Advertisement
E-Paper

থিমের ভেলাঘরে রঙ বদল বিহুর

বাড়ির তৈরি পিঠেপুলির যুগ ক্রমেই শেষ হয়ে আসছিল। ‘রেডিমেড’ নাড়ু-পিঠে-পাটিসাপটার দাপটে পরিবারের সকলে হাত মিলিয়ে পিঠে তৈরির মোচ্ছব ক্রমেই কোণঠাসা।এ বছর অসম বিহুর আরও এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গের ‘রেডিমেড’ সংস্করণ দেখল।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৮
রেডিমেড ভেলাঘর। অসমের বিহু উৎসবে। ছবি সৌজন্যে বুলানচন্দ্র নাথ।

রেডিমেড ভেলাঘর। অসমের বিহু উৎসবে। ছবি সৌজন্যে বুলানচন্দ্র নাথ।

বাড়ির তৈরি পিঠেপুলির যুগ ক্রমেই শেষ হয়ে আসছিল। ‘রেডিমেড’ নাড়ু-পিঠে-পাটিসাপটার দাপটে পরিবারের সকলে হাত মিলিয়ে পিঠে তৈরির মোচ্ছব ক্রমেই কোণঠাসা।

এ বছর অসম বিহুর আরও এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গের ‘রেডিমেড’ সংস্করণ দেখল। কলকাতায় যেমন সরস্বতী পুজোয় বিক্রি হয় বেতের তৈরি মণ্ডপ, তেমনই এ বার ভোগালি বিহুতে গুয়াহাটির বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হল ‘রেডিমেড’ মেজি। ভেলাঘরের থিমের চমকও দিন দিন বাড়ছে। বাংলার দুর্গাপুজোয় শারদ সম্মানের জেরে যেমন থিমপুজোয় বিপ্লব এসেছে, তেমন অসমেও শুরু হয়েছে থিমের ভেলাঘরকে পুরস্কৃত করার প্রচলন। আইফেল টাওয়ার থেকে শুরু করে ফরাসি যুদ্ধবিমান নেমে এসেছে গ্রামগঞ্জের মাঠে।

মাঘ বিহুর আগের দিন উড়ুকা। ফসল কাটা খেতে সকলে মিলে খড়ের তৈরি মেজি আর ভেলাঘর উড়ুকার রাতে পুড়িয়ে বিহুতে পা পড়ে অসমের। উড়ুকার সকাল থেকে গুয়াহাটি-সহ রাজ্যের বিভিন্ন মাছ বাজারে চলেছে সেরা মাছ কেনার অঘোষিত লড়াই। ১০ কিলোগ্রাম ভেটকি, ১৫ কিলোগ্রাম বোয়ালকে হারিয়ে এ বারের সেরা মাছের শিরোপা গিয়েছে ১৮ কিলোগ্রাম ওজনের চিতলের মাথায়। শুক্রবার উড়ুকা, শনিবার ভোগালি বিহু, পরে রবিবারের ছুটি। সব মিলিয়ে সোনায় সোহাগা। তাই অনেকে বেরিয়ে পড়েছেন বাইরে ছুটি কাটাতে।

মাঘ বিহুর সেরা মজা ভেলাঘর তৈরি করা। উড়ুকার রাতে মেজি-ভেলাঘর পুড়িয়ে আনন্দে মাতা। কিন্তু ব্যস্ত নগরজীবনে মেজি গড়ার সময় কোথায়? তাই নিয়মরক্ষায় এখন তৈরি মেজি নগদে কিনে উঠোনে বসিয়ে দিলেই হল। গুয়াহাটির বিভিন্ন জায়গায় এমন তৈরি মেজি চোখে পড়ল। দাম প্রায় হাজার টাকা। অবশ্য, এমন মেজি দেখে গেল-গেল রব উঠেছে। যেমন ভেলাঘরে থিমের বাড়াবাড়ি নিয়েও চিন্তিত রক্ষণশীলরা। কিন্তু তা বলে থেমে থাকে না সৃষ্টিশীলতা। কোথাও সরাই, কোথাও লন্ডন ব্রিজ, কোথাও দুর্গ, কোথাও রংঘর, কোথাও আবার গন্ডার বাঁচানোর সামাজিক বার্তাবাহী ভেলাঘর নজর কাড়ছে। ভেলাঘর দেখতে অন্য এলাকার মানুষ ভিড় জমিয়েছেন ভিন এলাকায়। চ্যানেলে-চ্যানেলে যত দেখানো হয়েছে ভেলাঘরের থিম, প্রচার হয়েছে পুরস্কারপ্রাপ্ত ভেলাঘরের নাম, ততই বেড়েছে ভিড়। সব চেয়ে বেশি নজর কেড়েছে হাওড়াঘাটে সার্জিকাল স্ট্রাইকের আদলে তৈরি ভেলাঘর। তার পরেই রয়েছে যোরহাটের টাইটানিক, চিরাংয়ের আইফেল টাওয়ার, ঢেকিয়াজুলি পাচনৈতে মোষের লড়াইয়ের আদলে তৈরি ভেলাঘর, গোয়ালপাড়ার হেলিকপ্টার, ডিমৌয়ের পদুমণিতে লিফট, রহায় গন্ডার সংরক্ষণের বার্তাবাহী ভেলাঘর, ধেমাজির রঙঘর, বোকাখাতের নৌকো, তেজপুর দুখলপিয়ার জাহাজ।

এমনকী কলকাতায় যেমন পুরস্কৃত থিমের মণ্ডপ দশমীর পরেও লোক টানে, অসমেও এ বার নজরকাড়া বিভিন্ন ভেলাঘর নিয়ম মেনে উড়ুকার রাতে পোড়ানো হল না। রবিবারও রাফালে, টাইটানিক, হেলিকপ্টার দেখতে মানুষ আসছেন! আবার কামাখ্যা বা রংঘরের আদলে ভেলাঘর গড়েছেন যাঁরা, জনতার দাবি মেনে সেই সব ভেলাঘরে আগুন লাগানো যায়নি। হলই বা প্রতীকী। তা বলে শক্তিপীঠ বা আহোম ঐতিহ্যে আগুন লাগানো চলে না।

এ দিকে আদালতের নির্দেশে হাজোর বুলবুলির লড়াই আর মরিগাঁওয়ের মোষের লড়াই বন্ধ। তাই উৎসবেও মুখ বেজার দুই এলাকার মানুষের। বুলবুলির লড়াই হবে না জেনেও এলাকার অনেক বাড়িতে বুলবুলি পোষা হয়েছিল। কিন্তু হয়গ্রীব মন্দির সমিতি আর বিতর্ক বাড়াতে চায়নি। যদিও সমিতির প্রধান শিবপ্রসাদ শর্মার মতে, বুলবুলি পাখির খেলাকে, খামোকা ‘যুদ্ধ’ বলে প্রচার করে অহেতুক আইনের প্যাঁচে ফেলা হয়েছে। থমকে দেওয়া হয়েছে এক ঐতিহ্যকে। মোষের লড়াই না হওয়ায় মরিগাঁও, নগাঁও, শিবসাগরও মনমরা। অবশ্য আদালতের নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে আহতগুড়ি, বড়হমপুর, বকতা পথার, লাহরিঘাটে সকাল থেকেই মোষের লড়াইয়ের আসর বসে। দেখেও চোখ বুজে থাকে প্রশাসন।

শিবসাগরের ডিমৌতে নকল রংঘরকে সাক্ষী রেখে মোষের লড়াইয়ের আয়োজন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাধা দেয়নি প্রশাসন। কারণ, মোষ ছিল নকল। মোষের দেহের মধ্যে ঢুকে মানুষই লড়াই চালিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালেন। অবশ্য বিহুর অন্যান্য খেলা চলছে নিজের মেজাজে। রসি টানা, টেকেলি ভাঙা, মোরগের লড়াই, ডিমের লড়াই, কড়ি খেলার পাশাপাশি মিউজিক্যাল চেয়ার, নাচ-গান-আঁকার প্রতিযোগিতা চলছে রাত পর্যন্ত। সকাল থেকে পুজোর ভিড় দেখা যায় ধুবুরি থেকে শদিয়ায়।

শুধু অসমের মানুষই নন, বিদেশিরাও বিহুতে মাতলেন সমান আনন্দে। বিশ্বনাথ জেলার বিহালিতে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থমাস স্ক্রুৎজার স্থানীয় ক্লাবের বিহুতে ঢোল-পেপার তালে নাচেন। বিভিন্ন বিহুটুলিতে বিদেশিনীরাও স্থানীয় মেয়েদের সঙ্গে কোমর দোলান।

Bihu festival
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy