শুধু নরেন্দ্র মোদী নন, পটনার মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশানায় এ বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও। নাম না করে নীতীশকে ‘গদ্দার’ আখ্যা দিলেন তৃণমূলনেত্রী। আর নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিগ বাজারের বিগ বস এখন আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন।’’
পাড়ার মুদি দোকানে খুচরোর আকাল হলেও বিগ বাজারে খুচরোর কোনও সঙ্কট সরকার হতে দেয়নি বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বিগ বাজারকে যে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে, সেই প্রসঙ্গ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্কের সুবাদেই এই সব সুবিধা মিলছে। তৃণমূলনেত্রীর শানিত শ্লেষ, ‘‘বিগ বাজার কা বিগ বস হমারে দেশ কা প্রধানমন্ত্রী হো গয়া হ্যায়।’’
পেটিএম মোবাইল অ্যাপ নিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে এ দিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আক্রমণ করেছেন। ৫০০ টাকা আর ১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ার পর থেকে পেটিএম অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন বেড়ে গিয়েছে। মমতা সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘পেটিএমকে এখন সবাই পে-পিএম বলছে। বাচ্চারাও জানে পেটিএমের অন্য নাম হয়ে গিয়েছে পে-পিএম।’’ ‘পে-পিএম’-এর বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘প্রধানমন্ত্রীকে দিন’। মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কথার কারসাজির মধ্যে ঠিক কী খোঁচা লুকিয়ে ছিল, তা বুঝতে গর্দনি বাগে উপস্থিত জনতার অসুবিধা হয়নি। পেটিএম সংস্থাকে ইচ্ছাকৃত সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এ দিন তৃণমূলনেত্রী অভিযোগ করেছেন। যে দেশের সিংহ ভাগ এলাকাতেই ইন্টারনেটের সুবিধা অমিল, সেই দেশে মানুষকে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন চালাতে সরকার কী ভাবে বাধ্য করছে? প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রতিবেশী রাজ্যের রাজধানীতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সভা ঠিক কী আকার নিতে চলেছে, তা নিয়ে কিন্তু জোর জল্পনা তৈরি হয়েছিল মঙ্গলবার রাত থেকে। তৃণমূলনেত্রী মঙ্গলবার লখনউতে সভা করেছিলেন। সে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল সমাজবাদী পার্টির পূর্ণ সমর্থন ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি। ফলে লখনউয়ের জনসভায় সমাগমও ছিল উল্লেখযোগ্য। বিহারে কিন্তু পরিস্থিতি ততটা অনুকূল ছিল না। নীতীশ-লালু-কংগ্রেসের জোট সরকার চলছে বিহারে। বিজেপিকে রোখার তাগিদেই নির্বাচনের আগে এই জোট গড়া হয়েছিল। কিন্তু নোট বাতিলের পর থেকে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের গলায় হঠাৎ মোদীর গুণকীর্তন শোনা যাচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই নীতীশের দল জেডিইউ পটনায় মমতার সভা নিয়ে কোনও উৎসাহ দেখায়নি।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে না দাঁড়ালেও, বিহার সরকারের বৃহত্তম শরিক লালু প্রসাদের দল আরজেডি তৃণমূলের সঙ্গে থাকছে বলে প্রথমে শোনা গিয়েছিল। তার পর মঙ্গলবার রাত থেকে হঠাৎ জল্পনা শুরু হয়, লালুপ্রসাদও নাকি মমতাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত নন। কিন্তু বুধবার সকাল হতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, সে জল্পনা ঠিক নয়। কারণ সকাল থেকেই আরজেডি কর্মী-সমর্থকেরা ভিড় জমাতে শুরু করেন পটনার গর্দনি বাগের সভামঞ্চের সামনে। সভাস্থলে পৌঁছন জন অধিকার পার্টির কর্মী-সমর্থকরাও।
আরও পড়ুন: ভোটবন্দি করুন মোদীকে, ডাক দিলেন মমতা
লালুপ্রসাদ যাদব নিজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় এ দিন যোগ দেননি ঠিকই, কিন্তু আরজেডি সহ সভাপতি রঘুবংশপ্রসাদ সিংহ এবং দলের রাজ্য সভাপতি রামচন্দ্র কুরবেকে বিহারের যাদব কুলপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের পাশে নিয়ে তৃণমূলনেত্রী এ দিন তীব্র আক্রমণ শানান বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধেও। নীতীশ কুমারের নাম মমতা উচ্চারণ করেননি। কিন্তু বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিয়েছেন বলেই যে তিনি মনে করছেন, স্পষ্ট ইঙ্গিতে তা বুঝিয়ে দেন। চাইলে তিনি নিজেও কেন্দ্রের সঙ্গে হাত মেলাতে পারতেন, কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বার্থে সে পথ তিনি নেননি, জানান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপিকে রুখতে আরজেডি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচন লড়ার পর নীতীশ কুমার যে ভাবে ফের বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন, তাকে ‘গদ্দারি’ অর্থাৎ বিশ্বাসঘতকতা আখ্যা দিয়েছেন মমতা। নীতীশের প্রতি মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘যাঁরা গদ্দারি করছেন, মানুষ কিন্তু তাঁদের ছাড়বে না।’’
লখনউয়ের মতো পটনার সভা আয়োজনের দায়িত্বও ছিল তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ তথা সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়ের উপর। এ দিনের সভা শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত তা নিয়ে জল্পনা যতই থাক, শেষ পর্যন্ত লখনউয়ের সভার মতো এ দিনের সভাও কিন্তু মোটের উপর সফলই। আরজেডি নেতৃত্ব মমতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ দিন স্পষ্টই জানিয়েছে, কেন্দ্রের ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে আন্দোলন শুরু করেছেন, তাতে তাঁদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।