Advertisement
E-Paper

১৪ বছর আগের গুলবার্গ গণহত্যায় দোষী ২৪

চোখের সামনে দেখেছিলেন, স্বামীকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কয়েকশো উন্মত্ত জনতা। ১৪ বছর আগে। স্বামী আর ফেরেননি। শুনেছিলেন, স্বামীকে খুন করে পুড়িয়ে দিয়েছে হত্যাকারীরা। তার পর থেকে শুরু হয়েছে লড়াই। আজকের রায়ের পরেও তা থামবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন জাকিয়া জাফরি। গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যায় নিহত প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরির স্ত্রী।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০৪:১৮
পরিত্যক্ত গুলবার্গ সোসাইটির হাল এখন এমনই। ছবি: পিটিআই।

পরিত্যক্ত গুলবার্গ সোসাইটির হাল এখন এমনই। ছবি: পিটিআই।

চোখের সামনে দেখেছিলেন, স্বামীকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কয়েকশো উন্মত্ত জনতা। ১৪ বছর আগে। স্বামী আর ফেরেননি। শুনেছিলেন, স্বামীকে খুন করে পুড়িয়ে দিয়েছে হত্যাকারীরা। তার পর থেকে শুরু হয়েছে লড়াই। আজকের রায়ের পরেও তা থামবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন জাকিয়া জাফরি। গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যায় নিহত প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরির স্ত্রী।

গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যা মামলায় আজ ২৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আমদাবাদের এক আদালত। প্রমাণের অভাবে ৩৬ জনকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছে আদালত। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপি কাউন্সিলর বিপিন পটেলও। গণহত্যার সময় গুলবার্গ সোসাইটি যে এলাকায়, সেই আসার্বা এলাকার কাউন্সিলর ছিলেন বিপিন। যে ২৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের ধারা (১২০ বি) তুলে নিয়েছে আদালত। বিচারক পি বি দেশাই জানিয়েছেন, ওই ধারায় মামলা চালানোর মতো যথেষ্ট প্রমাণ নেই। দোষীদের মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ রয়েছে। সাজা ঘোষণা হবে ৬ জুন।

১৪ বছর আগে কী হয়েছিল গুলবার্গ সোসাইটিতে?

২০০২-র ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরা স্টেশনে সাবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫৮ জন করসেবকের মৃত্যুর পরেই ছড়িয়ে পড়ে হিংসা। যার আঁচ পড়ে গুজরাতের বিস্তীর্ণ অংশে। অশান্তি ছড়ায় লাগোয়া আমদাবাদেও। ২৮ ফেব্রুয়ারি উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের আবাসন গুলবার্গ সোসাইটিতে হামলা চালায় শ’চারেক জনতা। আবাসনের বাসিন্দা, কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ এহসান জাফরির কাছে প্রাণভয়ে ছুটে এসেছিলেন বাসিন্দারা। উন্মত্ত জনতাকে থামাতে এগিয়ে গিয়েছিলেন ষাটোর্ধ্ব এহসান। কিন্তু পারেননি। উল্টে অনেকের চোখের সামনেই তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় দলটা। তার পর থেকে আর খোঁজ মেলেনি তাঁর। গুলবার্গ সোসাইটির আরও ৬৮ জন সে দিন খুন হয়ে গিয়েছিলেন উন্মত্ত জনতার হাতে।

কোনও রকমে সে দিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন এহসানের স্ত্রী জাকিয়া ও ছেলে তনভির। পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই শুরু করেছেন লড়াই। স্বামীর খুনিদের বিচার চেয়ে। এ দিন আদালতের রায়ের পরে স্পষ্টতই হতাশ জাকিয়া সরাসরি বলেছেন, ‘‘এই রায়ে আমি মোটেও সন্তুষ্ট নই। ওদের সকলের শাস্তি পাওয়া উচিত। কারণ ওরা সে দিন কী করেছে, তা আমি নিজের চোখে দেখেছি।’’ একই কথা বলছেন এহসানের ছেলে তনভিরও। উচ্চতর আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়ে তনভির বলেন, ‘‘গুলবার্গ সোসাইটি তো একটা চায়ের দোকান নয়! অনেক বড় এলাকা জুড়ে ছিল আমাদের সোসাইটি। বহু মানুষ এক সঙ্গে থাকতেন। এটা বিশ্বাস করতে হবে যে মাত্র ২৪ জন সে দিন এসে অতগুলো মানুষকে খুন করে গোটা সোসাইটি ধ্বংস করে চলে গেল!’’ জাকিয়ার অভিযোগ, তাঁর স্বামী সে দিন রাজ্যের তাবড় নেতা-আমলাদের ফোন করলেও কেউই তাঁর ফোন ধরেননি।

গুলবার্গে সোসাইটির সেই সব বাড়ি আজ খণ্ডহর। প্রশাসন ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেক বড় বড় নাম জড়িত ছিল এই মামলায়। এ দিন অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন কংগ্রেস কাউন্সিলর মেঘসিংহ চৌধুরি। তবে ভিএইচপি নেতা অতুল বৈদ্যকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলা নেই। এ দিনের রায়ের পরে অনেকেই বলছেন, যে হেতু দোষীদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠে গিয়েছে, তাই তাঁদের শাস্তি কম কঠোর হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুলবার্গের এক বাসিন্দা তো বলেই ফেললেন, ‘‘৪০০ জন এসে এতগুলো লোককে খুন করে পুড়িয়ে শেষ করে দিল। আর তাতে কোনও ষড়যন্ত্র ছিল না!’’ যে ১১ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের মৃত্যুদণ্ডের জন্য আবেদন করা হবে বলে এ দিন জানিয়েছেন এই মামলার সরকারি কৌঁসুলি আর সি কোদেকর।

এ দিনের রায়ে খুশি নয় কংগ্রেস। মোদীর চোখ এখন আগামী বছর উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে। তার আগে এই রায়কে কী ভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটাই ভাবনা কংগ্রেস শিবিরের। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কথায়, ‘‘এই দাঙ্গার মূল চক্রীরা তো এখনও মুক্ত! খোলা হাওয়ায় ঘুরছেন!’’

Gulbarg Society massacre massacre
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy