Advertisement
E-Paper

বিক্রিবাটা বন্ধ, গরু-বিভ্রাট গোরক্ষপুরে

গোরক্ষপুর থেকে লখনউ যাওয়ার রাস্তায় ফৈজাবাদের কাছে আচমকা ব্রেক কষল গাড়ির চালক পাপ্পু যাদব। কয়েক ফুট সামনে ট্রাক হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়েছে। কী ব্যাপার? সামনে শুয়ে-বসে রয়েছে গরুর পাল।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৩৩
বিশ্রাম: গোরক্ষপুর থেকে লখনউয়ের পথে ২৮ নম্বর জাতীয় সড়কে গরু। —নিজস্ব চিত্র।

বিশ্রাম: গোরক্ষপুর থেকে লখনউয়ের পথে ২৮ নম্বর জাতীয় সড়কে গরু। —নিজস্ব চিত্র।

আঠাশ নম্বর জাতীয় সড়ক। গোরক্ষপুর থেকে লখনউ যাওয়ার রাস্তায় ফৈজাবাদের কাছে আচমকা ব্রেক কষল গাড়ির চালক পাপ্পু যাদব। কয়েক ফুট সামনে ট্রাক হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়েছে। কী ব্যাপার? সামনে শুয়ে-বসে রয়েছে গরুর পাল।

পুরো তিনশো কিলোমিটার রাস্তাতেই একই সমস্যা। কোথাও গরুর পাল আচমকা রাস্তার ধার থেকে গাড়ির সামনে এসে পড়ে। কোথাও তারা রাস্তা জুড়েই বসে। গাড়ির চালক পাপ্পুর অভিজ্ঞতা, গোটা উত্তরপ্রদেশেই এই হাল।

আরও পড়ুন: যোগীকে দুষে মৃত শিশুদের বাড়িতে রাহুল

নরেন্দ্র মোদী সরকারের তিন বছরে গোমাংস, গোনিধন নিয়ে কড়াকড়ি ছিলই। যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসে গরু-মোষ জবাইয়ে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। আদিত্যনাথের গোরক্ষপুরের মঠে মস্ত গোশালা। কিন্তু গরুপ্রেমী মুখ্যমন্ত্রীর নিদানে চাষি-গোয়ালাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। তাঁরা কসাইখানায় বা হাটে পশু বেচতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। গোরক্ষা বাহিনীর পিটুনির ভয়। বিজেপি-আরএসএস বাহিনীর থেকে খবর পেয়ে পুলিশও হাজির হচ্ছে। অথচ দুধ দেওয়া
বন্ধ করে দেওয়া, হাল টানতে অক্ষম গরু-বলদ বসিয়ে খাওয়ানোর সামর্থ্য নেই গরিব চাষি-গোয়ালাদের। বাধ্য হয়েই তাঁরা রাস্তায় গরু-বলদ ছেড়ে দিচ্ছেন।

এর জেরেই মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠছে জাতীয় সড়ক। বিশেষ করে রাতে। পুলিশও নাজেহাল। লখনউয়ের এক পুলিশ-কর্তা বলেন, ‘‘জুন মাসে বলরামপুরে পুলিশেরই টহলদারি জিপ একটি গরুকে বাঁচাতে গিয়ে উষা দেবী নামে এক মহিলাকে ধাক্কা মারে। বছর ষাটের ওই মহিলা ঘটনাস্থলেই মারা যান। তাঁর দুই নাতনিও আহত হয়। এখন আমাদেরও সতর্ক থাকতে হচ্ছে।’’

এই সব অনাথ গরু-বলদ খাবারের খোঁজে চাষের জমিতে ঢুকে ফসলও নষ্ট করছে। গোরক্ষপুর, ফৈজাবাদ, বস্তি, বড়াবাঁকি—সব জায়গাতেই চাষিদের সাফ কথা। নিজেদেরই পেট চলে না। তায় দেনার বোঝা। অকেজো গরু-বলদ বসিয়ে খাওয়ানো মুশকিল। এতদিন এগুলি বিক্রি করে নতুন পশু কেনার টাকা মিলত। সেই রাস্তাও বন্ধ।

সরকারি আর্থিক সমীক্ষাতেও বলা হয়েছিল, গোরক্ষায় চাষিদেরই বিপদ। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক বিকাশ রওয়ালের যুক্তি, ‘‘এ ভাবে চললে লোকে গরু-মোষ পোষাই বন্ধ করে দেবে। কারও গরু-বলদ অন্যের ফসল নষ্ট করলে গ্রামে অশান্তি ছড়াবে।
ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে না খাইয়ে গরু-বলদ মেরে ফেলবে। গোবর, গোমূত্রের গুণাগুণ নিয়ে মাতামাতি হতে পারে। কিন্তু শুধু তার জন্য কেউ গরু পোষে না।’’

চাষিদের দাবি, সরকার গোশালা তৈরি করে দায়িত্ব নিক। রাজ্যের কারামন্ত্রী জয়কুমার সিংহের ঘোষণা, ‘‘ঠিক করেছি, রাজ্যের জেলে গোশালা তৈরি হবে। জেলের বন্দিরা কাজ করবেন। গোবর সারে জৈব চাষ হবে।’’ জাতীয় ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর হিসেব, উত্তরপ্রদেশের জেলে পরিকাঠামোয় তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি বন্দি রয়েছে। কর্মী রয়েছে প্রয়োজনের তিন ভাগের দু’ভাগ। গোশালা সামলাবে কারা?

রাওয়লের সতর্কবার্তা, ‘‘স্বাস্থ্য-শিক্ষা ছেড়ে গোশালাতেই অর্থ ব্যয় হলে আরও সরকারি হাসপাতালে গোরক্ষপুরের শিশুমৃত্যুর পুনরাবৃত্তি দেখব।’’

Gorakhpur Cow slaughtering গোরক্ষপুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy