Advertisement
E-Paper

‘প্রধানমন্ত্রীর কথায় বিশ্বাস রেখেছিলাম’, ফর্ম দেখে চমকে গেলেন ব্যাঙ্ক কর্মী

বাতিল হয়ে যাওয়া নোট যত খুশি তত আর জমা দেওয়া যাবে না ব্যাঙ্কে। গত সোমবার সন্ধের দিকে জানিয়েছিল সরকার। ব্যাঙ্কগুলোও নির্দেশ মতোই কাজ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু নতুন নিয়ম ঘোষণার পর ৪৮ ঘণ্টাও ঠিক মতো কাটেনি, সরকার সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিল। ফিরিয়ে নিতে এক রকম বাধ্য হল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ ১৭:০৪
মারাত্মক কথার খেলাপের কালি লাগতে চলেছিল গায়ে। —ফাইল চিত্র।

মারাত্মক কথার খেলাপের কালি লাগতে চলেছিল গায়ে। —ফাইল চিত্র।

বাতিল হয়ে যাওয়া নোট যত খুশি তত আর জমা দেওয়া যাবে না ব্যাঙ্কে। গত সোমবার সন্ধের দিকে জানিয়েছিল সরকার। ব্যাঙ্কগুলোও নির্দেশ মতোই কাজ করতে শুরু করেছিল। কিন্তু নতুন নিয়ম ঘোষণার পর ৪৮ ঘণ্টাও ঠিক মতো কাটেনি, সরকার সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিল। ফিরিয়ে নিতে এক রকম বাধ্য হল। কারণ প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছিল ১৯ ডিসেম্বরের নতুন বিধিনিষেধ আরোপিত হওয়ার পর থেকে।

প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কেন প্রশ্ন উঠছিল? কী প্রশ্নই বা উঠছিল? সোশ্যাল মিডিয়ায় রামাকুমার রাম নামে এক ব্যক্তির একটি ছোট্ট পোস্টে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর রয়েছে।

৫০০০ টাকা বা তার বেশি অঙ্কের টাকা বাতিল নোট ব্যাঙ্কে জমা দিতে গেলে এ বার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে এবং ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই অঙ্কের টাকা এক বারই জমা দেওয়া যাবে— ১৯ ডিসেম্বর সন্ধে নাগাদ এই ঘোষণা করা হয়েছিল সরকারের তরফে। রামাকুমার রাম তার পরে ব্যাঙ্কে যান এবং কিছু বাতিল ৫০০ টাকা ও ১০০০ টাকার নোট জমা দিতে চান। তাঁকে একটি ফর্ম ধরিয়ে দেওয়া হয়। রামাকুমার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘... আমি কেন এত দিন ব্যাঙ্কে যাইনি তার কারণ ওই ফর্মে লিখতে বলা হয়েছিল।’’ ফর্মে তিনি কী লিখেছেন? লিখেছেন, ‘‘আমি আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর কথায় বিশ্বাস রেখে ভেবেছিলাম ৩০.১২.২০১৬ তারিখ পর্যন্ত পুরনো নোট জমা দেওয়ার সময় রয়েছে। কিন্তু তাঁরা নিজেদের মন বদলে ফেলেছেন।’’

ফর্মে কী লিখেছিলেন, তার ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে দিয়েছিলেন রামাকুমার রাম। এই পোস্টই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে।

রামাকুমার ফেসবুকে লিখেছেন, ফর্মটি হাতে পেয়েই চমকে ওঠেন ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার। তিনি রামাকুমারকে ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ম্যানেজর তাঁকে কী বললেন? ফেসবুক পোস্টে সে কথপোকথনও তুলে ধরেছেন রামাকুমার রাম— ‘‘আমি ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করলাম, যিনি আমাকে বললেন আমি এত দিন ব্যাঙ্কে আসার সময় পাইনি জাতীয় কিছু লিখতে। আমি বললাম, আমি মিথ্যাচার করব না এবং সরকারের মুখ বাঁচাতে আমি আমার ব্যাখ্যা বদলাব না। শেষ পর্যন্ত তিনি মেনে নিলেন এবং আমার ফর্মটি গ্রহণ করলেন।’’

রামাকুমার রামের ফেসবুক পোস্টটি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে রাতারাতি। ব্যাঙ্কের দেওয়া ফর্মে তিনি যে কথা লিখেছেন, আরও অনেক মানুষ ব্যাঙ্কে গিয়ে সেই রকম কাণ্ডই ঘটিয়েছেন, তেমন হয়তো নয়। কিন্তু রামাকুমার রাম ফর্মে যা লিখেছেন, তা যে আরও অনেক মানুষের মনের কথা, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টটি যে ভাবে দাবানলের মতো ছড়িয়েছে, তাতেও স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে, ক্ষোভের আঁচ কতটা।

অমর্ত্য সেনের মতো বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদের কথায়, ‘‘নোটে লেখা থাকে, তা নিয়ে গেলে সমপরিমাণ টাকা দিতে ব্যাঙ্ক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই কথা ভাঙা কার্যত স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত।... নোট, ব্যাঙ্ক অর্থনীতির প্রতি মানুষের বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত।’’ হঠাৎ নোট বাতিল করে দেওয়ার পর এ বার তা ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার পথও যদি সঙ্কুচিত করে দেওয়া হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ যে প্রতারিত বোধ করবেন, তা নিয়ে সংশয় নেই।

প্রধানমন্ত্রীর মুখচ্ছবি সম্বলিত সরকারি বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, তাড়াহুড়ো করার প্রয়োজন নেই, বাতিল নোট জমা দেওয়ার জন্য ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় রয়েছে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও একই কথা বলেছিলেন। তার পরে আচমকা নতুন বিধিনিষেধ চাপিয়ে কোন যুক্তিতে নাগরিককে প্রশ্ন করা যায়, ‘‘এত দিন কেন ব্যাঙ্কে আসেননি?’’

আরও পড়ুন: ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাঙ্কে বাতিল নোট জমা দেওয়ায় কোনও বিধিনিষেধ নেই

সরকার শেষ পর্যন্ত পিছু হঠল সিদ্ধান্ত থেকে। রামাকুমার রাম ফর্মে কী লিখলেন বা ফেসবুকে কী পোস্ট করলেন, তার ধাক্কাতেই সরকার পিছু হঠল, এমনটা বললে অত্যুক্তি হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কেন এ ভাবে কথার খেলাপ করলেন বা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতিতেও কেন নাগরিক ভরসা রাখতে পারবেন না, এমন প্রশ্ন কিন্তু উঠতে শুরু করেছিল বিভিন্ন মহল থেকেই। অশনি সঙ্কেতটা অভ্রান্ত প়ড়ে নিয়েছে সরকার। তাই সিদ্ধান্ত ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই তা প্রত্যহৃত হয়েছে।

Demonetisation Narendra Modi Arun Jaitley Deposit Norms RBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy