মেহুল চোক্সী
আগে যেন নামটাই কখনও শোনেননি। ‘‘মেহুল চোক্সী... এটাই নাম না?’’
তাচ্ছিল্যের সুর বিজেপির মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদের গলায়। যেন চেনেনই না তাঁকে। এর পরেই প্রতিপক্ষের ঝুলি থেকে বেরোল ২০১৫-র একটি ভিডিও। প্রধানমন্ত্রী নিবাসেই সোনা জমা প্রকল্প ঘোষণা করছেন নরেন্দ্র মোদী। মঞ্চে অরুণ জেটলি, নির্মলা সীতারামন, জয়ন্ত সিন্হা। দর্শকাসনে হাসমুখ আঢিয়া, রঘুরাম রাজনেরা। স্নেহভরা গলায় মোদীর ঘোষণা— ‘‘আমাদের মেহুলভাই এখানে বসে!’’
সপরিবার নীরব মোদীর ‘দ্য গ্রেট এসকেপ’ পর্বে বিজেপির সেনাপতিরা প্রধানমন্ত্রীকে যতই বার করে আনার চেষ্টা করছেন, তথ্যের জালে ততই জড়িয়ে পড়ছেন তিনি।
যা দেখে আজ রাহুল গাঁধীর টুইট— ‘‘দুর্নীতিবাজদের পালানোর মন্ত্র— নমো (নরেন্দ্র মোদী)-র দৌলতে লমো (ললিত মোদী)+ নিমো (নীরব মোদী)= ভাগো। মোদী লুঠ করছেন ভারতকে।’’ কংগ্রেস বলছে, ২০১৫-র মে মাস থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, ইডি, কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক, এসএফআইও, সেবি, গুজরাত ও মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে অনেকে এই দুর্নীতি নিয়ে নালিশ জানিয়েছেন। সব জেনেও চুপ থেকেছেন মোদী। জানুয়ারির গোড়াতেই নীরব মোদীকে পালাতে দিয়েছেন। আবার দাভোসে গিয়ে তাঁকে পাশে নিয়ে ছবিও তুলেছেন।
আরও পড়ুন: মামা-ভাগ্নে ফিরবেন কি, পাসপোর্ট বাতিল হতে পারে
সাড়ে তিন বছরে আর কোনও ক্ষেত্রে সাফল্য তেমন মেলে ধরতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। তাঁর জমানায় বড় দুর্নীতি হয়নি— সেটাই ছিল প্রচারের পুঁজি। সেই সম্বলও হাতছাড়া হচ্ছে দেখে বিজেপি আজ আক্রমণে নামল। প্রকাশ জাভড়েকর দু’টি অস্ত্র আজ ছুড়ে দিয়েছেন। ব্যাঙ্কের এক প্রাক্তন ডিরেক্টরের বিবৃতি, আর ইউপিএ জমানায় নীরব মোদীর প্রদর্শনীতে রাহুলের হাজিরা।
ইলাহাবাদ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন ডিরেক্টর দীনেশ দুবে আজ দাবি করেন, মেহুলকে ঋণ না-দেওয়ার আর্জি জানিয়ে তিনি ২০১৩ সালে অর্থসচিবকে চিঠি লিখেছিলেন। অভিযোগ জানান রিজার্ভ ব্যাঙ্কেও। কিন্তু উল্টে তাঁকেই ইস্তফা দিতে বলা হয়। বিজেপির অভিযোগ, ২০১৩ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর নীরবের প্রদর্শনীতে যান রাহুল। তার পরের দিনই ঋণ মঞ্জুর হয় ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক থেকে। বিজেপির অভিযোগ, কংগ্রেস আমলেই দুর্নীতি শুরু। তখনই ফুলেফেঁপে ওঠেন নীরব-মেহুলেরা। এমনকী সনিয়া গাঁধীর দিকে ইঙ্গিত করে প্রশ্ন ছুড়েছে বিজেপি— কার নির্দেশে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দীনেশ দুবেকে ইস্তফা দিতে বলেছিলেন?
কিন্তু কংগ্রেস আজ আরও তথ্য সামনে এনেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে— বৈভব খুরানিয়া, দিগ্বিজয় সিংহ জাডেজার মতো অনেকে ২০১৫ সাল থেকে নীরব-মেহুলদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে আসছেন। সুতরাং, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরই দুর্নীতির সব তথ্য তাঁর টেবিলে। অথচ সব জেনেও দুর্নীতিগ্রস্তদের নিজের বাড়িতে আপ্যায়ন করেছেন। বিদেশে পালাতে দিয়ে পাশে নিয়ে ছবিও তুলেছেন। কংগ্রেসের দাবি— ‘‘ছোট মোদীদের নিয়ে এ বারে বড় মোদী মুখ খুলুন। সন্দেহের তির যে তাঁর দিকেই।’’
তবে যে প্রধানমন্ত্রী সব বিষয়ে এত টুইট করেন, এত বড় দুর্নীতি নিয়ে তিনি নীরবই। আজ তিনি সরব হয়েছেন, তবে তা পরীক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তা নিয়ে। নাম না-করে এ দিন মোদীকে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ দিন ঝাড়গ্রামে তিনি বলেন, ‘‘এরা আদিবাসীদের ঋণ দিচ্ছে না। চাষিদের ঋণ দিচ্ছে না। অথচ এমন লোকেদের ঋণ দিচ্ছে, যারা হাজার হাজার কোটি মেরে দিয়ে চলে যাচ্ছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy