গেরুয়া বসন পরেন বলে তিনি আধুনিক নন, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। যোগীর প্রশংসা করে সোমবার এমনই বার্তা দিলেন মোদী। ছবি: পিটিআই।
রাজনীতির দাপুটে ব্যক্তিত্ব তাঁরা। দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যটিকে শাসন করেছেন প্রত্যেকেই। কিন্তু ভয়ে কাবু হয়ে যেতেন তাঁরা নয়ডার নাম শুনলেই। আর যাঁরা ভয়কে জয় করার চেষ্টা করতেন, তাঁরা নির্বাচনে জয় পেতেন না।
আদ্যন্ত কাকতালীয় সবটাই। কিন্তু নয়ডাকে মুখ্যমন্ত্রীদের জন্য ‘অপয়া’ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। যে মুখ্যমন্ত্রী নয়ডায় পা রাখেন, তিনি আর ক্ষমতায় ফিরতে পারেন না— এ কথা কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিল উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে।
ভয়ে হোক বা অন্য কোনও কারণে, গত আট বছরে নয়ডায় পা রাখেননি উত্তরপ্রদেশের কোনও মুখ্যমন্ত্রী। যোগী আদিত্যনাথ সে পরম্পরায় ছেদ টানলেন। ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে দু’বার নয়ডা সফর করলেন গেরুয়া বসনধারী রাজনীতিক। নয়ডাকে যে ‘অপয়া’ ভাবতে তিনি রাজি নন, সে বার্তা বেশ স্পষ্ট ভাবেই দিলেন। ফলে পেয়ে গেলেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা। যোগীর সুনাম করে মোদী বললেন— বিশ্বাস ভাল, কিন্তু অন্ধবিশ্বাস নয়।
বীর বাহাদুর সিংহের ইস্তফাকে কেন্দ্র করেই নয়ডা কিংবদন্তির সূত্রপাত। ১৯৮৮ সালে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে। সদ্য নয়ডা থেকে ফিরেছিলেন। তার পরেই খবর পেয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতে হবে।
ম্যাজেন্টা লাইনে মেট্রো সফর প্রধানমন্ত্রী মোদীর। সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল রাম নাইক, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাজ্য বিজেপির সভাপতি মহেন্দ্রনাথ পাণ্ডে। ছবি: পিটিআই।
পরবর্তী কালে উত্তরপ্রদেশের অনেক মুখ্যমন্ত্রীই নয়ডাকে এড়িয়ে চলেছেন। কল্যাণ সিংহ, মুলায়ম সিংহ যাদব, রাজনাথ সিংহের মতো ব্যক্তিত্বও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকাকালীন নয়ডার ধারেকাছে যাননি।
মায়াবতী ধাক্কা দিতে চেয়েছিলেন কুসংস্কারে। ২০০৭ সালে প্রথম বার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন বিএসপি সুপ্রিমো। নিজের কার্যকালে বেশ কয়েক বার নয়ডা যান তিনি। ২০১২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মায়াবতী হারার পর অনেকেই বলতে শুরু করেন, ‘অপয়া নয়ডা’য় গিয়েই এই হাল হল বহেনজির।
আরও পড়ুন: দারুণ লড়াই, তৃতীয় হয়েও আনন্দ মোদীর
২০১২ সালের ভোটে বিপুল জয় পেয়েছিল মুলায়ম সিংহ যাদবের সমাজবাদী পার্টি। মুখ্যমন্ত্রী হন অখিলেশ যাদব। পাঁচ বছরের কার্যকালে নয়ডার ধারেকাছে ঘেঁষেননি অখিলেশ। তবে নয়ডায় পা রাখেননি বলে নিজের গদি অখিলেশ টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন তেমনও কিন্তু নয়।
যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে গত শনিবারই প্রথন বার নয়ডায় পা রাখেন। দিল্লি মেট্রোর নবনির্মিত ম্যাজেন্টা লাইনের উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রী যে নয়ডা সফর করবেন, তা আগেই নির্ধারিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতেই সে দিন নয়ডা গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে যোগী চলে যান গৌতমবুদ্ধনগর জেলায় নির্মিত বটানিক্যাল গার্ডেন মেট্রো স্টেশন পরিদর্শন করতে। সোমবার ফের নয়ডা ফেরেন যোগী। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে যোগ দেন মেট্রো প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
আরও পড়ুন: গরু পাচার করলে মরতে হবে, হুমকি বিজেপি বিধায়কের
প্রধানমন্ত্রী মোদী মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের পিঠ চাপড়ে দিতে ভোলেননি সোমবার। মেট্রো প্রকল্পের উদ্বোধনের পর নয়ডায় ভাষণ দেন মোদী। জমায়েতের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমি খুশি হয়েছি। তাঁর (আদিত্যনাথের) পোশাকের কারণে অনেকে এমনটা ভাবতে ভালবাসেন যে, তিনি যথেষ্ট আধুনিক নন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা যা করতেন না, যোগী আদিত্যনাথজি সেটাই করলেন— তিনি নয়ডায় এলেন।’’ মোদী আরও বলেন, ‘‘বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু অন্ধবিশ্বাস চলতে পারে না।’’
নরেন্দ্র মোদী নিজের অভিজ্ঞতাও ব্যাখ্যা করেন এ দিন। তিনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর অনেকে তাঁকেও ভয় দেখিয়েছিলেন বলে মোদী জানান। যে সব জায়গায় যেতে তাঁকে নিষেধ করা হয়েছিল, নিজের কার্যকালের প্রথম বছরেই তিনি সেই সব এলাকা সফর করেছিলেন বলেও প্রধানমন্ত্রী এ দিন দাবি করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy