জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিলে তার ফল মারাত্মক হবে বললেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কারও নাম করেননি ঠিকই, তবে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের নাম জড়িয়েছে তাতে এই সতর্কবার্তার পরোক্ষ লক্ষ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বলেই অনেকের ধারণা। আজ তাঁর বাড়ি ‘গণভবন’-এ একই সঙ্গে হাসিনা বলেন, ভারত-বিরোধী জঙ্গিদের উৎখাত করেছে তাঁর সরকার। এ বার ভারতের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পালা। কোন কোন জঙ্গি ভিন্ দেশে গিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছে বিস্তারিত তথ্য আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে ওই ঘটনার সঙ্গে জামাতুল মুজাহিদিন-বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ পেয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। জানা গিয়েছে, সেখানে তৈরি হওয়া বিস্ফোরকের অন্যতম গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। এমনকী, খোদ হাসিনাকে হত্যা করে অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনাও ষড়যন্ত্রকারীদের ছিল বলে জানা গিয়েছে। এনআইএ-র তিন শীর্ষস্থানীয় কর্তার সঙ্গে কথা বলে সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
হাসিনা অবশ্য আজ বলেন, এই খবরে তিনি উদ্বিগ্ন নন। তাঁর সহাস্য মন্তব্য, “আমি তো এক্সটেনশনে চলছি। বহু আগেই আমার মরে যাওয়ার কথা। কিন্তু মরিনি। এখন আর মরার ভয় পাই না।”
খাগড়াগড় কাণ্ডে জঙ্গিদের মদতদাতা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের নাম উঠে এসেছে। অভিযোগ, জঙ্গিদের নিরাপদ ঘাঁটি গাড়ার ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন তৃণমূলের কেউ কেউ। এমনকী, তৃণমূলের এক রাজ্যসভার সাংসদ জামাত-জঙ্গিদের সাহায্য করতে সারদার টাকা বাংলাদেশে পাচার করেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই দিল্লিকে অবহিত করেছে ঢাকা। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের বার্ষিক অধিবেশেনের ফাঁকে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বাংলাদেশের জঙ্গিদের সঙ্গে ভারতের যোগ নিয়ে তথ্যাদিও দিয়েছেন হাসিনা।
আজ সরাসরি তৃণমূলের নাম না-করলেও হাসিনার মন্তব্য, “জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়াটা যে কী মারাত্মক, সবাইকে তা উপলব্ধি করতে হবে।” পরে আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় তিনি বলেন, “যখন খবর পাই পশ্চিমবঙ্গেই আশ্রয় নিয়ে জঙ্গিরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, খুব খারাপ লাগে।” মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গের মানুষের অকুণ্ঠ সহযোগিতা এবং সে জন্য বাংলাদেশের মানুষের কৃতজ্ঞতার উল্লেখ করে হাসিনার আশা, “পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কিছুতেই এ জিনিস সহ্য করবেন না। তাঁরাই তাঁদের মাটি থেকে জঙ্গিদের নিকেশ করবেন।”
ভারত-বিরোধী জঙ্গি দমনে অতীতে বাংলাদেশ যে সক্রিয় ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল, সে কথাও আজ মনে করিয়ে দেন হাসিনা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতীয় জঙ্গিদের আমরা সমূলে উৎখাত করেছি। অনেকের অনেক প্রভাবশালী বন্ধু ছিল। আমরা কাউকে রেয়াত করিনি। আমরা আমাদের অঙ্গীকার পালন করেছি। ভারতের মানুষ এ বার তাদের মাটি থেকে বাংলাদেশের জঙ্গি ঘাঁটিগুলি উচ্ছেদ করুক। ও দেশের যে-সব মানুষ এই জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের খুঁজে বার করে শাস্তি দিক।”
পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এ কাজে সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
হাসিনা জানান, খাগড়াগড়-কাণ্ডের তদন্ত নিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তদন্তের ব্যাপারে ভারতকে সব রকম সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ। তদন্তের কাজে সাহায্য করতে শীঘ্রই ভারতে যাবেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। হাসিনার কথায়, “এখান থেকে তাড়া খেয়ে জঙ্গিরা এখন পড়শি দেশে আশ্রয় নিয়েছে। কারা এদের আশ্রয় দিয়েছে, কী চক্রান্ত চলেছে, এ সব নিয়ে অনেক খবর আমাদের কাছে রয়েছে। তবে সব কথা এখনই বলা যাবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy