Advertisement
E-Paper

গেরুয়া মিছিল যতই গর্জাক, রাজকোটে অস্বস্তিতে মুখ্যমন্ত্রী

বুধবার গোটা রাজকোট শহর পরিক্রমা করল যে গেরুয়া মিছিল, তার বহর দেখার পর রাজকোট পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর আর খুব অস্বস্তিতে থাকার কথা নয়।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ২১:৪২
 হুড খোলা জিপ থেকে হাত নাড়ছেন ‘রাজকোট কা বেটা’ বিজয় রূপাণী। —নিজস্ব চিত্র।

হুড খোলা জিপ থেকে হাত নাড়ছেন ‘রাজকোট কা বেটা’ বিজয় রূপাণী। —নিজস্ব চিত্র।

ধুমধাড়াক্কা বাজনা, তুমুল স্লোগান আর সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ তথা প্রাচীন শহরটার জমজমাট বাজার আর ঘিঞ্জি গলির দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িগুলোর বারান্দা থেকে অবিরাম গোলাপের পাপড়ি বর্ষণ। এর মধ্যে দিয়েই এগোচ্ছিল গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর মিছিল। হুড খোলা জিপ থেকে হাত নাড়ছেন ‘রাজকোট কা বেটা’। কেউ এগিয়ে এসে হাত মেলাচ্ছেন, কেউ গলায় মালা পরিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন, কেউ ছুটে আসছেন মিষ্টির বাক্স হাতে নিয়ে।

বুধবার গোটা রাজকোট শহর পরিক্রমা করল যে গেরুয়া মিছিল, তার বহর দেখার পর রাজকোট পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপাণীর আর খুব অস্বস্তিতে থাকার কথা নয়। পাতিদার নেতা হার্দিক পটেল যে বিশাল জনসভা করে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর খাসতালুকে, তার তুলনায় এ দিনের মিছিলের জমায়েত কিছুই নয়। কিন্তু হার্দিকের সভায় লোক এসেছিল গোটা সৌরাষ্ট্র অঞ্চল থেকে।

বিজয় রূপাণীর মিছিল শুধু রাজকোটের লোকজনকে নিয়ে। প্রায় গোটা শহরটা ঘুরলেন রূপাণী। সঙ্গে ঘুরলেন রাজকোটের অন্য দুই আসনের বিজেপি প্রার্থীরাও। রাস্তার দু’ধার থেকে যে সাড়া মিলল, তা যদি ভোটযন্ত্রে প্রতিফলিত হয়, তা হলে পাতিদার সম্প্রদায়ের রাজধানী হিসেবে খ্যাত রাজকোটে বিজেপির দাপট বহাল থাকা অস্বাভাবিক হবে না।

কী বললেন বিজয় রূপাণীর ছেলে? দেখুন ভিডিও

কিন্তু রাজকোটে আদৌ কি স্বস্তিতে রয়েছে বিজেপি? যদি থাকে, তা হলে ফের ‘অস্মিতা’য় ফেরা কেন? গুজরাত অস্মিতা ছেড়ে এ বার আরও স্থানীয় পর্যায়ের রাজকোট অস্মিতা। বিজয় রূপাণীকে রাজকোট পশ্চিম থেকে জেতাতে রাজকোট অস্মিতাতেই সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে বিজেপি। ‘রাজকোট কা বেটা’ সম্বোধন তো রয়েছেই। তৈরি হয়েছে নতুন স্লোগানও— ‘‘রাজকোট কা নেতা, গুজরাত কা নেতা। গুজরাত কা নেতা, দেশ কা নেতা।’’ বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর রোড শো থেকে এই স্লোগানই উঠল বার বার। অস্মিত, স্থানীয় ভাবাবেগ, রাজ্য রাজনীতি, জাতীয় রাজনীতি— সব কিছুকে একাকার করে দিতে চাইলেন যেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা।

বিজেপি নেতৃত্ব স্বীকার করুন বা না করুন, লড়াই কিন্তু বেজায় কঠিন এ বার রাজকোট পশ্চিমে। রূপাণী গত বার সে আসন থেকে অনায়াসে জিতেছিলেন ঠিকই। কিন্তু সে পরিস্থিতি আলাদা ছিল। পাতিদার সম্প্রদায়ের নয়নের মণি হার্দিক পটেল তখনও কংগ্রেসের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করেননি, বিজেপিকে নির্বাচনে হারানোর ডাকও দেননি। হার্দিকের কট্টর বিজেপি বিরোধী অবস্থান এ বার পাতিদার-ভূমিতে প্রভাব কি একেবারেই ফেলবে না? স্থানীয় বিজেপি নেতারাও এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বেশ কয়েক বার করে ঢোক গিলছেন।

আরও পড়ুন: জমজমাট লড়াইয়ের গ্রাউন্ড জিরো থেকে...

আরও এক ফ্যাক্টর ইন্দ্রনীল রাজগুরু। উত্তর-পূর্ব রাজকোটের দাপুটে কংগ্রেস বিধায়ক ইন্দ্রনীল এ বার নিজের কেন্দ্র ছেড়ে দিয়ে রাজকোট পশ্চিমে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়ছেন। রাজকোট শহরের অধিকাংশ ল্যাম্পশেড এখন ইন্দ্রনীল রাজগুরুর নামাঙ্কিত ব্যাকলিট হোর্ডিংয়ের দখলে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়, জনবহুল স্থানে, তেরাস্তা-চৌরাস্তায় বিরাট বিরাট হোর্ডিং কংগ্রেস প্রার্থীর নামে। তাতে প্রতিশ্রুতিও হিমালয় প্রমাণ। এইমস-এর মতো হাসপাতাল বানিয়ে দেব, গুজরাত হাইকোর্টের রাজকোট বেঞ্চ তৈরি করব— এমন নানান অঙ্গীকার।

বুধবার গোটা রাজকোট শহর পরিক্রমা করল গেরুয়া মিছিল।

এ হেন প্রতিপক্ষকে কী করে আর হালকা ভাবে নেবেন মুখ্যমন্ত্রী? অতএব মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে বিজেপি কর্মীদের। মুখ্যমন্ত্রী রূপাণী গোটা রাজ্য ঘুরে ঘুরে প্রচার করছেন। কিন্তু ঘরের মাঠ একেবারে ফাঁকা রেখে রাজ্য রাজনীতিতে মন দেবেন, ততটা স্বস্তি নেই। তাই বাবার হয়ে প্রচারে নেমেছেন ছেলে, স্বামীর হয়ে স্ত্রী। বিজয় রূপাণীর স্ত্রী-পুত্র দরজায় দরজায় পৌঁছে যাচ্ছেন। ভোট চাইছেন মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে।

আরও পড়ুন: পিছন থেকে উঠে এসে গুজরাত ভোট জমিয়ে দিলেন রাহুল

বুধবারের মিছিলে বেশ সপ্রতিভ উপস্থিতিই দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর ছেলের। বছর কুড়ির ঝকঝকে তরুণ রুষভ রূপাণী দলের ঝান্ডা ওড়াতে ওড়াতে হাঁটছিলেন। ফলাফলের কথা জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘‘১৫০ পেরিয়ে যাবে। অমিত শাহজি যেমন বলেছেন, তেমনই হবে।’’ বাবার হয়ে তাঁকে প্রচারে নামতে হল কেন? রুষভ বললেন, ‘‘ছোট থেকেই বিজেপি দেখে বড় হয়েছি। বাবা-মা দু’জনেই দলের সঙ্গে দীর্ঘ দিন রয়েছেন। তাঁদের ছেলে হয়ে ভোটের সময় আমি প্রচারে নামব এ তো স্বাভাবিক।’’ প্রতিপক্ষের নাম ইন্দ্রনীল রাজগুরু হওয়ায় কি এ বার একটু বাড়তি চাপ? রুষভের ঝটিতি জবাব, ‘‘অন্য পক্ষকে নিয়ে কিছু বলতে পারব না। আমি আমাদের কথাটাই বলতে পারব। দেখতেই পাচ্ছেন মিছিলের চেহারাটা। যা বোঝার বুঝে নিন।’’ জয় নিয়ে তা হলে খুব আত্মবিশ্বাসী আপনি? একটুও না ভেবে পোড় খাওয়া রাজনীতিকের ঢঙে জবাব মুখ্যমন্ত্রীর ছেলের, ‘‘শুধু আমি নই, প্রত্যেকে আত্মবিশ্বাসী।’’

Gujarat Assembly Election 2017 Gujarat Election BJP Vijay Rupani CM গুজরাত নির্বাচন বিজয় রূপাণী Video
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy