Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিজেপির ছক কাজে এল না তামিলনাড়ুতে

তিন শতাংশেরও কম ভোট। এক জনও বিধায়ক নেই বিধানসভায়। তবু তামিল রাজনীতিতে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে ওঠার ষোলো আনা ইচ্ছে ছিল বিজেপির। আস্থা ভোটে জিতে শশিকলার ভরসার পাত্র ই পালানীস্বামী আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে থেকে যাওয়ায় নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের সেই ইচ্ছেয় জল পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৩
Share: Save:

তিন শতাংশেরও কম ভোট। এক জনও বিধায়ক নেই বিধানসভায়। তবু তামিল রাজনীতিতে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে ওঠার ষোলো আনা ইচ্ছে ছিল বিজেপির। আস্থা ভোটে জিতে শশিকলার ভরসার পাত্র ই পালানীস্বামী আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে থেকে যাওয়ায় নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের সেই ইচ্ছেয় জল পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে।

যদিও একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, বিজেপি কি এত সহজে হাল ছেড়ে দেবে? নাকি নতুন নাটক শুরু হবে? কারণ, আজকের ভোটাভুটির পরেও বিজেপির তামিল নেতাদের কথা থেকে স্পষ্ট, তাঁরা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিচ্ছেন। যা দেখে মনে হচ্ছে, পালানীস্বামীর সরকার বেশি দিন টিকবে না ধরে নিয়েই এগোচ্ছে বিজেপি। দ্রাবিড়-গৃহযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে তামিলনাড়ুতে দলের শক্তি বাড়ানার চেষ্টা চলিয়ে যাবে বিজেপি।

তামিল রাজনীতিকরা বলছেন, পনীরসেলভমকে সরিয়ে শশিকলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা থেকেই বিজেপির কলকাঠি নাড়ার শুরু। শশিকলাকে শপথে নিতে ডাকার প্রশ্নে সময় নিতে থাকেন রাজ্যপাল বিদ্যাসাগর রাও। বেআইনি সম্পত্তি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে শশী জেলে যাওয়ার পরে বিজেপি নেতা রাম মাধব মন্তব্য করেন, রাজ্যপাল ঠিকই করেছিলেন। প্রথমে মনে হয়েছিল, বিজেপি বুঝি পনীরের পক্ষে। তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসাতে চায়। এখন তামিলনাড়ুর অনেক রাজনীতিক মনে করছেন, বিজেপি আসলে রাজনৈতিক অস্থিরতার পক্ষে। এডিএমকে-র গৃহযুদ্ধের সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে চাইছিল।

আজ বিধানসভা থেকে উৎখাত হয়ে স্ট্যালিনের নেতৃত্বে ডিএমকে নেতারা রাজ্যপালের কাছে দরবার করতে যান। রাজ্যপাল যে ভাবে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের সময় দিয়ে দিয়েছেন, তাতেও অনেকে বিস্মিত। এমনকী, বিধানসভায় গণ্ডগোলের সময়ও মুখ্যসচিবের থেকে রিপোর্ট নিয়েছেন রাজ্যপাল রাও।

ডিএমকে বিধায়কদের বিধানসভা থেকে বার করে দিয়ে ভোটাভুটি করানোর বিরুদ্ধে আজ মুখ খুলেছেন রাজ্য বিজেপির সভানেত্রী তামিলিসাই সৌন্দ্রাজন। তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতির সংখ্যার কাছে আজ রাজনীতির নিয়মনীতি হার মেনেছে। বিরোধীরা গোপন ব্যালটে ভোট চেয়েছিলেন। স্পিকার তাঁদের উৎখাত করে গোপনে ভোটাভুটি করিয়েছেন।’’

আরও পড়ুন: তিনি চাইলেও কি নেবে বিজেপি

এ বারেও কি তেমন কিছুই ভাবছে বিজেপি? দলের রাজ্য সভানেত্রী জানাচ্ছেন, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে ক্ষমতায় আসার কোনও পরিকল্পনাই তাঁদের নেই। বিজেপি ক্ষমতায় আসবে সামনের দরজা দিয়ে। তাঁরা তাই তৈরি হচ্ছেন ভোটের জন্য। এডিএমকে এবং ডিএমকে-র দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে দেবেন এ বার। তাঁর দাবি, বিজেপির অঙ্কটা এই রকম, বিধানসভার আস্থা ভোটে শশিকলা-শিবির জিতলেও বিধানসভার বাইরে পালানী-পনীর শিবিরের দ্বন্দ্ব চলতেই থাকবে। ডিএমকে-ও নিজেদের জমি ফেরাতে আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়াবে। সব মিলিয়ে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হবে রাজ্যে। সেই সুযোগে ফের শিল্পায়ন ও উন্নয়নের কথা বলে দ্রাবিড়-ভূমে নিজেদের জমি তৈরির চেষ্টা করবে বিজেপি।

১৯৬৭-তে কংগ্রেসের হাতছাড়া হওয়ার পরে আর কোনও জাতীয় দল চেন্নাইয়ের কুর্সির দখল পায়নি। ডামাডোলের বাজারে কংগ্রেসও এখন তামিলনাড়ুতে নিজের শক্তি বাড়াতে ব্যস্ত। রাহুল গাঁধী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এডিএমকে-র অন্তর্দ্বন্দ্বে আপাতত কোনও পক্ষই নেবেন না তাঁরা। তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি বুঝে যে কোনও পক্ষের জন্য দরজা খোলা থাকবে। আপাতত ডিএমকে তাদের শরিক। কিন্তু করুণানিধি-পুত্র স্ট্যালিনকে খুব একটা জমি ছাড়ার পক্ষে নয় কংগ্রেস। কন্যাকুমারীর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী পি রাধাকৃষ্ণনের দাবি, কংগ্রেস নয়, তামিল জনতা বিজেপির দিকেই আসবে। কারণ তাঁরা উন্নয়ন চান। বর্তমান বিধায়কদের কাণ্ডকারখানা রাজ্যবাসীর মাথা হেঁট করে দিয়েছে।

বিজেপিতে বেসুরো এক জনই। সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। জয়ললিতার বিরুদ্ধে তাঁর করা মামলাতেই শশী এখন জেলে। কিন্তু বিধানসভায় হুলস্থূলের পরে স্বামীর মন্তব্য, ‘‘শশিকলা অন্তত ডিএমকে-র থেকে ভাল। ডিএমকে হিংসায় বিশ্বাস করে।’’ গণ্ডগোলের মধ্যেও পালানীস্বামী যে ভাবে শান্ত থেকেছেন, তার প্রশংসা করে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদের যোগ্য বলে শংসাপত্রও দিয়েছেন স্বামী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tamil Nadu BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE