পাউরুটির দু’টি উপাদান এ বার প্রশ্নের মুখে। সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই)-এর প্রকাশ করা একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে, পাউরুটি বানাতে ব্যবহার করা হয় দু’টি রাসায়নিক। পটাশিয়াম ব্রোমেট এবং পটাশিয়াম আয়োডেট। সিএসই কর্তৃপক্ষের দাবি, এই দু’টি রাসায়নিক শরীরের পক্ষে ভীষণ ভাবে ক্ষতিকর।
সিএসই দিল্লির ৮৪% সংস্থাগুলির তৈরি করা পাউরুটির মধ্যেই এই রাসায়নিক দু’টির সন্ধান পেয়েছে বলে দাবি। যদিও প্রথম সারির সেই সব সংস্থার অনেকেই এই রাসায়নিক ব্যবহারের সত্যতা অস্বীকার করেছে।
ঠিক কী ক্ষতি করতে পারে এই রাসায়নিক দু’টি? ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশান ফর দি কালটিভেশন অব সায়েন্স-এর অজৈব রসায়ন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তপন পাইন বলেছেন, ‘‘পটাশিয়াম ব্রোমেট একটি জোরালো অক্সিডাইজিং এজেন্ট। অর্থাৎ জারক বস্তু। শরীরের কোষের উপর এর ভয়ানক প্রভাব পড়তে পারে। তাই একটি বিশেষ মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেই ক্যানসারের কারণ হতে পারে এই রাসায়নিকটি।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক উৎপল রায়চৌধুরীর গলাতেও একই সুর। তাঁর কথায়, ‘‘মূলত স্নায়ুতন্ত্রের উপরই প্রভাব ফেলে পটাশিয়াম ব্রোমেট।’’ আর পটাশিয়াম আয়োডেটের ফলে হতে পারে থাইরয়েড। এমনটাই জানিয়েছেন সিএসই কর্তৃপক্ষ।
পাউরুটি বানাতে এই দু’টি রাসায়নিকের কাজ কী? উৎপলবাবুর কথায়, রাসায়নিক দু’টিকে ‘ব্রেড এনহ্যান্সার’ বলা হয়। অর্থাৎ তারা পাউরুটিকে আরও ফোলাতে এবং নরম করতে সাহায্য করে। উৎপলবাবু আরও জানিয়েছেন, ২০১২ সালে এফডিএ-র দেওয়া হিসেব অনুযায়ী প্রতি কিলোগ্রাম ময়দায় ০.০২ মিলিগ্রামের বেশি পটাশিয়াম ব্রোমেট থাকলেই বিপদ। কিন্তু বেকারি কারখানাগুলিতে এই পরিমাপ মাপার আদৌ কোনও পরিকাঠামো আছে কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই রাসায়নিকগুলি ছাড়াও পাউরুটি বানানো সম্ভব। যেমন অনেক সময়েই পরীক্ষাগারে বানানো হয়। সে ক্ষেত্রে এই রাসায়নিকগুলির পরিবর্তে সিসটিন অ্যামাইনো অ্যাসিডও ব্যবহার করা যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। কিন্তু তখন পাউরুটির দাম বেশ বেড়ে যেতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
পশ্চিমবঙ্গের বেকার্স অ্যাসোসিয়েশানের জয়েন্ট অ্যাকশান কমিটির সচিব ইদ্রিশ আলি বলেছেন, ‘‘মানুষের ক্ষতি হয়, এই জাতীয় কোনও রাসায়নিক আমরা ব্যবহার করি না। তবে যদি সে রকম কিছু সত্যিই প্রমাণিত হয় তখন তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।’’
তবে ফ্লুরিজ এবং পার্ক হোটেলের আঞ্চলিক ডিরেক্টর শরৎ দেওয়ানের দাবি, তাঁদের তৈরি করা পাউরুটি এই রাসায়নিক মুক্ত। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কোনও ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করি না।’’ একই কথা জানান মিসেস ম্যাগপাইয়ের কর্ণধার সোহিনী বসুরায় এবং কুকি জারের লভি বর্মণ। তাঁদের তৈরি করা পাউরুটি, পিৎজা, বার্গারেও কোনও রাসায়নিক থাকে না বলে তাঁদের দাবি।
তবে এই মুহূর্তে যাতে পটাশিয়াম ব্রোমাইড ব্যবহার বন্ধ করা হয়, তা দেখতে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অব ইন্ডিয়াকে নির্দেশ দিয়েছে সিএসই। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন— এমন অনেক দেশেই এই রাসায়নিকগুলি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। এই সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল বলেছেন, ‘‘সারা দেশ থেকে সংগ্রহ করা ৮৪ শতাংশ নুমনাতেই আমরা পটাশিয়াম ব্রোমেট এবং পটাশিয়াম আয়োডেট পেয়েছি। শুধু আমরা নই, অন্য একটি পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করেও একই ফল পাওয়া গিয়েছে।’’
যদিও এই নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হতে বারণ করছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী জে পি নড্ডা। তিনি বলেছেন, ‘‘জরুরি ভিত্তিতে এই বিষয়ে আধিকারিকদের রিপোর্ট পেশ করতে বলেছি। তার পরে বাকি পদক্ষেপ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy