Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আন্দামানের কাছাকাছি চিনা জাহাজ, চিন্তা বাড়ছে দিল্লির

প্রতি তিন মাসে অন্তত এক বার বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগরে নজরদারি চালাতে আসছে চিনের নৌবাহিনী। প্রতি বারই পাঠানো হচ্ছে নতুন নতুন যুদ্ধজাহাজ। অন্তত তিনটি। সাবমেরিন নিয়েও চলছে টহলদারি।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:১১
Share: Save:

প্রতি তিন মাসে অন্তত এক বার বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগরে নজরদারি চালাতে আসছে চিনের নৌবাহিনী। প্রতি বারই পাঠানো হচ্ছে নতুন নতুন যুদ্ধজাহাজ। অন্তত তিনটি। সাবমেরিন নিয়েও চলছে টহলদারি। এমনই তিনটি যুদ্ধজাহাজ ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপের মাঝ দিয়ে গিয়ে পৌঁছেছে দক্ষিণ চিন সাগরের হাইনান নৌঘাঁটিতে। সেনাবাহিনী সূত্রেই এ খবর জানা গিয়েছে।

ভারত মহাসাগরে আন্দামান সীমান্তের খুব কাছে এত ঘন ঘন চিনা নৌবাহিনীর আগমনে চিন্তিত নয়াদিল্লি। আন্দামানে তিন বাহিনীর যৌথ কম্যান্ডের সেনা কর্তারা বলছেন, ‘‘এ তল্লাটে চিনা যুদ্ধজাহাজগুলির গতিবিধি ভরপুর প্রস্তুতি নিয়ে সব সময় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। চিনা জাহাজ দেখলেই তার কাছে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয় আমাদের উপস্থিতির কথা।’’ তবে শুধু চিনের যুদ্ধজাহাজ নয়, যে কোনও দেশের জাহাজ দেখলেই একই পন্থা নেওয়া হয়। সাগরে যোগাযোগের মাধ্যম চ্যানেল-১৬-এর মারফত শুভেচ্ছা বিনিময়ও হয়।

শুভেচ্ছা বিনিময় হলেও আন্দামান সাগর বা বঙ্গোপসাগরে চিনের ঘন ঘন উপস্থিতি স্বস্তিদায়ক নয় বলেই মানছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। আন্দামান যৌথ কম্যান্ডের এক শীর্ষ কর্তা জানান, চিন আগে কখনও নিজেদের জলসীমার বাইরে বিশেষ যুদ্ধজাহাজ পাঠাত না। কিন্তু ২০০৮-এ এডেন উপসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য সীমা ছাড়ালে চিনের নৌবাহিনীও সেখানে যাতায়াত শুরু করে। কারণ, চিনের জ্বালানির ৭৫% এই অঞ্চল দিয়েই পার হয়।

নৌবাহিনীর এক কর্তা জানান, সোমালিয়ার জলদস্যুদের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে নৌবাহিনী একটি করে জাহাজ নিয়ে এডেন উপসাগরে আসে। কিন্তু চিন আসে অন্তত তিনটি জাহাজ নিয়ে। ভারতীয় নৌবাহিনীর এক যুদ্ধজাহাজের ক্যাপ্টেন বলেন, ‘‘সোমালিয়ার জলদস্যুদের মোকাবিলার জন্য এত বড় ব্যবস্থার দরকার নেই। আসল উদ্দেশ্য এই তল্লাটের সাগরের সঙ্গে নিজের জাহাজ ও কম্যান্ডার-ক্যাপ্টেনদের পরিচিত করার সুযোগ তৈরি করা।’’

কী ভাবে? এক সেনা অফিসার জানান, চিনের যুদ্ধজাহাজগুলি কখনও সোমালিয়ার দস্যুদের মোকাবিলা করেই ফেরে না। যখন রওনা হয় তখন তারা দক্ষিণ চিন সাগর, আন্দামান সাগর, বঙ্গোপসাগর হয়ে ভারত মহাসাগরে পৌঁছয়। তার পর এডেন উপসাগর থেকে ভূমধ্য সাগর, আরব সাগর হয়ে আটলান্টিকের পানামা পর্যন্ত যায়। ফেরে একই রাস্তার।

এই পথে ভারত সীমান্তের কাছে চলে আসে চিনা জাহাজগুলি। এক নৌসেনা কম্যান্ডার জানান, আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের দু’টি রাস্তা রয়েছে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মাঝখান দিয়ে যে পথ তাকে বলা হয় ১০ ডিগ্রি চ্যানেল। আর গ্রেট নিকোবর দ্বীপের দক্ষিণে যে পথ, তাকে বলা হয় ৬ ডিগ্রি চ্যানেল। এই দু’টি পথ থেকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ মাত্র ৩০ থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে। আগে চিনা যুদ্ধজাহাজ যেত ৬ ডিগ্রি চ্যানেল দিয়ে। এখন চিনের যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করছে ১০ ডিগ্রি চ্যানেল। যা চিন্তা আরও বাড়িয়েছে বলে জানাচ্ছেন সেনা কর্তারা।

কিন্তু আন্তর্জাতিক জলসীমায় জাহাজ চলাচলে বাধা দেওয়া আইনবিরুদ্ধ বলেই ভারতীয় নৌবাহিনীর আক্রমণাত্মক হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানাচ্ছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি কলকাতার ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ এবং যৌথ কম্যান্ডের আয়োজনে এই সংক্রান্ত আলোচনায় অধ্যাপক সি রাজামোহন বলেন, ‘‘আমাদের পছন্দ না হলেও কিছু করার নেই। চিন জাহাজ পাঠাবেই। তার মোকাবিলা করতে হবে।’’ নৌবাহিনীর ওয়েস্টার্ন কম্যান্ডের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল শেখর সিনহার বক্তব্য, ‘‘চিনকে বাদ দিয়ে কিছু হবে না। এই বাস্তবটা মেনেই প্রস্তুতি নিতে হবে।’’

সেনা কর্তারা অবশ্য প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন। এক কর্তা বলেন, ‘‘চিনের যাতায়াত এই চত্বরে যেমন বেড়েছে, আমাদের যুদ্ধজাহাজও তেমনই দক্ষিণ চিন সাগরে নিয়মিত যাচ্ছে। আন্দামান সাগরে প্রতিদিন অন্তত ৪টি নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর জাহাজ নজরদারি চালায়। পাশাপাশি আন্দামানেই যাতে ২০টির বেশি যুদ্ধজাহাজ সর্বক্ষণের জন্য রাখা যায় সেই প্রস্তুতিও রাখা হয়েছে।’’

ফলে মাঝ সাগরে লড়াই সেয়ানে সেয়ানে। একে অপরকে শক্তি দেখিয়ে ক্রমেই তপ্ত হচ্ছে ভারত মহাসাগর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

national news china ship andaman delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE