Advertisement
১৯ মে ২০২৪

পাঁচ-পাঁচ নয়, দুর্গার হাত এখানে আট-দুই

একান্নবর্তী উৎসবের টান প্রবাসেও অক্ষুন্ন। কর্মব্যস্ত রাজধানীতেও শিকড়ের খোঁজে বাঙালিরা মাতেন পারিবারিক দুর্গাপুজোয়।

চিত্তরঞ্জন পার্কের গুহরায় পরিবারের প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।

চিত্তরঞ্জন পার্কের গুহরায় পরিবারের প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।

অপরাজিতা মৈত্র
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০৬
Share: Save:

একান্নবর্তী উৎসবের টান প্রবাসেও অক্ষুন্ন। কর্মব্যস্ত রাজধানীতেও শিকড়ের খোঁজে বাঙালিরা মাতেন পারিবারিক দুর্গাপুজোয়। তবে পারিবারিক পুজো বলতেই চালচিত্র জুড়ে ভেসে ওঠে ধূসর এক ইতিহাসের ছবি। দিল্লিতে কিন্তু রয়েছে তার বিপরীত ছবিটাও।

যেমন দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের বাড়ির পুজো বলে পরিচিত পুজোগুলি। বয়সে সেগুলি নবীন হলেও আন্তরিকতায় কোনও খামতি নেই।

এ রকমই দু’টি পুজো যেন এ বার বাড়ির পুজোর থিম এঁকে দিয়েছে। যার মধ্যে প্রথমটি চিত্তরঞ্জন পার্কের বি ব্লকের শান্তনু গুহরায়ের বাড়ির পুজো। মুড়ি, মুড়কির বৈকালিক ভোগ দিয়ে শুরু হওয়া এই পুজো এ বছর ১১-তে পড়ল। পুজো শুরুর কারণ হিসাবে শান্তনু গুহরায় বলেন, “কোনও দিনই বাড়িতে পুজোর চল ছিল না। আমার মা মারা যাওয়ার পর আমরা সবাই তাঁর অভাব বোধ করতে থাকি। সেই জায়গা থেকেই হঠাৎ বাড়িতে পুজো করার ইচ্ছে হয়।’’ বাড়ির প্রতিমা বলতে সাধারণত একচালার শোলা বা ডাকের সাজের ছবি ভেসে উঠলেও এই পুজোর প্রতিমা থিম অনুসারে হয়। শান্তনুবাবুর কথায়, “প্রথম বছর আর গত বছর সাবেকি প্রতিমা হলেও এ বছর আমরা থিমের পুজোয় ফিরে গিয়েছি।’’ দিল্লির বেশির ভাগ পুজোই সাবেকি হয়। তা ছাড়া থিমের পুজোয় প্রতিমার অভিনবত্ব বেশি থাকে বলেই তাঁরা থিমের পুজো করেন বলেও জানান শান্তনুবাবু।

গুহরায় পরিবারের এ বছরের প্রতিমার অভিনবত্ব কী?

অভিনবিত্বটি হল দুর্গার হাতে। এ বার দুর্গার আট হাত এক দিকে আর বাকি দুই হাত অন্য দিকে। অসুরের ক্ষেত্রেও আছে বৈচিত্র। মানুষরূপী অসুরের মধ্যে থেকে আরও কিছু অসুরের অংশ বেরোচ্ছে। থিমের বিষয়ে বলতে গিয়ে শান্তনুবাবু জানান, শিল্পী সনাতন দিন্দার তৈরি একটি পুরনো প্রতিমা থেকেই এ বারের পুজোর থিম তৈরি হয়েছে।

বাড়ির পুজো হিসেবে শুরু হলেও আজ উৎসাহ-উদ্দীপনা আর পুজোয় অংশগ্রহণের দিক দিয়ে এই পুজো পাড়ার পুজোয় পরিণত হয়েছে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব পাড়ার সবাই মিলে পুজোর চার দিন সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত লোক সমাগম হয়। এই বাড়ির পুজোর উদ্যোক্তাদের কথায়, “এখানে যে যখন ইচ্ছে এসে পুজো দিতে পারেন, ভোগ নিতে পারেন। পুজোর কোনও কিছুতে অংশগ্রহণ করতে চাইলে বা পুজোয় কিছু দিতে চাইলে সবাইকে খোলা মনে স্বাগত জানানো হয়।’’

বাঙালির পুজোয় গান-বাজনা থাকবে না, তা-ও কি হয়। গুহরায় বাড়ির পুজোতেও তাই রয়েছে গান-বাজনার আয়োজন। পুজোর সময় বন্ধুবান্ধব মিলে গানবাজনা, আড্ডায় জমে ওঠে সন্ধ্যার আসর। সঙ্গে থাকে পুরনো বাংলা সিনেমা দেখানোর ব্যবস্থা। সাদা-কালোয় উত্তম-সুচিত্রার নস্টালজিয়া।

চিত্তরঞ্জন পার্কের বি ব্লকেই হয় আর একটি বাড়ির পুজো। অনিরুদ্ধ হোমচৌধুরীর বাড়ির এই পুজো শুরু হয় ২০০৮-এ। এখানে অবশ্য প্রতিমা একচালার শোলার সাজের হয়। বাড়ির প্রবীণ সদস্য সতী হোমচৌধুরী বলেন, “২০০৮-এ হঠাৎই আমার ছেলেমেয়ের উৎসাহে পুজো শুরু হয়। প্রথমে বাড়ির কয়েক জনই এই পুজোয় অংশগ্রহণ করতেন। এখন পাড়ার সবাই সামিল হয় এই পুজোয়”।

হোমচৌধুরী পরিবারের পুজোয় মিষ্টির একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। এখানে প্রতিদিন মালপোয়া, পাটিসাপটা প্রভৃতি বাড়িতে তৈরি মিষ্টি পুজোয় দেওয়া হয়। সেই মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়াটিও যেন উৎসবের একটা অঙ্গ। অনিরুদ্ধবাবু বলেন, “আমাদের পুজোর নবপত্রিকার জন্য যে নয় রকমের গাছ লাগে তা কলকাতা থেকে আনানো হয়। কলাবৌ-কে বাড়ির মেয়ে হিসেবে দশমীর দিন বিদায় দেওয়া হয়। বাড়ির ভিতরে কলাবৌ এনে তাঁকে ঘিরে বিবাহিত মহিলারা গান গাইতে গাইতে প্রদক্ষিণ করেন। বিয়ের পর মেয়ে বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় যে সমস্ত নিয়ম পালন করা হয় এ ক্ষেত্রেও তাই করা হয়”।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Different tradition Delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE