Advertisement
E-Paper

ফাঁকিতে পাপ, পাপের শাস্তি ক্যানসার! শিক্ষকদের সতর্ক করে বিতর্কে হিমন্ত

আজ নতুন শিক্ষকদের নিয়োগ পত্র দেওয়ার এক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন শিক্ষা তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত। এই মঞ্চে ভাষণ দিতে উঠেই তিনি ভগবানের দোহাই পাড়তে শুরু করেন। ক্যান্সার বা দুর্ঘটনা পাপের ফল! মন্ত্রীর নিদান শুনে আলোড়ন শুরু হয়।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২১
অসমের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। ছবি: পিটিআই।

অসমের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। ছবি: পিটিআই।

কাজে ফাঁকি দিলে ভগবান পাপ দেবেনই। পরিবারের অন্য কেউ অন্যায় করলেও ভগবানের বিচার থেকে পার পাবেন না। ক্যানসার বা দুর্ঘটনায় অকালমৃত্যু ভগবানের রোষেরই ফল! কোনও জ্যোতিষী বা ধর্মগুরুর হুমকি বা বাণী নয়, খোদ অসমের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মুখে এমন বচন শুনে প্রায় সকলেই অবাক! তাঁর মন্তব্যের সমালোচনা শুরু হলেও দমছেন না বিজেপি মন্ত্রী। বরং তাঁর দাবি, কর্মফল হিন্দুধর্মের সনাতন বিশ্বাস। তা থেকে বাঁচা যায় না!

রাজ্যের স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের কাজে ফাঁকির অভিযোগ উঠছে। মন্ত্রীর ধমকে ভয় পাচ্ছেন না অধিকাংশ শিক্ষকেরা। চলছে ফাঁকি। তাই ঈশ্বরের রোষের ভয় দেখিয়ে নবনিযুক্ত শিক্ষকদের কর্মনিষ্ঠ করার চেষ্টা করছিলেন রাজ্যের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। শিক্ষকদের নিযুক্তিপত্র প্রদান অনুষ্ঠানে হিমন্ত বলেন, "এই যে অনেকের ক্যানসার হয়, কারও যুবক সন্তান দুর্ঘটনায় অকালে মারা যায়— এ সবই পাপের ফল। এই জন্মে বা পূর্বজন্মে করা পাপের জন্যই এ সব ঘটনা ঘটে। নিজে পাপ না করে থাকলেও বাবা-মা অথবা পরিবারের অন্য কেউ পাপ করলেও তার ফল সন্তানকে ভুগতে হতে পারে! তাই কাজে ফাঁকি দেবেন না। তাতে পাপ হবে!"

অসম সরকার ক্যানসার গবেষণা ও চিকিৎসায় বিস্তর পদক্ষেপ করছে। খোদ হিমন্তও এ নিয়ে উদ্যোগী হয়েছেন। সে সময় তিনি নিজে এমন অন্ধবিশ্বাসী কথা জনসভায় শিক্ষকদের উদ্দেশে বললেন কী ভাবে? আনন্দবাজারকে হিমন্তের সাফাই, "আমি কোনও নতুন কথা বলিনি। বলেছি, আমাদের সব কষ্টই কর্মফল। গতজন্মের কর্মফল এ জন্মে ভোগ করতে হয়— এটাই হিন্দু বিশ্বাস। সেই সুপ্রাচীন দর্শনকেই তুলে ধরেছি মাত্র।"

আরও পড়ুন: কলকাতায় ঘাঁটি গেড়ে ঢাকায় সন্ত্রাসের ছক কষছিল ওই জঙ্গিরা

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে এআইইউডিএফ। তাদের তরফে আমিনুল ইসলাম বলেন, "বিজ্ঞানের যুগে খোদ শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মানসিকতা যদি এমন হয়, তবে রাজ্যের উন্নতি অসম্ভব। নিজের ব্যর্থতা ঢাকতেই এমন মন্তব্য করে দায় এড়াতে চাইছেন মন্ত্রী।" বিরোধী দলপতি কংগ্রেস বিধায়ক দেবব্রত শইকিয়ার কথায়, "হিমন্ত নিজে ক্যানসার রুখতে তামাক বিরোধী আইন এনেছেন। ক্যানসার গবেষণায় এত খরচ করছে কেন্দ্র ও রাজ্য। সব যদি পাপ ও পূর্বজন্মের কর্মফলই হয়, তা হলে তো সব গবেষণাই অর্থহীন। এক জন মন্ত্রীর এমন হঠকারি, অবিবেচক মন্তব্যে ক্যানসার রোগীরাও মানসিক ভাবে আঘাত পাবেন।"

বিভিন্ন ধরণের ক্যানসারের কারণ নিয়ে চলছে গবেষণা। সেই অবস্থায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী কী ভাবে কর্মফলকে ক্যানসারের কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করতে পারেন? হিমন্ত অবশ্য নিজের মনোভাবে অনড়। তিনি হোয়াট্‌সঅ্যাপে লেখেন, "ব্যক্তিগত মত বা বিজ্ঞানের সঙ্গে আমার দার্শনিক যুক্তির তুলনা টানলে আমার কিছু বলার নেই। হিন্দু দর্শনের মূলেই রয়েছে কার্মিক দর্শন। আমি তো তা বদলে ফেলতে পারব না। হিন্দু হিসেবে সেই মতবাদই আমি মেনে চলব। আমার বাবাও নিশ্চয়ই পাপ করেছিলেন। তাই তাঁরও ক্যানসার হয়েছিল।"

Himanta Biswa Sarma হিমন্তবিশ্ব শর্মা Assam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy