Advertisement
E-Paper

কালো টাকায় ভরছে ‘ভগবানের ঝোলা’! সাদা করে দেবেন ‘তিনি’ই

কালো টাকায় দিন কে দিন আরও ধনী হয়ে উঠছেন ঈশ্বর! উত্তরোত্তর অসম্ভব দ্রুত গতিতে ফুলে-ফেঁপে উঠছে ঈশ্বরের ধন-দৌলত-সম্পদের পরিমাণ! সোনায় ভরে যাচ্ছে, ঢেকে যাচ্ছে ঈশ্বরের গা! তবে সবটাই যে ঈশ্বরের সিন্দুকে জমছে, তা নয়। রোজ সেই ঈশ্বরের ‘সেবা’ করেন যাঁরা, সেই মঠাধ্যক্ষ আর পুরোহিতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোটা অঙ্কের ‘কমিশন’ও জমা পড়ছে। নিয়মিত।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ১৬:৩৯

কালো টাকায় দিন কে দিন আরও ধনী হয়ে উঠছেন ঈশ্বর! উত্তরোত্তর অসম্ভব দ্রুত গতিতে ফুলে-ফেঁপে উঠছে ঈশ্বরের ধন-দৌলত-সম্পদের পরিমাণ! সোনায় ভরে যাচ্ছে, ঢেকে যাচ্ছে ঈশ্বরের গা! তবে সবটাই যে ঈশ্বরের সিন্দুকে জমছে, তা নয়। রোজ সেই ঈশ্বরের ‘সেবা’ করেন যাঁরা, সেই মঠাধ্যক্ষ আর পুরোহিতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোটা অঙ্কের ‘কমিশন’ও জমা পড়ছে। নিয়মিত। আর যাঁদের দান-দক্ষিণার জোরে ঈশ্বরের সমৃদ্ধির এত বাড়-বাড়ন্ত, যাকে বলে একেবারে ‘রাজার হালে’ থাকা, সেই ‘ভক্ত’রাও কিন্তু বঞ্চিত হচ্ছেন না। ঈশ্বরের হাত ঘুরে, মঠাধ্যক্ষ, পুরোহিতদের ‘প্রসাদ’ দিয়ে ওই কালো টাকাই ‘ভক্ত’দের হাতে ফিরে আসছে সাদা হয়ে! একশো শতাংশ ‘কালো’ দিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁদের হাতে গরমাগরম পৌঁছে যাচ্ছে ‘সাদা’! কালো, সে তা যতই কালো হোক, তার ‘কালো হরিণ-চোখে’ তাই খুব মজেছেন ঈশ্বররা!

এই ভাবেই চলছে তামিলনাড়ু আর কর্নাটকের মঠ, মন্দিরগুলি। বিগ্রহ আর মুদ্রার ‘কালো’ই যেখানে এই মর্ত্যের অন্যতম চালিকা-শক্তি ‘আলো’! গদির তলায় বা মাটির তলায় আর কালো টাকা লুকিয়ে রাখা সম্ভব না হলে কর্নাটক, তামিলনাড়ুর মঠ-মন্দিরগুলিতে ভক্তরা শরণাপন্ন হলেই তাঁদের কেল্লা ফতে হয়ে যায়। শুধু মঠাধ্যক্ষের কাছে গিয়ে বলতে হবে, কে কত দিতে পারবেন। টাকার অঙ্কটা যত বেশি মোটা হবে, তত তাড়াতাড়ি ভক্তদের মুশকিল আসান করে দেবেন কর্নাটক, তামিলনাড়ুর মঠ, মন্দিরগুলির অধ্যক্ষ, পুরোহিতরা। আর সেই ‘প্রার্থনা’ জানানোর জন্য যে সে পুরোহিত ধরলেও হবে না। ধরতে হবে একেবারে ‘রাজ পুরোহিত’ গোছের মঠ, মন্দিরের মাথা বা হাফ-মাথাদের!


একেই বলে পুজো!

কিন্তু ঈশ্বরের দেখাই যেখানে পান না, সেখানে কালো টাকা নেওয়ার ব্যাপারে কোন ঈশ্বরের মনে কী আছে, তা জানতে পারেন কী ভাবে ভক্তরা?

ওই যে বলে ‘ভাগ্যবানের বোঝা ভগবান বয়’! তামিলনাড়ু, কর্নাটকের মঠ, মন্দিরগুলিতেও তেমনই ভক্তের ‘বোঝা’ বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মঠাধ্যক্ষ, পুরোহিতরা তাঁদের নেকনজরে থাকা জনাকয়েক ভক্তকেই নামিয়ে দেন প্রচারে। মুখে, মুখে ফিসফাস। কানে কানে সেই প্রচারে খুব কৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, খুব বেশি কালো টাকা জমে গেলেই সেটা নিয়ে মঠ, মন্দিরে গিয়ে ‘প্রণামী’ফেলার বাক্সে ফেলে দিয়ে আসলেই ভাল! সেফ কাস্টডি! আয়কর অফিসাররা হানা দিতে পারবেন না। কালো টাকা খোয়াতে হবে না। আবোলতাবোল জায়গায় লুকিয়ে রেখে কালো টাকার গায়ে ধুলো জমানোরও প্রশ্ন নেই। আশঙ্কা থাকবে না গ্রেফতারির। যেমন ভক্তদের দেখেন, ‘প্রণামী’র বাক্সের ‘স্নেহচ্ছায়া’য় সেই ভাবেই কালো টাকাকে ঢেকে রাকবেন ঈশ্বর, পরম মমতায়! তার পর ‘প্রণামী’র বাক্সে জমা বিপুল অঙ্কের কালো টাকাকে ‘ডোনেশন’ বা ‘দান’ দেখিয়ে তোলা হবে সরকারি খাতায়। যে খাতা আবার খুব কৌশলে ‘অডিট’ও করিয়ে নেওয়া হয়! সেই টাকা আমার, আপনার বহু কষ্টার্জিত টাকার মতোই জমা পড়ে ব্যাঙ্কে। সেখানে ‘দাতা’দের নামধাম গোপন রাখা হয়। আর ‘প্রণামী’র বাক্সে জমা পড়া সেই কালো টাকাই ঈশ্বরের ধন-দৌলত বাড়িয়ে আর মঠাধ্যক্ষ, পুরোহিতদের হাতে মোটা অঙ্কের ‘কমিশন’ ধরিয়ে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ ‘সাদা’ হয়ে কয়েক মাস পর ফিরে যায় ‘দাতা’দের ঘরে। ঈশ্বরের ‘আশীর্বাদ’ নিয়ে সাদা হয়ে ফিরে আসা কালো টাকার ওপর নজরদারি চালাবে, এমন হিম্মত রয়েছে কোন আয়কর অফিসারের? আর কার ঘাড়েই বা ক’টা মাথা আছে? কারণ, নানা রকমের লাইন আর সাইডলাইন ধরে সেই কালো টাকার একটা ‘প্রসাদ’ তো নানা রঙে রঙীন হয়ে ফিরে যায় ক্ষমতাসীন ও প্রধান বিরোধী দল, রাজনীতিক, আমলা ও প্রভাবশালীদের একটা বড় অংশের হাতেও। কোনও সাম্রাজ্যই একা সামলানো যায় না। ঈশ্বরই বা কী ভাবে একা সামলাতে পারেন তাঁর সাম্রাজ্য! তাই অত যে কালো টাকা ঢুকছে বন্যার জলের মতো তাঁর ‘প্রণামী’র বাক্সে, তাকে ‘সাদা’ বানানোর জন্যেও মোতায়েন করা থাকে বিশাল ভক্ত-বাহিনী! তাঁরাই মন্দিরের ট্রাস্টি। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কিছু মাতব্বর মানুষ! কালো টাকাকে সাদা করার জন্য গ্রামাঞ্চলের কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলিকেও সামিল করা এই কর্মযজ্ঞে। সম্প্রতি সাংবাদিকরা তদন্ত করে দেখেছেন, দিনকয়েক আগে কর্নাটকের কোলারে আড়াই লাখ টাকার বান্ডিল বানিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে বিলি-বণ্টন করা হয়েছিল পাঁচ কোটি টাকারও বেশি। আর পরে সেই টাকাটাই গ্রামের মোড়ল, মাতব্বরদের, গ্রামপ্রধান, পঞ্চায়েত প্রধানদের তদারকিতে জমা পড়েছিল গ্রামীণ কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলিতে।

সংবাদ সংস্থার খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হালফিলের ঘোষণার সামান্য কয়েক দিন আগেই বেঙ্গালুরু সহ গোটা কর্নাটকের মঠ, মন্দিরগুলিতে ভক্তদের ‘প্রণামী’ জমা দেওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল! সরাসরি রাজনীতিকদের অঙ্গুলি-হেলনে চলা কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কগুলিরও মঠ, মন্দিরে ‘ডোনেশন’ দেওয়ার উৎসাহ বেড়ে গিয়েছিল দুদ্দাড়িয়ে।

তবে এটাও ঠিক, তামিনলাড়ু, কর্নাটকের সব মঠ, মন্দিরই যে এই নিয়মে চলে, তা কিন্তু নয়।

যারা চলে, তাদের ঈশ্বরের ‘প্রণামী’র বাক্সে কি এ বার কালো ছায়া পড়ল সামনের দুঃসময়ের?

আরও পড়ুন- নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারও

God Getting Richer By Black Money Hindu Temples In Karnataka Hindu Temples In Karnatak
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy