কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন ন’জন বিধায়ক। ফলে, ১২৬ আসনের অসম বিধানসভায় কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা দাঁড়াল ৬৯। প্রদেশ কংগ্রেস অবশ্য এই ঘটনাকে বড় করে দেখতে নারাজ। দলীয় নেতাদের মতে, বিজেপিতে যোগ দেওয়া ন’জনকে আগেই সাসপেন্ড করা হয়েছিল। পাঠানো হয় শো-কজ নোটিসও। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও তাঁদের দলে নিতে দোটানায় ছিলেন।
আজ বিকেলে গুয়াহাটির হেঙেরাবাড়িতে বিজেপির রাজ্য সদর দফতরে রাষ্ট্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের উপস্থিতিতে ওই দলে যোগ দেন রহার কংগ্রেস বিধায়ক পীযূষ হাজরিকা, শদিয়ার বলিন চেতিয়া, জোনাইয়ের প্রদান বরুয়া, বেহালির পল্লবলোচন দাস, তেজপুরের রাজেন বরঠাকুর, রাতাবাড়ির কৃপানাথ মালাহ, গোলকগঞ্জের আবু তাহের বেপারি, সিপাঝারের বিনন্দ শইকিয়া এবং নলবাড়ির জয়ন্তমল্ল বরুয়া।
প্রায় দু’বছর ধরে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই ন’জন ‘বিদ্রোহী’ বিধায়ক অসম কংগ্রেসে তরুণ গগৈয়ের নেতৃত্ব বদলের জন্য লড়াই চালিয়েছেন। প্রথমে জনাপঞ্চাশ বিধায়ক ওই দলে থাকলেও, পরে গগৈয়ের কূটনীতিতে হিমন্ত-শিবিরে ফাটল ধরে। বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত, সেচমন্ত্রী চন্দন সরকার, শিক্ষামন্ত্রী শরৎ বরকটকি, শিল্পমন্ত্রী সিদ্দেক আহমেদ, সমাজকল্যাণমন্ত্রী গৌতম রায়, পরিষদীয় সচিব কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, রেকিবুদ্দিন আহমেদদের মতো অনেকেই গগৈ শিবিরে ফিরে আসেন। কিন্তু, বিদ্রোহী শিবিরের এই ন’জন হিমন্তের সঙ্গ ছাড়েননি।
হিমন্ত কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করার পরই পীযূষ, জয়ন্তমল্ল, তাবু তাহের, পল্লবলোচন, রাজেন, বলিন, প্রদান, বিনন্দ এবং কৃপানাথবাবু সরাসরি হিমন্তের প্রতি তাঁদের আনুগত্য ঘোষণা করেন। সকলে জানান, হিমন্ত যে দিকে, তাঁরাও সেই দিকেই যাবেন। হিমন্ত যে দিন বিজেপিতে যোগ দিতে দিল্লি থেকে গুয়াহাটি ফেরেন, তাঁর সঙ্গেই দিল্লি থেকে আসেন পীযূষ-পল্লব-রাজেন। বাকি হিমন্তপন্থী ছয় বিধায়ক গুয়াহাটি বিমান বন্দরে হাজির থেকে হিমন্তকে সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন। সেই ‘অপরাধে’ পরে এই ন’জনকে সাসপেন্ড করে কংগ্রেস।
এর পরই পীযূষ-জয়ন্তরা দিল্লিতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে জানান, তাঁরা কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেবেন এবং. বিজেপির অসম জয়ের স্বপ্ন সফল করে দেখাবেন।
প্রায় দু’মাস বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে এই বিষয়ে কোনও সবুজ সঙ্কেত পাননি তাঁরা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কংগ্রেসের ওই ন’জন বিধায়ককে দলে টানা নিয়ে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে বিক্ষোভ দেখা দেয়। কংগ্রেস ছাড়ার কথা আগেভাগে ঘোষণা করে বিপদে পড়েন হিমন্তপন্থী বিধায়করা। অবশেষে হিমন্তের হস্তক্ষেপে গত কাল গুয়াহাটি বিমানবন্দরে সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁদের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
বিজেপি সূত্রে খবর, নিঃশর্ত ভাবে ওই দলে যোগ দিয়েছেন তাঁরা। নিজেদের কেন্দ্রে ফের প্রার্থীত্ব মেলার কোনও আশ্বাস তাঁদের দেওয়া হয়নি। মুখরক্ষায় তাঁদের কাছে অন্য পথও খোলা ছিল না। দল ছাড়লেও আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এই ন’জনই নিজের কেন্দ্রের বিধায়ক থাকছেন। স্পিকার প্রণব গগৈ হিমন্ত দলত্যাগ করার পরই জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে আর উপ-নির্বাচন হবে না।
কংগ্রেসে হিমন্ত-পন্থী হিসাবে পরিচিত এই বিধায়কদের একত্রে ‘দাদা ব্রিগেড’ নাম দেওয়া হয়েছিল। বিজেপির তরফে পাকাপোক্ত আশ্বাস না পেলেও তাঁদের আশা, আসন্ন নির্বাচনে তাঁরা প্রার্থীত্ব পাবেন। কারণ তাঁদের কেন্দ্রগুলিতে প্রার্থী হওয়ার মতো নেতা বিজেপির হাতে নেই।
ন’জন বিধায়ককে দলে স্বাগত জানিয়ে বিজেপি সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনের আগে এত জন পোড়খাওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে দলে পেয়ে বিজেপির লাভ হল। কংগ্রেসের অপ-শাসন ও পরিবারতন্ত্রে বিরক্ত হয়ে বিধায়করা যেমন দলত্যাগ করেছেন, তেমনই সাধারণ মানুষও ক্ষুব্ধ। সকলে মিলেই পরের বছর নির্বাচনে কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যূত করবেন।’’