ভারতের সমস্ত সামরিক সরঞ্জামের দ্রুত আধুনিকীকরণ চলছে। চিনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার কথা মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ ভারতের। (প্রতীকী ছবি)
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারী দেশ এখন ভারত। অনেকটা পিছনে চিন। মধ্য এশিয়ার ধনকুবের রাষ্ট্রগুলিও ভারতের চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছে। একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় এই রিপোর্ট উঠে এসেছে। আগেও আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় এমনই আভাস মিলেছিল। এ বার স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) সমীক্ষাতেও সেই ছবি উঠে এল।
রিপোর্টটিতে জানানো হয়েছে, ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে পৃথিবীতে মোট যে পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি হয়েছে, তার ১৩ শতাংশ একাই কিনেছে ভারত। ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে এই হার ছিল ৯.৭ শতাংশে। শেষ পাঁচ বছরের অস্ত্র আমদানির হিসেব বলছে, তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সৌদি আরব, তৃতীয় আরব আমিরশাহি, চতুর্থ চিন এবং পঞ্চম স্থানে আলজিরিয়া। তবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সৌদি আরবের সঙ্গে প্রথম স্থানে থাকা ভারতের ব্যবধান কিন্তু বিপুল। গোটা পৃথিবীতে গত পাঁচ বছরে যে পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি হয়েছে, তার ৮.২ শতাংশ কিনেছে সৌদি আরব। অর্থাৎ ভারতের সঙ্গে ব্যবধান প্রায় ৫ শতাংশের।
ভারতের সশস্ত্র বাহিনী গত এক দশকে নিজেদের সক্ষমতা অত্যন্ত দ্রুত বাড়িয়েছে বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। (প্রতীকী ছবি)
এসআইপিআরআই-এর রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ইয়েমেন এবং সিরিয়াতে যে যুদ্ধ চলছে, মধ্য এশিয়ার অধিকাংশ দেশই সেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। শুধু তাই নয়, ইরানের সঙ্গেও এই দেশগুলির সম্পর্ক বেশ উত্তপ্ত। তাই অস্ত্রের চাহিদা সেখানে বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে নিজেদের অস্ত্র আমদানির পরিমাণ ২১২ শতাংশ বাড়িয়েছে সৌদি আরব। কিন্তু তাতেও আমদানির নিরিখে তারা ভারতের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে।
দেশের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণে বিপুল বরাদ্দ করছে ভারত সরকার। (প্রতীকী ছবি)
ভারতের এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র কেনার কারণও ব্যাখ্যা করা হয়েছে এসআইপিআরআই রিপোর্টে। চিন এবং পাকিস্তানের মতো দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণেই ভারতকে অস্ত্র আমদানিতে জোর দিতে হয়েছে বলে সেখানে লেখা হয়েছে। গোটা এশিয়ায় চিন আধিপত্য বিস্তার করার যে চেষ্টা চালাচ্ছে, তা ভারতকে বাধ্য করছে নিজেদের সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা দ্রুত বাড়ানোর পথে হাঁটতে। মত সমীক্ষাটির। এসআইপিআরআই-এর প্রবীণ গবেষক সিমন ওয়েজম্যানের মতে, যে পরিমাণ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র যত তাড়াতাড়ি ভারতের প্রয়োজন, নিজেদের দেশের প্রতিরক্ষা শিল্প ক্ষেত্রকে কাজে লাগিয়ে ভারত সেই চাহিদা মেটাতে পারছে না। তাই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র আমদানি করছে।
আরও পড়ুন: ভারতের প্রবল চাপেই বন্দি হাফিজ: বিস্ফোরক দাবি জঙ্গি নেতার ভাইয়ের
ফের সঙ্ঘাতের আঁচ, দঃ চিন সাগরে বড় নৌবহর পাঠাল আমেরিকা
ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর অস্ত্রশস্ত্রের বহর সমীহ করার মতোই। বন্দুক, সাঁজোয়া গাড়ি ট্যাঙ্ক থেকে শুরু করে ফাইটার জেট— অনেকগুলিরই বয়স বেড়ে গিয়েছে। সে সবের পরিবর্ত খোঁজার সময়ও এসে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতীয় সেনার আধুনিকীকরণে ২৫ হাজার কোটি ডলার খরচের পরিকল্পনা নিয়েছেন। ফ্রান্স থেকে রাফাল ফাইটার জেট, রাশিয়া থেকে সুখোই ফাইটারের আধুনিকতম ইঞ্জিন, ইজরায়েল থেকে বেশ কিছু ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার এবং অত্যাধুনিক ড্রোন-সহ নানা সামরিক সরঞ্জাম কেনার প্রক্রিয়া চলছে। ফলে আগামী বেশ কিছু বছরও যে অস্ত্র আমদানির তালিকায় ভারত শীর্ষ স্থানেই থাকতে চলেছে, সে নিয়ে সংশয় নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy