সমালোচনা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

barak valley president
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE