Advertisement
E-Paper

আচ্ছা, এখানে ছাপ্পা ভোট হয় না? প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলল পুলিশ

কোনও বুথেই লাইন নেই। ভোটাররা একে একে আসছেন। নীল কালি ছোঁয়ানো আঙুল, ইভিএমের বোতামে চাপ দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। কোথাও কোনও ভিড় নেই। তাড়াহুড়ো নেই। বুথে ঢোকামাত্র ভোটারের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে গাঁদাফুলের মালা।

উজ্জ্বল চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ১৩:৪৭
নিরাপত্তার ব্যবস্থা পাকাপোক্তই। কিন্তু শিমলাকে দেখে মনে হয়, নিরাপত্তা কর্মীরা না থাকলেও ফারাক হত না পরিস্থিতিতে। —নিজস্ব চিত্র।

নিরাপত্তার ব্যবস্থা পাকাপোক্তই। কিন্তু শিমলাকে দেখে মনে হয়, নিরাপত্তা কর্মীরা না থাকলেও ফারাক হত না পরিস্থিতিতে। —নিজস্ব চিত্র।

বুথের মালায় সেজে উঠেছে শিমলা। চুম্বকে বলা যায়, পায়ে পায়ে বুথ। একটার সঙ্গে অন্যটার দূরত্ব মেরেকেটে ৩০০ মিটার। কোথাও আর একটু বেশি। সকাল থেকেই সেই সব বুথে ভোটারদের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে।

আনাগোনাই বটে। কারণ, কোনও বুথেই লাইন নেই। ভোটাররা একে একে আসছেন। নীল কালি ছোঁয়ানো আঙুল, ইভিএমের বোতামে চাপ দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। কোথাও কোনও ভিড় নেই। তাড়াহুড়ো নেই। বুথে ঢোকামাত্র ভোটারের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে গাঁদাফুলের মালা। বড়দের সঙ্গে আসা বাচ্চাদের গলাতেও। কোনও কোনও বুথে চকোলেটও দিচ্ছেন ভোটকর্মীরা।

গোটা রাজ্যে যেখানে দ্বিমুখী লড়াই, শিমলা শহরে সেখানে প্রতিযোগিতা চারমুখী। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম এবং নির্দল। বিজেপি-র সুরেশ ভরদ্বাজ, কংগ্রেসের হরভজন সিংহ ভাজ্জি, সিপিএমের সঞ্জয় চৌহান আর নির্দল হিসাবে লড়ছেন হরিশ জনার্থা। পোলিং এজেন্টরাও বুঝতে পারছেন না,কে জিতবেন। কারণ, প্রত্যেকেই নাকি ধামাকাদার ফাইট দেবেন!

নির্বাচনের দিন দেশের অন্যত্র যে চেনা ছবি ধরা পড়ে, শিমলায় তার লেশমাত্র নেই। প্রকৃতির মতোই এখানকার পরিস্থিতি এক্কেবারে ঠান্ডা। প্রায় ছুটির আমেজ গোটা শৈল শহর জুড়ে। পাকদণ্ডি বেয়ে ভোটাররা নামছেন, উঠছেন— ফুরফুরে মেজাজ। কিন্তু, নির্বাচনী উত্তাপটা তাঁদের সঙ্গে কথা বললেই টের পাওয়া যাচ্ছে। আজ তাঁদের মুখে আর মোদী, রাহুল নেই। জিএসটি, গুড়িয়াও নেই। প্রশ্ন করলে একটাই জবাব মিলছে, পছন্দের প্রার্থী জিতবেন। ভোটের দিন সকলে যেন উৎসবে মজেছেন।

আরও পড়ুন: মাইনাস ১৫তে ভোট দিচ্ছে হিমাচলের লাহৌল-স্পিতি

হোমগার্ড হেড কোয়ার্টারে সাতসকালে ভোট দিতে এসেছিলেন রবি রাই। হোটেল ব্যবসায়ী। প্রতি বার এই বুথেই ভোট দেন। কাকে ভোট দিলেন? প্রশ্ন শুনে হাসি আর ধরে না রবির মুখে। বললেন, ‘‘জাননা জরুরি হ্যাঁয়? পসন্দ কা আদমি হি জিতেগা। এখানে দিল্লি ফ্যাক্টর খুব একটা কাজ করে না, এটা মনে রাখবেন।’’ তার পর গাড়িতে উঠতে গিয়ে হাত উঁচিয়ে একটু নীচের দিকে নিজের হোটেল দেখিয়ে বললেন, ‘‘শাম কো আজাও। বাতে করেঙ্গে।’’

আরও পড়ুন: একশো পার, কর্তব্যে অবিচল প্রথম ভোটার

সেখান থেকে আরও কয়েক শো মিটার চড়াই পেরিয়ে জাখু। একটা স্কুলের ভিতর বুথ। বাইরে পোলিং এজেন্ট, ভোটাররা ইতিউতি ঘোরাফেরা করছেন। কারও মধ্যে কোনও উত্তেজনা নেই। জাখু শিমলার সবচেয়ে উঁচু জায়গা। তাই ঠান্ডাটাও বেশি। সকাল ন’টায় তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। সেই সঙ্গে হাল্কা হাওয়া। সকলে মিলে আগুন পোহাচ্ছেন। সব দলের পোলিং এজেন্ট একই আঁচে! অবিশ্বাস্য লাগছে? প্রশ্ন করলে জবাব এল বছর তেইশের তরুণী মধু ঠাকুরের কাছ থেকে। একগাল হেসে বললেন, ‘‘রাজনীতি তো থাকবেই। কিন্তু, বেঁচে থাকার লড়াইটা তো যৌথ। তাই, অবাক হবেন না।’’

শিমলা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ঢাল্লি, হালকা মেজাজেই ভোটগ্রহণ এখানেও। —নিজস্ব চিত্র।

নেমে আসা গেল আরও খানিকটা নীচে। রাস্তায় লোকজন কম। দোকানপাট খোলেনি। কিন্তু, ম্যাল রোডে এসে ছবিটা পাল্টে গেল। পর্যটকের ভিড়। মিঠে রোদ্দুর গায়ে চড়িয়ে ঘোরাফেরার ফাঁকে মোবাইলে সেলফি। দু’এক জনকে দেখা গেল, খবরের কাগজ হাতে হাঁটছেন। পড়তে পড়তেই। ম্যালে পৌছে এক বিদেশি দম্পতির সঙ্গে দেখা। ইংল্যান্ড থেকে এসেছেন। এখানকার নির্বাচনের দিনের সঙ্গে কিছুতেই নিজেদের দেশের ছবি মেলাতে পারছেন না। ‘‘মনে হচ্ছে কোনও ছুটির দিন। এত শান্ত!’’—অবাক ভাবে বললেন লয়ান কে।

তবে এই উৎসবেও মুখ ভার আব্দুল মজিতদের। ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়েছে। তাই ভোট নেই। কুলির কাজ করেন আব্দুল। বললেন, ‘‘আগের বার ভোট দিয়েছিলাম, জানেন। এ বার নাম নেই। ওদের বললাম, বলল, উঠে যাবে। কিন্তু, কোথায় আর উঠল!’’ তাঁর মতো আরও অনেকে রয়েছেন। ইউসুফ, আমজাদ, ওয়াসিম— তালিকা অনেক বড়।

রাস্তায় পুলিশ বা আধা সেনার কাউকেই দেখা গেল না। বুথের সামনেই তাদের অবস্থান। কোথাও উঁচু স্বরে কাউকে কথা বলতেই শোনা যাচ্ছে না। আচ্ছা, এখানে ছাপ্পা ভোট হয় না? বাস স্ট্যান্ডের কাছের এক বুথের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রাজ্য পুলিশের এক কর্মী প্রশ্নটা শুনে শুধু হাসলেন। ফের জিজ্ঞাসা করতে বললেন, ‘‘নেহি স্যরজি।’’

এ ছবি সত্যি-ই অন্য রকম। পাহাড়ে উত্তাপ আছে। নির্বাচনের। শীতলতা আছে। প্রকৃতির। কিন্তু, কোথাও কোনও উত্তেজনা নেই। অন্তত এই শিমলায়। বাকি হিমাচলও শোনা যাচ্ছে শান্তিতেই ভোট দিচ্ছে। দুপুর দুটো পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৫৫ শতাংশের মতো। রাজধানীর প্রদেশ কংগ্রেস দফতর প্রায় ফাঁকা। সকলে নাকি ভোট দিতে গিয়েছেন। তার পর আসবেন। বিজেপি দফতরেও হাতে গোনা কয়েক জন। শহরটায় ভোট চলছে, নাকি উৎসব! চমকে যেতেই হচ্ছে কলকাতা থেকে এসে।

Himachal Pradesh Assembly Election 2017 Shimla Free And Fair Poll শিমলা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy