গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে দিদির দলের রণং দেহি রূপ খুশির হাওয়া এনে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর শিবিরে। কেননা, প্রধানমন্ত্রীকে বাঁচাতে দলের সাংসদের বহিষ্কারের পরের দিনটিও তৃণমূল কাটিয়েছে রাজ্যসভায় কংগ্রেসকে নিশানা করেই। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অঙ্ক কষছেন, তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে দূরত্ব যত বাড়বে ততই ফায়দা তাঁদের।
কপ্টার কাণ্ডে গত কাল গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে আক্রমণে নামায় রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারি ২৫৫ ধারায় তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়কে গোটা দিনের জন্য বহিষ্কার করেছিলেন। তার পরে অরুণ জেটলি দাবি তোলেন, সুখেন্দুবাবুর মতোই ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখানো কংগ্রেসিদেরও একই সঙ্গে বহিষ্কার করা হোক। কিন্তু ২৫৫ ধারায় কেবল এক জনকেই বহিষ্কার করা যায় বলে রুলিং দেন আনসারি।
আজ পাল্টা আক্রমণে আনসারির ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। সকালে অধিবেশন শুরু হতেই তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন দাবি করেন, ‘‘২০১০-এ মহিলা বিল নিয়ে বির্তকে তিন দলের ছ’জন সাংসদকে ২৫৫ ধারায় গোটা অধিবেশনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। সুতরাং ২৫৫ ধারায় একাধিক সাংসদকে বহিষ্কারের নজির রয়েছে।’’ কেন গত কাল রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ওই মন্তব্য করেছিলেন, তা-ও জানতে চায় তৃণমূল শিবির। তাঁদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে— এই অভিযোগও আনে তৃণমূল। সেই যুক্তিতে সমর্থন জানায় বিজেপি।
ঘটনাচক্রে আজ অধিবেশনের শুরু থেকেই অনুপস্থিত ছিলেন আনসারি। পরিবর্তে সভা চালানোর দায়িত্বে ছিলেন ডেপুটি চেয়ারম্যান পি জে কুরিয়েন। এ বিষয়ে কিছু করার অক্ষমতা প্রকাশ করে তিনি জানান, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চেয়ারম্যান। ফলে ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে এ ক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই। এর পর বৈষম্যের প্রতিবাদে গোটা দিনের জন্য রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউট করেন তৃণমূল সাংসদরা। এ দিন সুখেন্দুশেখর রায় জানিয়েছেন, কংগ্রেস দলনেতা গুলাম নবি আজাদের বিরুদ্ধে রাজ্যসভায় আবেদন করতে চলেছেন তিনি। তৃণমূল সাংসদের অভিযোগ, অগুস্তা ওয়েস্টল্যান্ডকে ইউপিএ সরকার কালো তালিকাভুক্ত করেছিল বলে যে তথ্য দিয়েছেন আজাদ, তা সঠিক নয়।
কপ্টার কাণ্ডকে ঘিরে তৃণমূলের মতো দল তাদের কাজ সহজ করে দেওয়ায় স্বভাবতই খুশি বিজেপি শিবির। দল চাইছে অধিবেশন চলাকালীন বিতর্কটি জিইয়ে রাখতে। এক সপ্তাহ ধরে বিজেপি বিষয়টি নিয়ে সরব হলেও গত কালই প্রথম ওই কাণ্ডে গাঁধী পরিবারকে প্রকাশ্যে আক্রমণ শানায় দিদির দল। কংগ্রেস সভানেত্রী নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে দুর্নীতি প্রশ্নে তৃণমূলকে সরাসরি আক্রমণ করার পরেই গাঁধী পরিবারকেও নিশানা করার সিদ্ধান্ত নেন মমতা। তাঁর নির্দেশেই গত কাল কিছুটা স্বভাববিরুদ্ধ ভাবে গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে আক্রমণে নামেন সুখেন্দু। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিপিএম ও কংগ্রেসের জোট যদি লোকসভা ভোট পর্যন্ত টিকে যায়, তা হলে মোদী বিরোধী জোটে মমতার যোগ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। কেননা, বামেদের থেকে দুরত্ব বজায় রাখতে হবে তাঁকে। আর লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি বিরোধী জোটে তৃণমূল যোগ দিতে না পারলে জাতীয় ক্ষেত্রে ক্রমশ একা হয়ে পড়বেন মমতা। সে ক্ষেত্রে সরাসরি এনডিএ জোটে না এলেও, পরোক্ষে মমতার সমর্থন পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছে বিজেপির একাংশ।
পরিস্থিতির চাপে বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলার পক্ষপাতী তৃণমূলও। সারদা কাণ্ড তো ছিলই অনেকেই ভাবছেন, নারদ তদন্তও সিবিআইয়ের হাতে যেতে পারে। কংগ্রেসের অভিযোগ, সারদা থেকে নারদ— দুর্নীতিতে জর্জরিত তৃণমূল এখন বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁত করতে ব্যস্ত। দিল্লিতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, মমতা যত দুর্বল হবেন, ততই সুবিধা তাদের। সে ক্ষেত্রে আপদে-বিপদে রাজ্যসভায় তৃণমূলের সমর্থন পেতে সুবিধে হবে। হাত ধরার সেই ছবিটা কালই ফুটে উঠেছে কপ্টার কাণ্ডকে সামনে রেখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy