Advertisement
E-Paper

হ্যাকার-দাপটে সাইবার সুরক্ষা এখনও শিশুই

মেঘের আড়াল থেকে বাণ হেনেই মেঘনাদ হয়ে উঠেছিল রাবণ-পুত্র ইন্দ্রজিৎ। আধুনিক প্রযুক্তি-বিশ্বে সেই ভূমিকা নিয়েছে হ্যাকারেরা। কখন, কী ভাবে হ্যাকার-হানা হবে, বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারেরা এখনও তা বুঝে উঠতে পারছেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪৪

মেঘের আড়াল থেকে বাণ হেনেই মেঘনাদ হয়ে উঠেছিল রাবণ-পুত্র ইন্দ্রজিৎ। আধুনিক প্রযুক্তি-বিশ্বে সেই ভূমিকা নিয়েছে হ্যাকারেরা। কখন, কী ভাবে হ্যাকার-হানা হবে, বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারেরা এখনও তা বুঝে উঠতে পারছেন না। সাইবার প্রযুক্তি নিয়ে শুক্রবার বণিকসভা ‘অ্যাসোচ্যাম’ আয়োজিত আলোচনাসভায় এই সমস্যার কথা জানান বিশেষজ্ঞেরা।

কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব অ্যাডভান্সড কম্পিউটিং’ (সিড্যাক)-এ ডিরেক্টর জেনারেল রজত মুনা-র মতে, হ্যাকিংয়ের কোনও নির্দিষ্ট কাঠামো নেই। তার ফলেই সমস্যা বাড়ছে।

এই অজানা পথে হামলা প্রসঙ্গে আমেরিকার একটি ঘটনার কথা শোনান বিশেষজ্ঞেরা। তাঁরা জানান, একটি মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা সাইবার সুরক্ষা-বলয় বাজারে ছেড়েছিল। কোনও হ্যাকার সেই সুরক্ষা-জাল ছিঁড়তে পারলে আর্থিক পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু ইনামের লোভেও সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। প্রথম সারির সংস্থাগুলি তাই সেই সুরক্ষা-বলয় কিনতে হামলে পড়ে। হুহু করে আয় বেড়ে যায় নির্মাতা সংস্থার। প্রায় ৫০০ দিন পরে ওই সুরক্ষা-বলয় ব্যবহারকারী একটি সংস্থা জানতে পারে, ২০০ দিন ধরে সুরক্ষা-জাল ছিঁড়ে তাদের সার্ভারে ঘাঁটি গেড়েছে হ্যাকারেরা! ‘‘সেই হ্যাকারদের পরিচয় জানা যায়নি। কী ভাবে তারা সুরক্ষা-বলয় ভেঙেছিল, তা খুঁজতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল,’’ বললেন এক বিশেষজ্ঞ।

অ্যাসোচ্যামের সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান অমিতকুমার দেবের মতে, হ্যাকিং এবং সাইবার নিরাপত্তা অনেকটা লাগাতার চলা যুদ্ধের মতো। তাতে কখনও হ্যাকারেরা জিতবে, কখনও পেশাদার ইঞ্জিনিয়ারেরা। ‘‘এই যুদ্ধটা শেষ হওয়ার নয়। কারণ, সাইবার হানাদারেরা প্রযুক্তির জ্ঞানে কম যায় না,’’ বলছেন অমিতবাবু।

সাইবার নিরাপত্তার এই সমস্যা পশ্চিমবঙ্গেও কিছু কম নয়। গত কয়েক বছরে সেক্টর ফাইভের অনেক সংস্থায় হ্যাকিং, তথ্য চুরি ও জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি সেক্টর ফাইভে একটি আন্তর্জাতিক সাইবার জালিয়াতি চক্র ধরেছে পুলিশ। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এই ধরনের অপরাধের কথা মাথায় রেখেই রাজ্যে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে উৎকর্ষ কেন্দ্র গড়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, আমজনতার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক হওয়াটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তাতে ব্যক্তিগত জীবন গোপন রাখতে পারবেন তাঁরা। ব্যাঙ্ক জালিয়াতি-সহ আর্থিক অপরাধের হাত থেকেও নিস্তার পাবেন। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় সাইবার হানা হলে বিপদ ও আর্থিক ক্ষতি হয় অনেক বেশি।

কিছু সাইবার-বিশেষজ্ঞ জানান, এই ধরনের বিপদে সুরক্ষা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চালু হচ্ছে সাইবার বিমা। বিমা উপদেষ্টা সংস্থা ‘আইডিয়াল ইনসিওরেন্স ব্রোকারস’-এর চিফ অপারেশনস অফিসার রাহুল মোহতা জানাচ্ছেন, হ্যাকার-দাপটে ইন্টারনেট এবং ক্লাউ়ড ব্যবহারকারী বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির ঝুঁকি বেড়েছে। তাই সাইবার বিমা নিয়ে এসেছে দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে গড়ে ওঠা বিমা সংস্থাগুলি। বাণিজ্যিক সংস্থায় হ্যাকার হানা হলে সুরাহার বন্দোবস্ত থাকছে তাতে।

Cyber security Hackers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy