Advertisement
E-Paper

গোলমেলে গপ্পো, এমনকী প্রধানমন্ত্রীও যেন কিছুটা বেসুরো গাইছেন!

৮ নভেম্বর নোট বাতিলের সময়ে মোদী বলেছিলেন, এতে মাথায় হাত পড়বে জাল নোট আর কালো টাকার কারবারিদের। এই দু’য়ে টান পড়লে, জঙ্গিদেরও ভাঁড়ার খালি। এ তো তবে এক ঢিলে তিন পাখি!

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৭

৮ নভেম্বর নোট বাতিলের সময়ে মোদী বলেছিলেন, এতে মাথায় হাত পড়বে জাল নোট আর কালো টাকার কারবারিদের। এই দু’য়ে টান পড়লে, জঙ্গিদেরও ভাঁড়ার খালি। এ তো তবে এক ঢিলে তিন পাখি!

এক মাস পরে অর্থ মন্ত্রকের আমলা, অর্থমন্ত্রী, এমনকী প্রধানমন্ত্রীও যেন কিছুটা বেসুরো গাইছেন।

জাল নোটের দাপট কতটা কমবে বা কালো টাকা কতটা ধরা পড়বে, তা নিয়েই বিস্তর ধোঁয়াশা।

• কেন?

কেন্দ্রের দাবি ছিল, জাল নোট আর নগদ কালো টাকার বেশিটাই পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে। সেই অঙ্ক নাকি ৫ লক্ষ কোটির কাছাকাছি। এর মধ্যে অন্তত ৩-৪ লক্ষ কোটি আর ব্যাঙ্কে ফিরবে না বলে নিশ্চিত ছিল তারা। কিন্তু তেমন হচ্ছে কোথায়?

• সব টাকাই ফিরছে না কি?

নোট নাকচের সময়ে দেশে নগদ ছিল মোট ১৭ লক্ষ ৫৪ হাজার কোটি টাকার। এর অন্তত ৮৪% (১৪ লক্ষ ৭৩ হাজার কোটি ) ছিল পুরনো পাঁচশো ও হাজারের নোটে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর আর গাঁধী জানিয়েছেন, ৭ ডিসেম্বরের মধ্যেই ওই দুই বাতিল নোটে জমা পড়েছে ১১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং বাজারে পড়ে আর ৩ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি। জমার শেষ তারিখ ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে আরও বাতিল নোট জমা পড়বে। তা হলে ৩-৪ লক্ষ কোটি টাকা না ফেরার দাবি টিকল? হালে রাজস্বসচিব হাসমুখ আঢ়িয়া বলেছেন, বাতিল নোটের সবটাই নাকি ফিরে আসবে!

• কিন্তু ব্যাঙ্কে না-ফেরার সঙ্গে টাকা জাল বা কালো হওয়ার সম্পর্ক কী?

যে নোট জাল, তা জেনেশুনে কারও ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার কথা নয়। কারণ, সেই টাকা সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট করে দেবে ব্যাঙ্ক। এক সঙ্গে বেশি সংখ্যায় নিয়ে গেলে, পুলিশের ডাক পড়বে।

• আর কালো টাকা?

কর দিলে টাকা সাদা, নইলে কালো। কারও কাছে কালো টাকা থাকা মানে তাতে তিনি কর দেননি। এখন ব্যাঙ্কে তা নিয়ে গেলে, আয়কর দফতর টানাটানি করবে। নজর রাখবে ভবিষ্যতেও। কেন্দ্রের ধারণা ছিল, এই ভয়ে অনেকে কালো টাকা নিয়ে ব্যাঙ্কের চৌকাঠ মাড়াবেন না।

• সব টাকা ফেলে দেবেন?

নিশ্চয়ই না। ঘুরপথে তা সাদা করার চেষ্টা হবেই। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, ব্যাঙ্কে জমা পড়া মানেই যে সেই টাকা সাদা, তা নয়। তা ছাড়া, কালো টাকা সাদা করার চেষ্টা যে হচ্ছে, তা তো বিভিন্ন ঘটনা থেকেই স্পষ্ট। যেমন, অভিযোগ উঠছে, অনেকে টাকা সাদা করতে তা গরিবের জনধন অ্যাকাউন্টে জমা করছেন।

• সেই কালো টাকা কি আর ধরা পড়বেই না?

না, তা নয়। কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে জনধন অ্যাকাউন্টে কড়া নজরদারির কথা বলেছে। চোখ না কি রাখা হচ্ছে সমস্ত সন্দেহজনক লেনদেনে। কিন্তু তাতে সাফল্য কতটা মিলবে, বলা শক্ত। তবে কালো টাকা ব্যাঙ্কে ফিরবেই না, এই ভবিষ্যৎবাণী কিন্তু মেলেনি।

• আর কেউ যদি নিজেই কালো টাকার কথা জানান? যেমনটা আগেও একাধিক বার হয়েছে?

ঠিক কথা। হালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা স্বেচ্ছা আয় ঘোষণা প্রকল্পে ৪৫% কর-জরিমানা মিটিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। জমা পড়েছিল প্রায় ৬৫ হাজার কোটি। তার শেষে সরকার বলেছিল, যাঁরা এই সুযোগ নিলেন না, তাঁদের ফল ভুগতে হবে। তার পরেই নোট বাতিল।

২৮ নভেম্বর ফের টাকা সাদা করার জানলা খুলে দেওয়া হল! বলা হল, বাতিল নোট জমার সময়েই যদি কেউ তা কালো টাকা বলে ঘোষণা করেন, তবে আয়ের উৎস জানতে চাওয়া হবে না। কিন্তু কর, জরিমানা ও সারচার্জ হিসেবে গুনতে হবে ৫০%। যার মধ্যে ১০% সারচার্জের নাম আবার প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ সেস। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন— (১) এ ধরনের প্রকল্পে তো লোকে কালো টাকা জমা দেবেই। তা হলে ৩-৪ লক্ষ কোটি না ফেরার কথা কেন্দ্র বলল কেন?

(২) এমন প্রকল্প ঘোষণাই যদি লক্ষ্য হয়, তবে তা ধীরেসুস্থে করা যেত। আমজনতার হয়রানির আদৌ দরকার ছিল কি? তবে হ্যাঁ, ৩০ ডিসেম্বরের পরে পুরনো পাঁচশো ও হাজারের নোট আর না-চলায় তা জমা দিতেই হবে। পরে সাদা করার সুযোগ আর মিলবে না।

• তা হলে কেন্দ্র এমন করল কেন?

অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাও মানছেন, এ ছাড়া উপায় ছিল না। কেন্দ্র বুঝতে পারছিল, আইন ফাঁকি দিয়ে টাকা সাদা করার চেষ্টা চলছে। অনেক ক্ষেত্রে তা হচ্ছেও। কখনও আঙুলে কালি, কখনও সরাসরি নোট বদল বন্ধ করে তা বন্ধের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তাতেও বিস্তর ফাঁকফোকর রয়ে যাচ্ছিল। যেমন, জনধন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা।

বিশেষজ্ঞদের অনেকের প্রশ্ন, কেউ দাবি করতেই পারেন যে, হাতে থাকা নগদ টাকা তাঁর আয়ের। তিনি আগেই কর মিটিয়েছেন। কিংবা ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার পরে চলতি বছরের আয়ের অংশ হিসেবে দেখিয়ে তা মেটাবেন। সে ক্ষেত্রে বড়জোর ৩০% কর দিয়ে পার পাবেন তিনি। তা হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলা প্রকল্পে ৪৫% গোনার যৌক্তিকতা থাকবে কী ভাবে?

• নোট বদলে কালো টাকা ধরার কৌশল যে তেমন কাজে লাগবে না, সরকার কি আগে তা বোঝেনি?

উত্তর জানা নেই। তবে এই এক মাসে কেন্দ্র যে ভাবে ক্রমাগত বয়ান বদলেছে, তাতে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

*

আগেকার দিনে কালো টাকা তোষকের নীচে জমা রাখার কথা শোনা যেত। এখন থাকে রিয়েল এস্টেট, সোনার বার, গয়না বা শেয়ারে। কালো টাকা তৈরি হওয়া আটকানো যেমন কঠিন, তেমনই তাকে চিহ্নিত করা অারও শক্ত।

পি চিদম্বরম।প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী

*

ব্যাঙ্কে জমা পড়লেই কালো টাকার রং সাদা হয় না। তার উপর যে কর ও জরিমানা মেটানোর ছিল, তা দিতেই হবে। ব্যাঙ্কে জমা পড়া টাকা আতসকাচের নীচে ফেলে দেখা হবে যে, আগে তার উপর কর আদায় হয়েছে কি না।

অরুণ জেটলি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী

Demonetisation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy