Advertisement
E-Paper

জল ছিটিয়ে দূষণ ঠেকানোর মরিয়া চেষ্টা ‘গ্যাস চেম্বার’ দিল্লির

দূষণের দখলে দিল্লি। আজ পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও, গত দু’দিন গোটা দিল্লির যা পরিস্থিতি ছিল তাতে ১৯৫২ সালের লন্ডনের গ্যাস চেম্বার পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা টানতে শুরু করেছেন পরিবেশবিদরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৫
মুখ ঢেকে যায় দূষণে। সোমবার গুরুগ্রামে। ছবি: পিটিআই।

মুখ ঢেকে যায় দূষণে। সোমবার গুরুগ্রামে। ছবি: পিটিআই।

দূষণের দখলে দিল্লি। আজ পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও, গত দু’দিন গোটা দিল্লির যা পরিস্থিতি ছিল তাতে ১৯৫২ সালের লন্ডনের গ্যাস চেম্বার পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা টানতে শুরু করেছেন পরিবেশবিদরা। বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানিয়ে শীর্ষ আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুন্যাল (এনজিটি) ইতিমধ্যেই দিল্লি সরকারের সমালোচনা করে অবিলম্বে একাধিক পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত দু’দিনে দিল্লির বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটারে প্রায় ৯০০ মাইক্রোগ্রামে পৌঁছে যাওয়ায় প্রবল অস্বস্তিতে দিল্লি সরকার ও কেন্দ্র উভয় পক্ষই। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পদক্ষেপ যে করা হচ্ছে না, তা-ও নয়। ধুলোর উপদ্রব কমাতে ফি দিন রাস্তা ও গাছে ছেটানো শুরু হয়েছে জল। হেলিকপ্টার ছেটাবে আকাশ থেকে জল। চেষ্টা হচ্ছে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোরও। রাস্তায় ধুলো কমাতে ব্যবহার হবে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। ঘরবাড়ি সংস্কার বা বানানো বন্ধ থাকবে আগামী পাঁচ দিন। নিষিদ্ধ হচ্ছে বাজিপটকা ফাটানো। শুরু হবে ১৫ বছরের পুরনো গাড়ির রেজিস্ট্রেশন বাতিলের কাজ।

দূষণের কারণে দিল্লি সরকারের উপরে আজ রীতিমতো খড়্গহস্ত হয় এনজিটি। তাদের পক্ষ থেকে মূলত পাঁচটি প্রশ্ন রাখা হয়েছে অরবিন্দ কেজরীবালের সরকারের কাছে।

• নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা আবাসন শিল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? ২০১৫ সালেই প্রকাশ্যে আর্বজনা জ্বালানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল এনজিটি। কিন্তু তা সত্ত্বেও যারা এই নিয়ম ভেঙেছে তাদের বিরুদ্ধেই বা কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি দিল্লি সরকার।

• গত কালই দূষণের অবস্থা দেখে তিন দিনের জন্য স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কেজরীবাল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্কুলের ভিতর ও বাইরের পরিস্থিতি কি খতিয়ে দেখা হয়েছিল? স্কুলগুলিতে যে বায়ুশোধক (এয়ার পিউরিফ্যায়ার) যন্ত্র রয়েছে, সেগুলি কেন বন্ধ রাখা হল?

• দূষণে চারদিক ছেয়ে যাওয়ার পরে যে ভাবে দিল্লি সরকার গাছে ও রাস্তায় জল ছেটানো শুরু করে তারও সমালোচনা করে এনজিটি জানতে চায়, এই কাজগুলি আগে কেন করা হল না? পাশাপাশি হেলিকপ্টার কেবল ভিআইপি-দের জন্য রেখে না দিয়ে তা দিয়ে কেন জল ছেটানো হচ্ছে না?

• খেতের আগাছা ও শুকনো খড় পুড়িয়ে ফেলার প্রশ্নে দিল্লি সরকার কি পঞ্জাব, হরিয়ানার মতো লাগোয়া রাজ্যগুলির সঙ্গে কোনও বৈঠক করেছে? চাষিদের যাতে খড় পোড়াতে না হয়, তার জন্য তাঁদের যন্ত্র দিয়ে সাহায্য করার কাজ কতটা এগিয়েছে তাও জানতে চাওয়া হয়। এরও কোনও উত্তর দিতে পারেনি কেজরীবালের সরকার।

• প্রতি বার কেন দূষণ বেড়ে গেলে জোড়-বিজোড় নীতি চালু করা হয়? এর জবাবও মেলেনি কেজরীবাল সরকারের কাছ থেকে।

বায়ু দূষণ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই কেজরীবাল-সহ আপ নেতারা পঞ্জাব ও হরিয়ানার খড় পোড়ানোকেই দুষছিলেন। এ নিয়ে কেন্দ্রের উদাসীন মনোভাবকেও দায়ী করছিলেন কেজরীবালরা। আজ দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে আজ পার্শ্ববর্তী রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী অনিল দাভে পাল্টা অভিযোগে জানান, ‘‘দিল্লির দূষণের জন্য ৮০ শতাংশ দায়ী রাজধানীর ভুল আবর্জনা সাফাই পদ্ধতি ও শুকনো পাতা জ্বালানো। বাকি দূষণের জন্য দায়ী অন্য রাজ্য।’’

দায় ঠেলার এই চাপানউতোরের মধ্যেই চিকিৎসকরা বলছেন, এই দূষণের ফলে শুধু ফুসফুসজনিত সমস্যাই শুধু বাড়বে না এর ফলে গড়ে ৩০ শতাংশ কমে যাবে যৌন জীবন। দিল্লির এক হাসপাতালের ফার্টিলিটি এক্সপার্ট সাগরিক অগ্রবাল বলেন, ‘‘বাতাসে এমন অনেক ভারী পদার্থ থাকে যা সরাসরি দেহের হরমোনের উপর প্রভাব ফেলে। যার প্রভাবে হরমোন ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। যা শুক্রাণু সংখ্যার পাশাপাশি যৌন ইচ্ছাকেও কমিয়ে দেয়। ভারতে এই কারণে ১৫ শতাংশ পুরুষের মধ্যে বন্ধ্যত্ব দেখা যাচ্ছে।’’

Delhi smog air pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy