Advertisement
E-Paper

কাটা হাতেই পরিবারের মুখে অন্ন জোগান যুগল

হাত নেই, তবু হিম্মত হারাননি গোড্ডার যুগল যাদব।শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে এভারেস্ট জয় করার নজির আছে, আছে ইংলিশ চ্যানেল পার করারও। যুগল যাদব ‘বিখ্যাত’ হওয়ার মতো তেমন কিছু না করলেও, ওই কাটা হাতেই কোদাল চালিয়ে নিজের অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৬ ০৩:১০
এ ভাবেই মাটি কোপান যুগল। পার্থ চক্রবর্তীর তোলা ছবি।

এ ভাবেই মাটি কোপান যুগল। পার্থ চক্রবর্তীর তোলা ছবি।

হাত নেই, তবু হিম্মত হারাননি গোড্ডার যুগল যাদব।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে এভারেস্ট জয় করার নজির আছে, আছে ইংলিশ চ্যানেল পার করারও। যুগল যাদব ‘বিখ্যাত’ হওয়ার মতো তেমন কিছু না করলেও, ওই কাটা হাতেই কোদাল চালিয়ে নিজের অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।

যুগলের বয়স তখন আট বছর। এক কালবৈশাখীর ঝড়ে বাড়ির সামনের রাস্তায় ‘হাই টেনশন’ তার ছিঁড়ে পড়েছিল। স্কুলে যাওয়ার পথে কোনও ভাবে সেই তারে হাত লেগে যায় যুগলের। প্রাণে বেঁচে গেলেও যুগলের দুই হাত বাঁচাতে পারেননি চিকিৎসকরা। কনুইয়ের একটু নিচ থেকে দু’টি হাতই কেটে বাদ দিতে হয়।

হাত কাটা পড়লেও মনোবল ভাঙেনি যুগলের। দুই কনুই দিয়ে কলম ধরে লেখার অনুশীলন শুরু করে। ম্যাট্রিক পাশও করে যায় যুগল। যুগল বলে, “যখন ভাবছিলাম স্নাতক হয়ে প্রতিবন্ধী কোটায় চাকরির চেষ্টা করব, তখনই বাবার মৃত্যু আমাদের পথে বসিয়ে দিল।” যুগলের বাবা খেত মজুরের কাজ করতেন। সেই বাবার মৃত্যুর পর মা ও তিন ভাই-বোনের সংসারে তাঁকেই হাল ধরতে হয়েছিল। যুগল বলেন, “যে ভাবে দুই কনুই দিয়ে পেন ধরতে শিখেছিলাম সেই ভাবেই শিখতে শুরু করলাম কোদাল ধরতেও। কয়েক মাসের চেষ্টায় কোদাল চালাতেও শিখে ফেললাম আমি।”

কিন্তু কে নেবে যুগলকে কাজে? গোড্ডা বাজারের মোড়ে সকাল সাতটা থেকে শ্রমিকরা ভিড় করে দাঁড়ায়। ঠিকাদাররা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে শ্রমিকদের নানা কাজে নিয়ে যায়। সবাই কাজ পায়। শুধু কাজ পান না দু’হাত কাটা যুগল। বাজারের মোড়ে একলা দাঁড়িয়ে থাকেন। হাত নেই তবু কোদাল চালাতে পারেন। কেউ বিশ্বাসই করে না। কয়েকটা টিউশনি পড়িয়ে দু’বেলা ভাত জোটে না।

কনুই দিয়ে পেন ধরে লেখা শিখেছেন। শিখেছেন কোদাল চালানোও। এবার তিনি শিখে নিলেন সাইকেল চালানোও। সাইকেল চালিয়ে সোজা চলে গেলেন গোড্ডা থেকে কিছু দূরে, ইসিএল এর লালমাটিয়া কয়লা খাদানে। সেখানে পরিত্যক্ত খাদান থেকে কয়লা তোলার কাজও শিখে ফেললেন। সেই কয়লা সাইকেলে নিয়ে গ্রামে গ্রামে বিক্রি শুরু করেন যুগল যাদব। তাঁর এই অবিশ্বাস্য কাণ্ড দেখে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিকাদারদের মনেও বিশ্বাস জেগেছে। যুগল হাসে, “অভি কভি কভি ম্যায়ভি বিকতা—আমিও বিক্রি হই। গ্রামে বাড়ি তৈরির মাটি কাটার কাজ দেন ঠিকাদাররা।” গোড্ডার এক ঠিকাদার নন্দকিশোর মাহাতো বলেন, “ওর জেদের কাছে আমরা হেরে গিয়েছি। মাটি কাটার কাজটা একটু আস্তে করলেও ওকে আমরা ভালবেসেই কাজে নিয়েছি।” তবে যেদিন ঠিকাদারদের কাছে কাজ জোটে না সেদিন সাইকেল চালিয়ে সোজা লালমাটিয়া খাদানে।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy