Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
National News

ভারত-চিন আবার যুদ্ধে জড়ালে কে কতটা প্রস্তুত

ভারত কিন্তু যাবতীয় হুমকির মুখে অবিচল। ২০১২ সালে চিন এবং ভারতের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, চিন তার শর্ত ভেঙেছে বলে দাবি দিল্লির।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৭ ১৫:৩৪
Share: Save:

রোজ একটু একটু করে সুর চড়াচ্ছে চিন। ডোকালাম থেকে ভারত সেনা না সরালে চিন সামরিক পদক্ষেপ করবে। বার বার এমনই বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কখনও চিনা বিদেশ মন্ত্রক, কখনও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, কখনও চিনের কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম— হুমকি আসছে নানা পথ ধরে।

ভারত কিন্তু যাবতীয় হুমকির মুখে অবিচল। ২০১২ সালে চিন এবং ভারতের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল, চিন তার শর্ত ভেঙেছে বলে দাবি দিল্লির। ভারত, চিন এবং অন্য কোনও দেশের সীমান্ত যেখানে মিলেছে, সেই সব এলাকায় সীমান্ত সংক্রান্ত বিতর্কের মীমাংসা তিনটি দেশের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতেই করতে হবে, এমনই শর্ত ছিল সেই চুক্তির। কিন্তু ভারত-ভুটান-চিন সীমান্তবর্তী এলাকা ডোকালামে চিন একতরফা সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে রাস্তা তৈরি করা শুরু করেছিল বলে বলে অভিযোগ। চিন যে এলাকায় রাস্তা তৈরি করতে চাইছিল, তা ভুটানের এলাকা বলে থিম্পুর দাবি। ভারতও সেই দাবিকেই সমর্থন করছে।

সঙ্ঘাত ঘনাচ্ছে এই ডোকালামকে কেন্দ্র করেই।

ভুটানের সঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা আদান-প্রদান সংক্রান্ত চুক্তি রয়েছে। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে ভুটানকে রক্ষা করতে ভারত দায়বদ্ধ। তা ছাড়া যে এলাকায় চিন রাস্তা এবং সামরিক ঘাঁটি তৈরি করতে চাইছে, সেই এলাকায় চিনা বাহিনীর অবস্থান ভারতের নিরাপত্তার পক্ষেও উদ্বেগজনক বলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মত। সেই কারণেই ডোকালামে বিশাল বাহিনী পাঠিয়েছে ভারত। চিন রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা বাতিল না করা পর্যন্ত সেনা সরানো হবে না বলে নয়াদিল্লি জানিয়েছে। চিন পাল্টা জানিয়েছে, ভারত সেনা না সরানো পর্যন্ত কোনও কূটনৈতিক আলোচনাও হবে না।

আরও পড়ুন: চিনকে বার্তা দিতে জাপান-আমেরিকার সঙ্গে নৌ-মহড়া ভারতের

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সীমান্তে অচলাবস্থা। সঙ্কট ক্রমশ জটিল হচ্ছে। ১৯৬২-র মতো আরও একটা সামরিক সঙ্ঘাতের আশঙ্কা রয়েছে, মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। চিনের মুখপাত্ররা ভারতকে ১৯৬২-র যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দিতেও চেয়েছেন। ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী অরুণ জেটলির জবাব— ১৯৬২-র ভারতের সঙ্গে ২০১৭-র ভারতকে গুলিয়ে ফেললে চিন ভুল করবে।

যদি শেষ পর্যন্ত সত্যিই শুরু হয় চিন-ভারত যুদ্ধ, তা হলে ফল কী হতে পারে? সৈন্যসংখ্যা আর অস্ত্রশস্ত্রের বহরই যে সব সময় যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণ করে, তা নয়। রণকৌশল, ভৌগোলিক অবস্থান, পরিবেশগত বিষয়, আন্তর্জাতিক সমীকরণ— এমন অনেক কিছুই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু পর্যাপ্ত সামরিক সক্ষমতাও খুব জরুরি।এই মুহূর্তে চিনা বাহিনীর মুখোমুখি হতে কতটা প্রস্তুত ভারতীয় সেনা? দেখে নিন এক ঝলকে:

তথ্যসূত্র: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার

সেনাবাহিনীর আকারে ভারতের চেয়ে চিন কিছুটা এগিয়ে ঠিকই। কিন্তু চিনের ভৌগোলিক সীমা ভারতের চেয়ে অনেক বড়, তাই স্বাভাবিক ভাবেই বড় বাহিনী প্রয়োজন তাদের। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স বা জিএফপি সূচিতে কিন্তু চিন এবং ভারত পাশাপাশিই রয়েছে। কোনও দেশের একক সামরিক সক্ষমতার নিরিখে ওই সূচিতে আমেরিকা রয়েছে প্রথম স্থানে। দ্বিতীয় স্থানে রাশিয়া। তিনে চিন। আর চারেই রয়েছে ভারত।

তথ্যসূত্র: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার

ভারতের ট্যাঙ্ক বাহিনী চির কালই বিশ্বের অনেক দেশের কাছে সমীহের বিষয়। চিনের চেয়ে ভারতের ট্যাঙ্কের সংখ্যা কিছু কম ঠিকই। কিন্তু আর্মার্ড ফাইটিং ভেহিকল বা সাঁজোয়া গাড়ির সংখ্যায় ভারত অনেকটা এগিয়ে।

তথ্যসূত্র: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার

স্থলসীমান্তে যুদ্ধের জন্য গোলাবর্ষণের সক্ষমতা অত্যন্ত জরুরি। দু’দেশের হাতেই বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম রয়েছে। কোনওটি ভারতের হাতে বেশি, কোনওটি চিনের হাতে। কিন্তু মাল্টিপল রকেট লঞ্চারের সংখ্যায় চিন ভারতের চেয়ে বেশ এগিয়ে।

তথ্যসূত্র: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার

এয়ারক্র্যাফ্টের সংখ্যায় চিন ভারতের চেয়ে খুব বেশি এগিয়ে নয়। ভারতের হাতে যে সংখ্যক যুদ্ধবিমান রয়েছে, নিজেদের আকাশসীমার সুরক্ষায় তা যথেষ্ট বলেই প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। একসঙ্গে একাধিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যদি লড়তে না হয়, তা হলে ভারতীয় বিমান বহর চিনের সঙ্গে যুঝতে সক্ষম।

তথ্যসূত্র: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ও উইকিপিডিয়া

অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা ভারতের হাতে বেশ কম। ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর কর্তাদের ব্যাখ্যা, বাহিনীর হাতে সুখোই-৩০ এমেকেআই-এর মতো প্রবল শক্তিশালী যুদ্ধবিমান পর্যাপ্ত সংখ্যায় থাকায়, অ্যাটাক হেলিকপ্টারের প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি নেই।

তথ্যসূত্র: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার

ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা চিনের হাতে ভারতের চেয়ে অনেকটাই বেশি। তবে যে পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের হাতে রয়েছে, কোনও একটি যুদ্ধে তত সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার দরকার পড়ে না বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

তথ্যসূত্র: গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার

নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বা পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যাতেও চিন অনেকটা এগিয়ে ভারতের চেয়ে। তবে চিন এবং ভারতের মতো দু’টি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র পরমাণু যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন না।

** যে সব সামরিক সরঞ্জাম এবং অস্ত্রশস্ত্র সক্রিয় অর্থাৎ সামরিক বাহিনীর হাতে ইতিমধ্যেই তুলে দেওয়া হয়েছে, গ্রাফিক্সে শুধু সেগুলিরই হিসেব দেওয়া হয়েছে। যে সব অস্ত্রশস্ত্র নির্মীয়মান বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার স্তরে রয়েছে, সেগুলির হিসেব এখানে দেওয়া হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE