Advertisement
E-Paper

মোদীকে বিঁধে যোগীই ভরসা গোরক্ষপুরের

গোরক্ষপুর ও সংলগ্ন এলাকায় প্রতি বছরই এই সময় এনসেফ্যালাইটিস মহামারীর আকার নেয়। এ বার বিআরডি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক সপ্তাহে ৬০টিরও বেশি শিশুর মৃত্যুর পরে পুরোপুরি মাঠে নেমে পড়েছে মোদী সরকার। মোদী অনুগামীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী দফতরই গোটা বিষয়টির দেখভাল করছে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৪৪
যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: সংগৃহীত

যোগী আদিত্যনাথ। ছবি: সংগৃহীত

শুধু গোরক্ষনাথ মঠের পীঠাধীশ্বর নন। তিনি গোরক্ষপুরেরই মুকুটহীন সম্রাট।

এক সপ্তাহে ৬০টিরও বেশি শিশুর মৃত্যুর পরে গোটা দেশ ভাবছে, এ বার যোগী আদিত্যনাথ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। কিন্তু গোরক্ষপুরের মানুষের বিশ্বাস এখনও অটুট। তাঁরা মনে করেন, যোগী মহারাজই হাল ফেরাবেন
তাঁর সাম্রাজ্যের। তা সে নরেন্দ্র মোদী সরকার যতই পরিস্থিতি সামলানোর কৃতিত্ব নিতে মাঠে নেমে পড়ুক না কেন!

আরও পড়ুন: নরককুণ্ড হাসপাতাল, রোগটা সারাবে কে!

গোরক্ষপুর ও সংলগ্ন এলাকায় প্রতি বছরই এই সময় এনসেফ্যালাইটিস মহামারীর আকার নেয়। এ বার বিআরডি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক সপ্তাহে ৬০টিরও বেশি শিশুর মৃত্যুর পরে পুরোপুরি মাঠে নেমে পড়েছে মোদী সরকার। মোদী অনুগামীরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী দফতরই গোটা বিষয়টির দেখভাল করছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক দায়িত্বও নিয়ে নিয়েছে। মোদী অনুগামীরা ঠারেঠোরে বোঝাতে চাইছেন, আদিত্যনাথের এখনও মোদীর চ্যালেঞ্জার হয়ে ওঠার ঢের দেরি। তিনি আগে নিজের গোরক্ষপুরের হাল ফেরান।

হাল ফেরানো যে দরকার, তাতে অবশ্য কোনও সন্দেহ নেই। পূর্ব উত্তরপ্রদেশের রাজধানী বলা হলেও গোরক্ষপুর যেন আবর্জনার শহর! ভাঙা সড়ক, নোংরা জমা জল, কাঁচা নর্দমা— সব আছে। এই শহর এনসেফ্যালাইটিসের আঁতুড়ঘর না হলেই অবাক হওয়ার কথা। এ শহরের শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৬২। সেই ১৯৯৮ থেকে গোরক্ষপুরের সাংসদ যোগী আদিত্যনাথ। পাঁচ বার জিতেছেন। এখন তিনি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। আদিত্যনাথের আগে গোরক্ষপুরের সাংসদ ছিলেন তাঁর গুরু যোগী অবৈদ্যনাথ। তাঁরা কি শহরের জন্য কিছুই করেননি?

প্রশ্ন শুনেই রীতিমতো হিংস্র হয়ে ওঠেন আদিত্যনাথের হিন্দু যুবা বাহিনীর নেতারা। তাঁদের যুক্তি, সংসদের রেকর্ড খুলে দেখুন, যোগীজি অন্তত একশো বার লোকসভায় এনসেফ্যালাইটিসের সমস্যা নিয়ে সরব হয়েছেন। দিল্লির সরকার কিছুই করেনি। আর শহরের পরিচ্ছন্নতা? বাহিনীর এক নেতা বলেন, “মোদী তো স্বচ্ছ ভারত অভিযান শুরু করেছেন। ওঁকেই প্রশ্ন করুন, কী লাভ হচ্ছে তাতে?’’ পাশাপাশি এ কথাও বলতে ছাড়ছেন না যে, মোদী নিজেই এখন পূর্ব উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর সাংসদ। ওঁর নিজেরই তো উচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গোটা পূর্ব উত্তরপ্রদেশের চেহারা ফেরানো।

অখিলেশ যাদব-মায়াবতীরা প্রশ্ন তুলছেন, গোরক্ষপুরের এই হাল দেখেই বোঝা যায় যোগী আদিত্যনাথ মানুষের জীবনের থেকে গোরক্ষা, ধর্মীয় মেরুকরণে বেশি ব্যস্ত থাকেন।

আদিত্যনাথ অনুগামীদের পাল্টা যুক্তি, গত দু’দশকে একমাত্র রাজনাথ সিংহকে বাদ দিলে পূর্ব উত্তরপ্রদেশ থেকে তেমন কোনও গুরুত্বপূর্ণ নেতা উঠে আসেননি। মুলায়ম-মায়াবতীর জমানাতেও লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল না। সেই অবহেলারই শিকার হয়েছে গোরক্ষপুর ও সংলগ্ন এলাকা। সমাজবাদী পার্টির রাজ্য সভাপতি নরেশ উত্তমের অভিযোগ, এনসেফ্যালাইটিস মহামারীর চেহারা নেওয়ার আগেই তাঁরা রাজ্যসভায় এ প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহ হেসে গোটা বিষয়টা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ঘরোয়া আড্ডায় সপা নেতাদের মন্তব্য, সিদ্ধার্থনাথ নিজেই তথ্য দিয়ে প্রতি বছর মৃত্যুর সংখ্যা হাজির করছেন। তিনি কার হয়ে কাজ করছেন, মোদী না যোগী, সেটাই বোঝা দায়!

স্থানীয় বিজেপি নেতাদের যুক্তি, গোরক্ষপুর আর তার এনসেফ্যালাইটিসের সমস্যা যদি কেউ বোঝেন, তাঁর নাম যোগী আদিত্যনাথ। তাই সমস্যার সমাধান তাঁর পক্ষেই করা সম্ভব। এত দিন সাংসদ হয়ে পারেননি। এ বার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ঠিক পারবেন।

Gorakhpur Yogi Adityanath Narendra Modi গোরক্ষপুর যোগী আদিত্যনাথ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy