জয়ের খবর আসতেই বিজেপি কর্মীদের উল্লাস। শনিবার আগরতলায়। বাপি রায়চৌধুরী।
পশ্চিমবঙ্গের সাত বছর পর, ত্রিপুরাতেও পতন হল দীর্ঘ বাম জমানার! দু’হাত দিয়ে আগলে যে প্রদীপের শিখা বাঁচাতে চেয়েছিলেন বামপন্থীরা, গেরুয়া ঝড় তাকে স্তব্ধ করে দিল।
পঁচিশ বছর ধরে যে রাজ্যপাট সামলেছিল বামফ্রন্ট, সেই রাজ্যপাট দখল করে নিল বিজেপি, সহযোগী আইপিএফটি-কে নিয়ে। সুদূর শাহি দিল্লি থেকে বারে বারে উড়ে এসে উত্তর-পূর্বের এই ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আহ্বান জানিয়েছিলেন, মানিক ফেলে এ বার ‘হিরা’ আনুন।
তাঁর সেই আহ্বানে কাজ হয়েছে, তা গণনার প্রথম থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। সমানে সমানে টক্কর চলছিল লালে-গেরুয়ায়। বাঙালি এলাকায় এই সেয়ানে সেয়ানে লড়াই খানিকটা হলেও, বিজেপি জোট একচ্ছত্র ভাবে বাজিমাত করল উপজাতি প্রধান এলাকাগুলোয়। বেলা গড়াতেই দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মানিক সরকারের দুর্গে মোক্ষম ঘা মারতে চলেছে বিজেপি। তবে বাম দুর্গের পতন ঘটলেও ধনপুরে নিজের আসনটা বাঁচাতে পারলেন মানিক সরকার। দিনের শেষে ৫৪৪১ ভোটে জিতেছেন রাজ্যের গত ২০ বছরের মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: পরীক্ষার নথি-সহ ব্যাগ বেহাত, ফেরাল পুলিশ
এখনও পর্যন্ত ৫৯টি (একটিতে ভোট স্থগিত হয়েছিল) আসনের মধ্যে বিজেপি ও তার সহযোগী দল জিতেছে বা এগিয়ে ৪৩টি আসনে। সিপিএম মাত্র ১৬ (বিকেল ৫টা পর্যন্ত পাওয়া ট্রেন্ড)।
এ বাবের ফলাফল এখনও চূড়ান্ত নয়।
বিশেষ করে উপজাতি এলাকাগুলিতে বামেদের জনসমর্থনের ভিত্তি এই নির্বাচনে পুরোপুরি ধসে গিয়েছে। ২০১৩ পর্যন্ত ত্রিপুরার কোনও বিধানসভায় যে বিজেপি-র কোনও অস্তিত্বই ছিল না, সেই তারাই পাঁচ বছরের মধ্যে যাবতীয় হিসেবনিকেশ পাল্টে দিল।
The historic victory in Tripura is as much an ideological one. It is a win for democracy over brute force and intimidation. Today peace and non-violence has prevailed over fear. We will provide Tripura the good government that the state deserves.
— Narendra Modi (@narendramodi) March 3, 2018
আরও পড়ুন: আগরতলায় গেরুয়া আবির ১০০ টাকা, লাল ৪০
অবশ্য এই সাফল্যের পিছনে পুরো কৃতিত্ব বিজেপি-কে দেওয়া ভুল হবে। পঁচিশ বছরের নিরবচ্ছিন্ন বাম শাসনকালের অবধারিত অঙ্গ হিসেবে তৈরি হয়েছে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা। পুঞ্জীভূত সে বিরোধিতার আঁচ যে বামফ্রন্ট তথা সিপিএম নেতৃত্ব পাননি এমনটা নয়। যে কারণে, ভোটের প্রচারে বারে বারে তাঁদের বক্তব্যে উঠে এসেছে ‘কিছু মানুষের’ বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। কিন্তু যেটা তাঁরা আন্দাজও করেননি যে সেই ‘কিছু মানুষ’ এ বারে এ রকম নির্ণায়ক শক্তি হিসেবে গণ্য হবেন।
পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারও দীর্ঘ ৩৪ বছর পরে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ও যথাযোগ্য বিরোধী দলের সামনে পড়ে ক্ষমতা থেকে ছিটকে যায়। যদিও সেই শাসক দলেও গজিয়ে উঠেছিল বড়-মাঝারি-ছোট নেতার দল। সরকার ও প্রশাসন এক হয়ে যাওয়ার মাসুল গুনতে হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারকে। প্রায় সেই একই মাসুল গুনতে হচ্ছে মানিক সরকারকেও।
আরও পড়ুন : ত্রিপুরায় বাম-জয়ে খুশি ‘হতেন’ মমতা
বামফ্রন্টের এ বারের নির্বাচনী ইস্তেহারে বলা হয়েছিল, ‘ত্রিপুরা একসাথে ছিল, একসাথে আছে, একসাথে থাকবে। শান্তি-সম্প্রীতি-সৌভ্রাতৃত্বের পরিমণ্ডলকে আরো সুদৃঢ় করতে প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।’ বস্তুত, ত্রিপুরার বাঙালি ও জনজাতির মধ্যে বাম আমলে শান্তি ও সম্প্রীতির এক আবহ ছিল বলে এখানকার বহু মানুষই মনে করেন। এবং শান্তিপ্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার প্রয়াসও ছিল বইকি। কিন্তু, জনজাতির জন্য আলাদা রাজ্যের দাবি সুকৌশলে তুলে সিপিএমের সেই শক্ত ঘাঁটিতেই বড়সড় আঘাত হানল বিজেপি জোট।
এ বাবের ফলাফল এখনও চূড়ান্ত নয়।
পাশাপাশি, সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ মানার কথা বলে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা রাজ্য সরকারি কর্মীদের মন জয়ে সমর্থ হয়েছেন। সঙ্গে লাগাতার প্রচারের ঝড় তুলে, কোনও সন্দেহ নেই, বিজেপি আমআদমিকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে অমিত শাহ, অরুণ জেটলি, নিতিন গড়কড়ি, রাজনাথ সিংহ— প্রচারে বিজেপি কাকে আনেনি! প্রত্যেক যুবককে স্মার্টফোন, প্রতিটি পরিবার থেকে এক জনের চাকরি— প্রচারে কী ব্যবহার করেনি বিজেপি!
এ বাবের ফলাফল এখনও চূড়ান্ত নয়।
একেবারে বুথ স্তর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে সিপিএমেরই কায়দায় তাদেরকে পদানত করল সুনীল দেওধরের দল। এই সুনীল দেওধরই ত্রিপুরার ভারপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা, যাঁকে দলের অনেকেই ‘ব্যাকরুম বয়’ বলে মনে করেন।
শহরের আস্তাবল মাঠে বিজয় সমাবেশ হতে চলেছে বিজেপির। ‘চলো পাল্টাই’-এর ডাকে সাড়া দিয়েছে আমআদমি।
গ্র্যাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy