Advertisement
E-Paper

‘ও একটা নপুংসক’, কলকাতায় এসে মন্তব্য অমর সিংহের

চলতি যাদব-যুদ্ধের অন্যতম চরিত্র তিনি। তাঁকে ঘিরেই সোমবার উত্তাল হয়েছে লখনউয়ে সমাজবাদী পার্টির সম্মেলন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুলায়ম সিংহ তাঁকে ছোট ভাই আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘‘ওকে তাড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না! ও আমাকে বাঁচিয়েছে।

শঙ্খদীপ দাস

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৩
কুলফির মজা। সোমবার কলকাতায় দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি।

কুলফির মজা। সোমবার কলকাতায় দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি।

চলতি যাদব-যুদ্ধের অন্যতম চরিত্র তিনি। তাঁকে ঘিরেই সোমবার উত্তাল হয়েছে লখনউয়ে সমাজবাদী পার্টির সম্মেলন। মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুলায়ম সিংহ তাঁকে ছোট ভাই আখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘‘ওকে তাড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না! ও আমাকে বাঁচিয়েছে। নইলে জেল খাটতে হতো!’’ যা শুনে বাবার হাত থেকে মাইক প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে পাল্টা তোপ দেগেছেন অখিলেশ যাদব, ‘‘ও দালাল! ও নেতাজিকে (মুলায়ম সিংহ) শাজাহান আর আমাকে আওরঙ্গজেব সাজিয়ে খবরের কাগজে গল্প খাইয়েছে! ওর শেষ দেখে ছাড়ব!’’

যাঁর জন্য বাপ-ছেলের এই ঝগড়া, সেই অমর সিংহ তখন হাজার কিলোমিটার দূরে। নিজের পুরনো শহর কলকাতায় চৌরঙ্গির মিষ্টির দোকানে বসে তারিয়ে তারিয়ে কচুরি-আলুর তরকারি খাচ্ছেন। সাত বছর আগে দুটো কিডনিই বাদ গিয়েছে। সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের পর দেশে ফিরে কার্যত বিছানায় শুয়ে কাটাতে হয়েছিল পরের ছ’মাস। নিজেই বললেন, ‘‘এমনকী অন্ত্রেরও তো অনেকটা নেই!’’ কিন্তু দেখে কে বলবে? কচুরির পর কুলফি-ফালুদাও উড়িয়ে দিলেন এক প্লেট! যেন কুছ পরোয়াই নেই! আপাতদর্শনে উত্তাল লখনউ যেন স্পর্শ করছে না তাঁকে!

গত কিছু দিন ধরে অখিলেশ-রামগোপাল যাদবদের যাবতীয় শ্লেষ-কটাক্ষ-আক্রমণকে স্রেফ নীরবতা দিয়ে উপেক্ষা করেছেন অমর। এ দিন মুখ খুললেন। তাতেও অবশ্য উষ্মা নেই। জানালেন, সোমবার অখিলেশের জন্মদিনে তাঁকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দলীয় বৈঠকে অখিলেশ তাঁকে ‘দালাল’ বলেছেন শুনে হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘সেই ছোট্টবেলা থেকে অখিলেশকে দেখছি। আমার কোলে খেলেছে। আমাকে তো আঙ্কল বলে ডাকত। ওর যদি মনে হয়ে থাকে ওকে নিয়ে খবরের কাগজে গল্প খাইয়েছি, একটা ফোন করলেই তো পারত! জিজ্ঞাসা করতে পারত, আঙ্কল আসল ঘটনাটা কী!’’

অখিলেশ শিবিরের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশে ভোটের মুখে নিজের দর বাড়াতেই বাপ-ছেলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির খেলায় নেমেছেন অমর। কারণ, তিনি বিলক্ষণ জানেন দলে অখিলেশের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব কায়েম হলে তাঁর আর কোনও গুরুত্বই থাকবে না। তাই অমরের লক্ষ্য, মুলায়মের রাশ বজায় রাখা। তাতেই তাঁর সুবিধা।

হতে পারে যাদব কুলের যুদ্ধ। কিন্তু মহাভারত নয়, রামায়ণের সঙ্গেই বেশি মিল মুলায়ম পরিবারের দ্বন্দ্বের। বড় ছেলে অখিলেশের রাজ্য ভোগে ঘোর আপত্তি মুলায়মের দ্বিতীয় স্ত্রী সাধনার। তিনি চাইছেন নিজের ছেলে প্রতীক উত্তরাধিকারী হোক মুলায়মের। ভরতের আপত্তি ছিল রামের সিংহাসনে বসতে। প্রতীকের নেই। সমাজবাদী শিবিরের অন্দরের খবর, মা-ছেলের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষায় ইন্ধন জোগাচ্ছেন ‘মন্থরা’ অমর সিংহ। অমর অবশ্য পাল্টা বলছেন, ‘‘ধুর, আমি ও সবের মধ্যে নেই। বাপ-ছেলের ঝগড়া লাগিয়ে আমি কী পাব?’’ তবে একই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর পরামর্শ, ‘‘অখিলেশকে বুঝতে হবে মুলায়ম সিংহ যেমন তাঁর বাবা, তেমনি গোটা সমাজবাদী পার্টির বাবা।’’

অধুনা সপা-র রাজ্যসভা সাংসদ হলেও অমরের সঙ্গে কলকাতার যোগ দীর্ঘদিনের। বড়বাজার যুব কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। তখনকার কংগ্রেস নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অন্যতম আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। তার পর হঠাৎই উত্তরে পাড়ি দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে উঠে আসেন। পূর্ব নির্ধারিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই এ দিন কলকাতা এসেছিলেন অমর। অনেকেই বলছেন, অনায়াসেই এই সফরটা বাতিল করতে পারতেন অমর। কিন্তু লখনউয়ের এখন যা মেজাজ, অমরকে নিয়ে অখিলেশ-সমর্থকদের যা রোষ, তাতে নবাবের শহরে থাকাটা ওঁর পক্ষে বেশি ঝুঁকির হয়ে যেত।

অবশ্য দূরে থেকেও লখনউয়ের প্রতিটি ঘটনার ওপর যে অমরের নজর রয়েছে, তাতে সংশয় নেই। অখিলেশের মন্তব্যের পরে ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, অকৃতজ্ঞের মতো কথা বলছেন অখিলেশ! সপা-কে প্রতিষ্ঠিত করার পিছনে অমর সিংহের পরিশ্রম ও বুদ্ধি কতটা ছিল, তা অখিলেশ ভালই জানেন। আসলে কোনও পরিশ্রম না করেই মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন বলে অখিলেশ বুঝতে পারছেন না কত ধানে কত চাল! তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, মুলায়ম এ দিন খোলাখুলি অমরের হয়ে সওয়াল করাতেই বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছেন অমর। তাই ফোঁস করাও শুরু করেছেন। এ দিন প্রকাশ্যেই বললেন ‘‘কম করেছি সপা-র জন্য! আমার যোগ্যতা নিয়ে আমি কেন ঢাক পেটাব? নেতাজিই বলুন না। আমার সম্পর্কে আজ যা উনি বলেছেন, সেটাই যথেষ্ট।’’ তুতো ভাই রামগোপাল যাদবকে রবিবারই দল থেকে বহিষ্কার করেছেন মুলায়ম। সেই রামগোপাল সম্পর্কে এ দিন অমরের মন্তব্য, ‘‘ও একটা নপুংসক!’’

মুলায়ম তাঁকে এত ভালবাসেন কেন? অমরের জবাব, ‘‘একজন প্রেমিক কি বলতে পারেন, প্রেমিকাকে কেন তাঁর ভাল লাগে! আসলে কিছু মানুষের মন এত ভাল হয় যে তাঁরা সকলের মধ্যে শুধু ভালই দেখেন।’’ তবে মুলায়ম পাশে দাঁড়ালেও সপা-র অন্দরমহল অমরকে নিয়ে এখনও দ্বিধাবিভক্ত। কেননা শুধু অখিলেশ বা রামগোপাল নন, সপা-র অন্যতম সংখ্যালঘু নেতা তথা মুলায়ম ঘনিষ্ঠ আজম খানও বিলক্ষণ চটা অমরের ওপর। কারণ, সম্প্রতি পূর্ব উত্তরপ্রদেশে মোখতার আনসারির দল কাওমি একতাকে সপা-র সঙ্গে মেশাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন অমর। এ ব্যাপারে মুলায়মকে বুঝিয়ে প্রায় রাজিও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু বাহুবলী নেতা মোখতারকে দলে সামিল করলে আজমের একাধিপত্য সঙ্কটে পড়তে পারত।

কথা বলতে বলতে কুলফি-ফালুদার বাটি সাফ! দোকান থেকে বেরিয়ে, পার্ক স্ট্রিটের রাস্তা দিয়ে কিছুটা হেঁটে গাড়িতে উঠবেন। সাদা অডি-র দরজা খুলে ফের দাঁড়িয়ে পড়লেন ঠাকুর নেতা। বললেন, ‘‘প্রায় আড়াই দশক হয়ে গেছে সংসদীয় জীবনের। অনেক দেখেছি, অনেক কিছু পেয়েছি। এখন তো ডোনাল্ড ট্রাম্প (মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী) পর্যন্ত আমার প্রসঙ্গ তুলে বলছেন, ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তির সময় অমর সিংহের থেকে অনুদান নিয়েছিল ক্লিন্টন ফাউন্ডেশন। আর কী চাই!’’

এক সময় জাতীয় রাজনীতির অন্যতম রঙিন চরিত্র ছিলেন অমর। অসুস্থতার কারণে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন বেশ কয়েক বছর। গাড়িতে ওঠার মুখে মুচকি হেসে বললেন, ‘‘দেখুন, যেই ফিরেছি, রাজনীতির রঙও ফিরে এসেছে!’’

Amar Singh Samajwadi Party
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy