Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পাক সীমান্তে ক্ষতবিক্ষত গ্রাম, নিন্দায় দিল্লি

সরকারি সূত্র বলছে, নতুন বছরের ১৮ দিনের মধ্যে একশো বারের বেশি বিনা প্ররোচনায় সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাক বাহিনী।

চিহ্ন: পাকিস্তানের ছোড়া শেলে ক্ষতবিক্ষত বাড়ির দেওয়াল। শুক্রবার জম্মুর আরএস পুরা সেক্টরের সুচেতগড় গ্রামে। ছবি: পিটিআই।

চিহ্ন: পাকিস্তানের ছোড়া শেলে ক্ষতবিক্ষত বাড়ির দেওয়াল। শুক্রবার জম্মুর আরএস পুরা সেক্টরের সুচেতগড় গ্রামে। ছবি: পিটিআই।

সাবির ইবন ইউসুফ
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৯
Share: Save:

সেনা-বিএএসফের তো বটেই, সীমান্তে ও নিয়ন্ত্রণরেখায় সমানে রক্ত ঝরছে সাধারণ নাগরিকদের। আজও আরএস পুরা সেক্টরে সুচেতগড়ের তিন বাসিন্দার প্রাণ নিয়েছে পাক গোলা। জখম হয়েছেন অন্তত ৫ জন গ্রামবাসী। পাক গোলায় মারা গিয়েছেন বিএসফের এক জওয়ানও। জম্মুর রাজৌরিতে কেরি সেক্টরে মৃত্যু হয়েছে এক সেনা জওয়ানের।

সরকারি সূত্র বলছে, নতুন বছরের ১৮ দিনের মধ্যে একশো বারের বেশি বিনা প্ররোচনায় সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাক বাহিনী। গোলাগুলিতেই এর কড়া জবাব দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত পাক হাইকমিশনার সৈয়দ হায়দার শাহকে আজ বিদেশ মন্ত্রকে ডেকে পাঠানো হয়। ইচ্ছাকৃত ভাবে নিরস্ত্র নাগরিকদের নিশানা করার জন্য তীব্র ক্ষোভ জানানো হয় ভারতের তরফে। এমন আক্রমণ যে গোটা বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত সব মানবিক রীতিনীতির বিরোধী, বিশেষ ভাবে সে কথা উল্লেখ করেছে বিদেশ মন্ত্রক।

বিএসএফ সূত্রের খবর, আজ ভোর থেকেই আর এস পুরা ও রামগড় সীমান্তের ও-পার থেকে বিনা প্ররোচনায় তীব্র গোলাগুলি বর্ষণ শুরু করে পাক সেনা। সাচেতপুরে নিহত হন দুই ভাই কমলজিৎ সিংহ (৪০) ও দেবেন্দ্র সিংহ (৩৩)। তৃতীয় জনের নাম বালকৃষ্ণ (৩০)। সাম্বা সেক্টরে গোলা-বিনিময়ের সময়ে জখম হন বিএসএফের ১৭৩ নম্বর ব্যাটেলিয়নের হেড কনস্টেবল জগপাল সিংহ। সাম্বার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

আরও পড়ুন: কেন্দ্রেই নানা মত চিন নিয়ে, প্রশ্ন অনেক

এর আগে বুধবার শেষ রাতেও আর এস পুরা এবং আর্নিয়া সেক্টরে এক জন বিএএসএফ জওয়ান ও এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছিল পাক গোলায়। তখন থেকেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণরেখা। সীমান্তবাসীরা আতঙ্কের মধ্যে কাটাচ্ছেন প্রতি মুহূর্তে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বাড়ির কাছাকাছি বাঙ্কার তৈরি করা রয়েছে। কিন্তু অবিরাম গোলাগুলি ছুটে আসায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে সকলকে নিয়ে সেটুকু পথ যাওয়ারও সাহস পাচ্ছেন না অনেক ক্ষেত্রে। তাঁদের ঘরবাড়ি-সম্পত্তিরও ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে যথেষ্ট।

বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার জনেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত কাল থেকেই এলাকার সব স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।

ভারতের ৪ জওয়ান নিহত হওয়ার পরে সম্প্রতি ৭ জন পাক সেনার মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে। এর পর থেকেই এমন লাগাতার গোলাগুলি চালাচ্ছে পাকিস্তান। এর কড়া জবাব দেওয়ার দাবি উঠছে রাজনৈতিক মহলেও।

প্রাক্তন সেনাকর্মী, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমেরেন্দ্র সিংহের যেমন দাবি, ওরা এক জনকে মারলে, ওদের দশ জনকে খতম করতে হবে। কেন্দ্রের মোদী সরকার সেনাবাহিনীকে যোগ্য জবাব দেওয়ার অনুমতি আগে থেকেই দিয়ে রেখেছে। তবে ও-পার থেকে আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় কূটনৈতিক ভাবেও কঠোর হচ্ছে দিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকে আজ পাক হাইকমিশনার হায়দারকে তলব করা হয় সেই কারণেই। কড়া ভাষায় হায়দারকে বলে দেওয়া হয়েছে, নতুন বছরের তিন সপ্তাহও পেরোয়নি। এর মধ্যে একশো বারের বেশি সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। অবিলম্বে তা বন্ধ করে পাকিস্তান যেন ২০০৩ সালের ওই চুক্তি মেনে চলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India Pakistan Delhi পাকিস্তান
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE