Advertisement
E-Paper

এক বেপরোয়া যুবককে ঘিরে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, প্রতিপক্ষ খোদ মোদী

ভোটের গুজরাতে অন্যতম সুপারস্টার এই বছর চব্বিশের যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে প্রথমে খুঁজে বার করতে হচ্ছে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের। তার পর, বহু ফোন ঘুরে, ধাপে ধাপে এগোতে হচ্ছে তাঁর ‘গোপন’ ডেরার দিকে।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ২০:৪৩
অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ পরিজন বা সর্বক্ষণের সঙ্গীরা ছাড়া হার্দিক পটেলের ‘আসল নম্বর’টা জানেন না কেউই। ছবি: পিটিআই।

অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ পরিজন বা সর্বক্ষণের সঙ্গীরা ছাড়া হার্দিক পটেলের ‘আসল নম্বর’টা জানেন না কেউই। ছবি: পিটিআই।

অনেকগুলো ফোন নম্বর ভেসে বেড়াচ্ছে বাজারে। কেউ বলছেন, এইটাই হার্দিক পটেলের আসল নম্বর। কেউ বলছেন, না, না, এই নম্বরে নয়, ওই নম্বরটায় ফোন করুন। ওটাই হার্দিকের ‘আসল নম্বর’।

আসলে কোনওটাই হার্দিক পটেলের ‘আসল নম্বর’ নয়। কোনও ফোনই তিনি তুলছেন না। অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ পরিজন বা সর্বক্ষণের সঙ্গীরা ছাড়া ‘আসল নম্বর’টা কেউই জানেন না। ভোটের গুজরাতে অন্যতম সুপারস্টার এই বছর চব্বিশের যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে প্রথমে খুঁজে বার করতে হচ্ছে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের। তার পর, বহু ফোন ঘুরে, ধাপে ধাপে এগোতে হচ্ছে তাঁর ‘গোপন’ ডেরার দিকে। কখন কোথায় থাকছেন হার্দিক পটেল, তার কোনও ঠিকঠিকানা নেই। একেবারে ঘনিষ্ঠ বৃত্তের লোকজন ছাড়া কারও পক্ষেই জানা সম্ভব হচ্ছে না পাটিদার আন্দোলনের তারকা নেতার অবস্থান কখন কোথায়। ঠিক যেন আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা মাওবাদী নেতা।

এর আগের দফায়, ভোট ছিল সৌরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ গুজরাতে। প্রায় রোজ ডেরা বদলে বদলে ওই সব এলাকাই চষে বেড়াচ্ছিলেন তরুণ পাটিদার নেতা। দ্বিতীয় দফায় ভোট অমদাবাদে এবং অন্যান্য অঞ্চলে।

আরও পড়ুন:

‘আমাদের জন্য নয়, ভোটের কারণেই ওরা তালাক-বিরোধী’

অমদাবাদ কাঁপিয়ে মিছিল হার্দিকের

বুধবার তাই খবর ছিল, অমদাবাদের আশেপাশেই রয়েছেন হার্দিক। তাঁর এক ঘনিষ্ঠকে ফোন করে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেল। কিন্তু ভারী গলা জানিয়ে দিল, দুপুর ১২টার পরে জানানো হবে, হার্দিক দেখা করবেন কি না। তবে ১২টার পরে ঠিক নয়, আসলে ২টো নাগাদ খবর এল, শহরের সীমানা ছাড়িয়ে শীলজ সার্কলে পৌঁছতে হবে। সেখান থেকে কোথায়? ‘‘পৌঁছে ফোন করুন।’’ কেটে গেল ফোন।

নিজের আস্তানায় বসে আনন্দবাজার ডিজিটালকে কী বললেন হার্দিক পটেল? দেখে নিন ভিডিওয়:

শুরু হল দৌড়। শীলজ সার্কলে পৌঁছে আবার ডায়াল করতে হল সেই নম্বর। নির্দেশ এল, ‘‘ইউ টার্ন নিয়ে ৫০০ মিটার পিছিয়ে আসুন। ট্রেজার এনক্লেভ নামে একটা অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। তার সামনে দাঁড়ান।।’’ আবার কেটে গেল ফোন। সে গন্তব্যে পৌঁছনোর পর জানানো হল, গ্রাউন্ড ফ্লোরের লবি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এনক্লেভের একেবারে পিছনের অংশে চলে যেতে হবে। সেখানে পৌঁছে ফের খানিক অপেক্ষা। আরও কয়েক দফা ফোনাফুনি। অবশেষে সশরীরে দেখা মিলল হার্দিকের সঙ্গীদের। বললেন, ‘‘ভাইয়ের কাছে এখন কয়েক জন গেস্ট রয়েছেন। পাঁচ-দশ মিনিট লাগবে।’’

লবির প্রান্তে ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে একফালি বারান্দা। বারান্দা পেরিয়ে আলো-আঁধারি ঘর। সেই ঘরে সোফায় গা এলিয়ে বসে রয়েছেন পাটিদার অনামত আন্দোলন সমিতির (পাস) অবিসংবাদী নেতা হার্দিক পটেল।

হার্দিককে ঘিরে যে বৃত্ত, হার্দিককে ঘিরে যে আবহ আজ গুজরাতে, তা দেখলে বিস্মিত হতে হচ্ছে, শিহরিতও হতে হচ্ছে। দোর্দণ্ডপ্রতাপ শাসক সব রকম ভাবে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে এক সদ্য যুবাকে। কিন্তু শাসকের রক্তচক্ষুকে যেন একটুও ডরান না এই তরুণ। শুধুমাত্র দুঃসাহসে ভর করেই গোটা গুজরাত জুড়ে হাজার হাজার তরুণকে তিনি জুটিয়ে নিয়েছেন নিজের চারপাশে, তাঁরাই যেন বর্ম তাঁর, আবার তিনিও যেন তাঁদের রক্ষাকর্তা। অসীম ক্ষমতাশালী প্রতিপক্ষকে হেলায় অবজ্ঞা করে চলেছেন হার্দিক প্রতিটি মুহূর্তে। আর কথায়-বার্তায়, হাবে-ভাবে সব সময় বুঝিয়ে দিচ্ছেন, পথ যে কঠিন, তা তিনি জানেন। কী ভাবে যুঝতে হয়, তাও তাঁর খুব ভাল জানা।

মণিরত্নমের ছবি ‘যুবা’র কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন হার্দিক পটেল। সে ছবিতে বেপরোয়া যুবশক্তি যে ভাবে রাজনীতির ময়দানে হাজির হয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল প্রবল প্রতাপশালী মুখ্যমন্ত্রীকে, হার্দিকও যেন অনেকটা সেই পরিস্থিতিই তৈরি করেছেন গুজরাতে। তবে ছবির সঙ্গে পার্থক্যও রয়েছে। সে ছবিতে যুবশক্তির প্রতিপক্ষ ছিলেন এক মুখ্যমন্ত্রী। গুজরাতের ময়দানে কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অপ্রসাঙ্গিক। এ ময়দানে হার্দিকের বেপরোয়া চ্যালেঞ্জটার মুখে খোদ প্রধানমন্ত্রী।

গুজরাত নির্বাচন নিয়ে সব খবর পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

Gujarat Assembly Election 2017 Gujarat Election Hardik Patel Video
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy