Advertisement
E-Paper

ধর্ম-জাত সর্বনাশা, তাই এঁরা কেরলের কাস্টলেস পরিবার

কাস্টলেস জুনিয়র। এটাই আসল নাম কেরলের কোল্লাম জেলার পুনালুরের বাসিন্দা আইনজীবীর। তবে এমন নাম তাঁর একার নয়। তাঁর দাদার নাম কাস্টলেস, বোনের নাম শাইন কাস্টলেস।

সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৫
স্ত্রী-দুই কন্যার সঙ্গে কাস্টলেস জুনিয়র (বাঁ দিকে)। ফসলুদ্দিন এবং অ্যাগনেস (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

স্ত্রী-দুই কন্যার সঙ্গে কাস্টলেস জুনিয়র (বাঁ দিকে)। ফসলুদ্দিন এবং অ্যাগনেস (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

ছোটবেলায় স্কুলে তার নাম নিয়ে বন্ধুদের অনেকেই মজা করত। শিক্ষকদের থেকেও নানা কথা শুনতে হত। চাকরির সূত্রে প্রবাসী বাবাকে চিঠি লিখে সে সব কথা জানাত ছেলেটি। বাবার উত্তর আসত, ‘বড় হও। তখন যদি তোমার নাম বদলানোর ইচ্ছে হয়, বদলে নিও।’ সেই ছেলে আজ আইনজীবী। তবে নাম বদলাননি। বাবার দেওয়া নামেই সুপরিচিত তিনি।

কাস্টলেস জুনিয়র। এটাই আসল নাম কেরলের কোল্লাম জেলার পুনালুরের বাসিন্দা আইনজীবীর। তবে এমন নাম তাঁর একার নয়। তাঁর দাদার নাম কাস্টলেস, বোনের নাম শাইন কাস্টলেস। কাস্টলেস জানালেন, তাঁদের বাবা-মাকে একসঙ্গে থাকার ক্ষেত্রে যে বাধা পেরোতে হয়েছিল, সেখান থেকেই এমন নামকরণের সূত্রপাত।

কাস্টলেস বলেন, ‘‘আমার বাবা ফসলুদ্দিন আলিকুঞ্জুর পরিবার মুসলিম। মা অ্যাগনেস গ্যাব্রিয়েল খ্রিস্টান। দু’জনের কারও পরিবারই সম্পর্ক মেনে নেয়নি। বরং বিষয়টা জানতে পারার পর মা’কে তাঁর পরিবারের তরফে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। তাঁকে ছাড়াতে কেরালা হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস পিটিশন দায়ের করেন আমার বাবা। ১৯৭৩ সালে কেরালা হাইকোর্টের রায়ের পরে তাঁরা একসঙ্গে থাকা শুরু করেন।’’

তখন দু’জনের পরিবারই আলাদা করে চাপ দেন ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য। তা হয়নি। ১৯৭৪ সালে ফসলুদ্দিন ও অ্যাগনেস প্রথম সন্তানের নাম রাখলেন, ‘কাস্টলেস’। পুনালুর আদালতের আইনজীবী ফোনে হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘তার এক বছর পরে জন্মালাম আমি। বাবা-মা আমার নাম রাখলেন কাস্টলেস জুনিয়র। বাবা বলতেন, ধর্ম-জাতি মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে। তাই আমাদের তিন ভাইবোনের নাম দিয়েছিলেন ‘কাস্টলেস’, অর্থাৎ জাতহীন। সমস্ত ফর্মে জাত ও ধর্মের জায়গায় লিখেছিলেন, ‘নিল’, অর্থাৎ ‘নেই’।’’ পুনালুরে তাঁদের বাড়ির বাইরেও কাঠের বোর্ডে মালয়ালিতে লেখা, ‘কাস্টলেস হাউস।’

কাস্টলেস জুনিয়র বলেন, ‘‘বাবা বলতেন, যখন ব়ড় হবে, তখন দেখবে এই জাত-ধর্ম নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবে না।’’ বাস্তবে অবশ্য তা হয়নি। এই কেরলেই হাদিয়ার বিয়ে নিয়ে ‘লাভ জিহাদের’ মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। গোটা দেশেই ধর্ম-জাতের সমীকরণ চলছে ভোটে। তবে বাস্তব নিরাশ করতে পারেনি এই পরিবারকে। কাস্টলেস জুনিয়র জানালেন, তিনি ও তাঁর দাদা দু’জনেই সন্তানদের নাম রেখেছেন ‘কাস্টলেস’। সংখ্যায় কম হলেও তাঁদের মতের শরিক দেশে রয়েছে। ২০০১-এর ধর্মীয় জনগণনায় ধর্ম উল্লেখ না করা নাগরিকের সংখ্যা ছিল ০.১ শতাংশ, ২০১১-তে তা বেড়ে হয় ০.২৪ শতাংশ। কয়েকদিন আগেই কেরলেরই ফুটবলার সি কে বিনীত তাঁর সদ্যোজাত পুত্রের বার্থ সার্টিফিকেটে ধর্মের জায়গায় লিখেছেন ‘নিল’। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসিত হয়েছেন বিনীত। এ প্রসঙ্গে ফুটবলার বলেন, ‘‘যা করার তো করেইছি, মুখে আর কী বলব?’’

তাই স্বপ্ন দেখতে ছাড়ে না এই ‘জাতহীন’ পরিবার। কাস্টলেস জুনিয়রের কথায়, ‘‘একদিন সকলে বুঝতে পারবে ধর্ম-জাতপাত ধ্বংসই করে। তখন আমাদের মতের শরিক হবেন আরও অনেকেই।’’

Casteless Family Kerala Caste Religion Casteless Junior কাস্টলেস জুনিয়র
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy