Advertisement
E-Paper

পূর্ব লাদাখে বিপুল সেনা, ট্যাঙ্ক বাহিনীও, ভারতের তৎপরতায় অস্বস্তি চিনে

পূর্ব লাদাখে সেনা বাড়াচ্ছে ভারত। কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই চিন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারী অস্ত্রশস্ত্র, ট্যাঙ্ক এবং বাঙ্কারের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ানো হচ্ছে। রাস্তাঘাট, নতুন বিমানঘাঁটি এবং টহলদারি বাড়িয়ে পূর্ব লাদাখকে দুর্ভেদ্য করে তোলার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পথে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৬ ১৪:১৯
পূর্ব লাদাখে ভারতীয় সেনার বিপুল তৎপরতা বৃদ্ধিকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না চিন। —ফাইল চিত্র

পূর্ব লাদাখে ভারতীয় সেনার বিপুল তৎপরতা বৃদ্ধিকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না চিন। —ফাইল চিত্র

পূর্ব লাদাখে সেনা বাড়াচ্ছে ভারত। কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই চিন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভারী অস্ত্রশস্ত্র, ট্যাঙ্ক এবং বাঙ্কারের সংখ্যাও দ্রুত বাড়ানো হচ্ছে। রাস্তাঘাট, নতুন বিমানঘাঁটি এবং টহলদারি বাড়িয়ে পূর্ব লাদাখকে দুর্ভেদ্য করে তোলার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পথে। সীমান্তের অন্য পাশ চিন এই ধরনের সামরিক প্রস্তুতি অনেক আগেই সেরে ফেলেছে। তবে ভারতের তরফে এই সামরিক তৎপরতাকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না বেজিং।

লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশে ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে সমস্যা দীর্ঘ দিনের। ভারতের নিয়ন্ত্রণে যে অংশ রয়েছে, তার অনেকটাকেই চিন নিজেদের বলে দাবি করে। তাই দু’দেশের মধ্যে কোনও স্থায়ী সীমান্ত এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি)-কে সীমানা হিসেবে মেনে নিয়ে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং সেনা টহরদারি চালায়। ১৯৬২ সালে এই সীমান্ত বিরোধ থেকে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল চিন-ভারত। ভারতের তরফে সে সময় লাদাখ বা অরুণাচলে সামরিক প্রস্তুতি বলতে প্রায় কিছুই ছিল না। ফলে চিনা বাহিনী ভারতের অনেকটা অন্দরে ঢুকে এসেছিল। সেই অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে ১৯৬২ উত্তর পরিস্থিতিতে এলএসি বরাবর ভারতীয় বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানোর পরিকল্পনা হয় ঠিকই। কিন্তু চিনের তরফে প্রস্তুতি যতটা ছিল, তার মোকাবিলায় লাদাখ বা অরুণাচলের সীমান্তে ভারতের উপস্থিতি মোটেই যথেষ্ট ছিল না। সীমান্ত চৌকি পর্যন্ত বড় বড় রাস্তা বানিয়ে, বিপুল সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তুলে চিন সব সময়ই ভারতকে চাপে রাখতে চেয়েছে লাদাখ ও অরুণাচলে। ২০১২ সাল থেকে লাদাখ এবং অরুণাচলে দ্রুত সামরিক পরিকাঠামো বাড়ানো শুরু করে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। প্রথমেই এলএসি বরাবর টহলদারি বাড়ানো হয়। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশের (আইটিবিপি) হাতে অনেক ভারী অস্ত্রশস্ত্র তুলে দেওয়া হয়। নতুন নতুন রাস্তা, বিমানঘাঁটি এবং ফর্টিফায়েড বাঙ্কার তৈরি করা শুরু হয়। পাঁচ বছরের মধ্যে লাদাখ সীমান্তে ভারতের সামরিক প্রস্তুতির ছবিটা পুরোপুরি বদলে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই কিন্তু এলএসি বরাবর ভারতীয় বাহিনীকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের পূর্ব লাদাখে নিয়ে গিয়েছিল ভারতীয় সেনা। এলএসি বরাবর ভারতের সামরিক প্রস্তুতি এখন কেমন, তা সংবাদমাধ্যমকে জানাতেই এই সফর। যে ছবি দেখা গিয়েছে পূর্ব লাদাখে, তাতে সেনাবাহিনীর আত্মবিশ্বাসী না হওয়ার কোনও কারণ নেই। যে এলাকায় এক সময় মাইলের পর মাইল চলার পরও ভারতীয় সেনার দেখা পাওয়া যেত না, সেখানে এখন কঠোর নজরদারি। সীমান্ত বরাবর কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রত্যেকটি এলাকায় পাহাড়ের গায়ে এখন উঁকি দিচ্ছে ভারতীয় সেনার ফর্টিফায়েড বাঙ্কার। সেনা চৌকিগুলিতে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র পৌঁছে, সৈন্যসংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে, ভারী গোলাবর্ষণের পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পূর্ব লাদাখে ভারতীয় সেনা এ বার মোতায়েন করেছে ট্যাঙ্ক বাহিনীও।

শুধু লাদাখের পাহাড়ে নয়, জল ভাগেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্যাংগং লেকে টহল দিচ্ছে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী। ফলে দু’দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে মাঝেমধ্যেই। চিনা সেনা আগে প্রায়ই এলএসি লঙ্ঘন করে ঢুকে পড়ত ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায়। সে সব এখন অতীত। গত কয়েক বছরে নজরদারি বেড়ে যাওয়ার পর, চিনা সেনার সঙ্গে এ নিয়ে বেশ কয়েক বার সঙ্ঘাত হয়েছে ভারতীয় বাহিনীর। বিতর্কিত এলাকায় চিন ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করতে শুরু করায় ২০১৫-র শেষ দিকে ভারতীয় বাহিনী এক বার গোলাবর্ষণ করে সেই নির্মীয়মান টাওয়ার ভেঙেও দেয়। সেই সঙ্ঘাত এখন আর কোনও পক্ষই চাইছে না। তাই ২০১৫ সালের শেষ দিক থেকে এ পর্যন্ত আর সীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বেশ কয়েক বার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে। ফ্ল্যাগ মিটিং-এর মাধ্যমে মেটানো হয়েছে সে সব সমস্যা।

ভারতের তরফে সামরিক পরিকাঠামো বাড়ানোর কাজ যা করা হচ্ছে পূর্ব লাদাখে, তার কোনওটিই এলএসি-কে অগ্রাহ্য করে হচ্ছে না। ফলে চিনা সেনার সঙ্গে সঙ্ঘাতে জড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না। তবু সঙ্ঘাত হচ্ছে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে। সূত্রের খবর, এই ঘটনাগুলির সিংহভাগের পিছনেই চিনের প্ররোচনা রয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাদাখে ভারতের এই বিপুল সামরিক প্রস্তুতি দেকে চিন স্বস্তিতে থাকতে পারছে না। তাই ভারতীয় বাহিনীকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে তারা।

চিন যতই চাপে রাখুক, ভারতের সামরিক পরিকাঠামোর বৃদ্ধি কিন্তু তাতে থেমে থাকছে না। ভারত-চিন সীমান্তের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ কোর বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস কে পাটিয়াল জানালেন, ‘‘আমাদের সীমান্তকে আমরা রক্ষা করবই। তার জন্য যা যা করার দরকার, যেমন সামরিক পরিকাঠামো বাড়ানো, সৈন্যসংখ্যা বাড়ানো, এই সব কিছুর জন্যই আমরা আমাদের সেরাটা দেব।’’

আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে যুদ্ধের জন্য ভারতীয় উপগ্রহ ব্যবহার করবে মার্কিন বাহিনী

সেনাবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রক যে সেরাটা দিচ্ছে, তা পূর্ব লাদাখকে দেখলেই এখন বোঝা যাচ্ছে। বড় বড় সড়ক প্রকল্পগুলির কাজ প্রায় শেষ পথে। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু তৈরি হয়েছে। বাহিনীর দ্রুত চলাচল তাতে অনেক সহজ হয়েছে। আকাশপথেও যাতে দুর্গম পূর্ব লাদাখ জুড়ে থাকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে, সে ব্যবস্থাও পাকা। ১৬ হাজার ফুট উঁচুতে অবস্থিত দৌলত বেগ ওলদি-তে যুদ্ধবিমানের জন্য অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড তৈরি করে ফেলেছে ভারত। দুর্গম কারাকোরাম পর্বতের মধ্যে দিয়ে চিনের মধ্যে ঢোকার জন্য যে রাস্তা কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেই কারাকোমার পাসের মাত্র ১৬ কিলোমিটার দক্ষিণে এই বিমানঘাঁটি তৈরি করেছে ভারত। চিন স্বস্তিতে থাকতে পারছে না স্বাভাবিক কারণেই।

Eastern Ladakh Indian Army Military Infrastructure China Unhappy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy