Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
National News

‘ক্ষয়ক্ষতি আরও অনেক বেশি হয়েছে, স্বীকার করছে না পাকিস্তান’

রজৌরি সেক্টরে পাক বাহিনীর হামলার তিন দিনের মধ্যে পুঞ্চ সেক্টরে পাল্টা পদক্ষেপ ভারতীয় সেনার। নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে গিয়ে সরাসরি পাক সেনাঘাঁটিতে আঘাত হানল ভারত। এই অভিযান কী ভাবে হল? এর তাৎপর্য কী? সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সঙ্গে এর ফারাক কোথায়? আনন্দবাজার ডিজিটালের জন্য কলম ধরলেন ভারতীয় সেনার অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক।আমি যা খবর পেয়েছি, তাতে মনে হচ্ছে ১০ জন কম্যান্ডোর একটা দলকে নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পারে পাঠানো হয়েছিল। ওই এলাকা পাকিস্তানের রাওয়ালকোট বিগ্রেডের হাতে রয়েছে। সেখানে ৫৯ বালুচ রেজিমেন্টের একটি পোস্টে ভারতীয় বাহিনী আঘাত হেনেছে। খুব দ্রুত অভিযান সেরে ফিরেও এসেছে।

ভারতীয় সেনা এখনও প্রত্যাঘাত করেনি, একটা বার্তা দিয়েছে মাত্র। ভারত পুরোদস্তুর প্রত্যাঘাত করলে তা আরও মারাত্মক হত পাকিস্তানের পক্ষে। মত অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিকের। ছবি: এএফপি।

ভারতীয় সেনা এখনও প্রত্যাঘাত করেনি, একটা বার্তা দিয়েছে মাত্র। ভারত পুরোদস্তুর প্রত্যাঘাত করলে তা আরও মারাত্মক হত পাকিস্তানের পক্ষে। মত অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিকের। ছবি: এএফপি।

কর্নেল সৌমিত্র রায়
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৭:১১
Share: Save:

আমরা যোগ্য জবাব দিয়েছি বা আমরা উপযুক্ত প্রত্যাঘাত করেছি, এমনটা বলছি না। কিন্তু পাকিস্তানকে একটা উচিত শিক্ষা আমরা দিলাম। দিয়ে দিলাম একটা কঠোর বার্তাও।

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে বা নিয়ন্ত্রণরেখায় গোলাগুলি চলাটা এখন যেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তান বার বার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে, ভারতও পাল্টা দেয়। কিন্তু কোনও পক্ষই সরচরাচর সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে না। যখন ঘোষিত ভাবে যুদ্ধ চলে, একমাত্র তখনই সশস্ত্র বাহিনীকে সীমান্ত লঙ্ঘন করে প্রতিপক্ষের এলাকায় ঢোকার অনুমতি দেওয়া থাকে। কিন্তু যখন পরিস্থিতি যুদ্ধকালীন নয়, তখন সীমান্ত লঙ্ঘন করাটা মোটেই স্বাভাবিক ঘটনা নয়।

জম্মু-কাশ্মীরের পুঞ্চ সেক্টর থেকে অভিযানটা চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। এই অভিযানের বিশদ বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু আমি যা খবর পেয়েছি, তাতে মনে হচ্ছে ১০ জন কম্যান্ডোর একটা দলকে নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পারে পাঠানো হয়েছিল। ওই এলাকা পাকিস্তানের রাওয়ালকোট বিগ্রেডের হাতে রয়েছে। সেখানে ৫৯ বালুচ রেজিমেন্টের একটি পোস্টে ভারতীয় বাহিনী আঘাত হেনেছে। খুব দ্রুত অভিযান সেরে ফিরেও এসেছে।

এর আগে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ দেখেছি আমরা। ২০১৬-র সেই অভিযানকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বলা উচিত, নাকি অন্য কোনও নামে ডাকা উচিত, তা নিয়ে আমার নিজস্ব মতামত রয়েছে। সে বিতর্কে এখন যাচ্ছি না। কিন্তু আগের বারের সেই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ আর এ বারের ‘ক্রস বর্ডার রেড’-এর মধ্যে ফারাক আছে।

প্রথমত, ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’ ভারতীয় বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছিল টেরর লঞ্চ প্যাডে। অর্থাৎ, নিয়ন্ত্রণরেখার খুব কাছাকাছি অবস্থিত যে সব ঘাঁটি থেকে জঙ্গিরা অনুপ্রবেশের জন্য রওনা দেয়, সেই রকম একাধিক ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

এ বার যে ক্রস বর্ডার রেড হল, তাতে কোনও জঙ্গি ঘাঁটিতে নয়, সরাসরি পাক সেনার ঘাঁটিতেই ভারত আঘাত হেনেছে।

এই ধরনের খবর আপনার ইনবক্সে সরাসরি পেতে এখানে ক্লিক করুন

শনিবার পাকিস্তান হামলা চালিয়েছিল যে এলাকায়, সেখানে বাড়ানো হয়েছে টহলদারি। ছবি: এএফপি।

দ্বিতীয়ত, ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ছিল ভারতের একটি স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকশন। নিয়ন্ত্রণরেখার ও-পারে যে সব জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে আঘাত হানা হয়েছিল, উত্তর থেকে দক্ষিণে সেই ঘাঁটিগুলি প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বিস্তার জুড়ে অবস্থান করছে। এত বড় এলাকায় একযোগে আঘাত হানাকে স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকশনই বলা হয়। সহজ কথায় বললে, ওটা ছিল খুব বড় সামরিক পদক্ষেপ। ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ওই অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কী ভাবে অভিযান হবে, কবে হবে, কোথায় হবে— সে বিষয়ে বাহিনীর পরিকল্পনা বিশদে জানানো হয়েছিল মন্ত্রককে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমোদনের পর পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রস্তুতি নিয়ে জঙ্গি ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন: তিন দিনেই বদলা, সরাসরি পাক সেনাঘাঁটিতে আঘাত হানল ভারত

কিন্তু এ বার যে অভিযান হল, তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমোদন সাপেক্ষ নয়। কারণ এটা স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকশন নয়, এটা হল ট্যাকটিক্যাল অ্যাকশন। সেনা সূত্রে জানা যাচ্ছে, ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ের সিদ্ধান্তেই এই অভিযান চালানো হয়েছে। আমার অভিজ্ঞতাও তাই বলছে। সাধারণত ডিভিশনাল কম্যান্ডার বা কোর কম্যান্ডাররাই এই ধরনের অভিযানের নির্দেশ দিয়ে থাকেন।

ফারাক যা-ই থাক, এ কথা কিন্তু মানতেই হবে যে, পাকিস্তানকে অত্যন্ত কঠোর বার্তা ভারত দিতে পারল। নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে আগের বার জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত হানা হয়েছিল। এ বার সরাসরি সেনাঘাঁটি ধ্বংস করা হল। ভারত বুঝিয়ে দিল, সন্ত্রাস এবং ছায়াযুদ্ধ বন্ধ বন্ধ না হলে যে কোনও পদক্ষেপেই ভারত প্রস্তুত।

আরও পড়ুন: জঙ্গিদমনে সাফল্য সেনার, কাশ্মীরে খতম শীর্ষ জইশ নেতা

রাওয়ালকোট এলাকায় পাক বাহিনীর যে পোস্টটিতে আঘাত হানা হয়েছে, সেই পোস্ট সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। পাকিস্তান স্বীকার করে নিয়েছে যে ভারত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে আঘাত হেনেছে। তবে পাকিস্তান ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে যা বলছে, তা সম্ভবত ঠিক নয়। ওঁরা বলছেন, ভারতের আক্রমণে তিন সেনাকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। একজন আহত। কিন্তু যে ধরনের অভিযান ভারতীয় কম্যান্ডোরা চালিয়েছেন, তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলেই মনে হচ্ছে। হতাহতের সঠিক সংখ্যাটা পাকিস্তান বলছে না বলে আমার ধারণা।

তবে আবার বলি, এটাকে ভারতের প্রত্যাঘাত বলে ডাকতে আমি রাজি নই। ভারতের মতো সামরিক শক্তি যখন প্রত্যাঘাত করে, তখন এর চেয়ে অনেক বড় আকারে করে। বাহিনীর লোকাল ইউনিটের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হওয়া এই অভিযান আসলে পাকিস্তানের জন্য একটা বার্তা। আমরা কিন্তু আর চুপচাপ বসে থাকব না, সীমান্তে বা নিয়ন্ত্রণরেখায় যদি আমরা আক্রান্ত হই, তা হলে আর কূটনৈতিক স্তরের প্রতিবাদ বা বাগ্‌যুদ্ধের মধ্যে আমরা সীমাবদ্ধ থাকব না, অবিলম্বে পাল্টা আঘাত হানব— এই বার্তাই পাকিস্তানকে দিয়ে দিল ভারতীয় সেনা। ইসলামাবাদ এবং রাওয়ালপিন্ডি যত ভাল ভাবে এই বার্তা বুঝতে পারবে, ততই মঙ্গল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE