Advertisement
E-Paper

যেন একাকী নির্জন প্রাসাদে আত্মবিশ্লেষণে মগ্ন বিষণ্ণ সিপিএম নেতৃত্ব

নানা মহল থেকে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব যে ‘ফিডব্যাক’ পেয়েছিলেন, তাতে তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন, ধাক্কা খেলেও সরকার তাঁরা গড়বেনই। কিন্তু জনজাতি এলাকা যে তাঁদের এ ভাবে ধাক্কা দেবে তা কি ভাবতে পেরেছিলেন তাঁরা?

তাপস সিংহ

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৮ ২৩:২৪
পিটিআইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।

পিটিআইয়ের তোলা ফাইল চিত্র।

চিত্রনাট্য কি সত্যিই এতটা পাল্টে যায়? কয়েক ঘণ্টা আগের আর পরের ফ্রেমের এত তফাৎ?

শনিবার ভরদুপুরে ওই বাড়িটা দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল। একটু আগে তীব্র বিজয়োল্লাসের ছবিটা দেখে এসেছি। যেন কোনও নৃপতি নতুন রাজ্য জয়ের পরে বন্দি করতে আসছে আগের শাসককে।

বিষয়টা যদিও এ রকম কিছুই নয়। তবু, আগরতলা শহরের মেলার মাঠের পাশে দশরথ দেব স্মৃতি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল, আসলে এটাই তো বাস্তব, ঘোর বাস্তব! সিপিএমের রাজ্য দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে শুক্রবার রাতের কথা মনে পড়ছিল। তখনও তো কত গাড়ি, লোকলস্কর, পুলিশ, নিরাপত্তারক্ষীর দল।

জানা ছিলই, সিপিএম নেতৃত্বের অনেকেই তখন দলীয় দফতরে নেই। নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা হচ্ছে, অনেকেই যার যার এলাকায়। যেমন, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নিজেই তাঁর কেন্দ্র ধনপুরে চলে গিয়েছেন। কী রকম যেন সুনসান রাজ্যের শাসক দলের দফতর। কম্পিউটার রুমে একা বসে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশ। ভিতরের ঘরে রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর কথা বলছেন। আর আছেন সাংসদ জীতেন চৌধুরী। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠেই বাঁ দিকের হল ঘরের এক কোণে টিভি চলছে। হাতে গোণা কয়েক জন কর্মী-সমর্থকের চোখ নির্বাচনী ফলাফলের দিকে।

 

‘‘কী করে এমন হল?’’

ভিন্‌ রাজ্যের পরিচিত সাংবাদিককে দেখে ইশারায় পাশের চেয়ারে বসতে বললেন। যেন স্বগতোক্তি করছেন তিনি, ‘‘আনএক্সপেক্টেড সেটব্যাক।’’ একেবারেই কি আনএক্সপেক্টেড? ‘‘গত ২৪ ফেব্রুয়ারিও তো আমরা একটা রিভিউ করি। তাতেও বেরিয়ে আসে, সরকার আমরাই করছি।’’

আরও পড়ুন: হুমকি-কটূক্তির দিনে একলা লড়়াই মানিকের

আরও পড়ুন: কর্নাটকে জিতছিই, পরের লক্ষ্য বাংলা: অমিত শাহ

বস্তুত, নানা মহল থেকে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব যে ‘ফিডব্যাক’ পেয়েছিলেন, তাতে তাঁরা ধরেই নিয়েছিলেন, ধাক্কা খেলেও সরকার তাঁরা গড়বেনই। কিন্তু জনজাতি এলাকা যে তাঁদের এ ভাবে ধাক্কা দেবে তা কি ভাবতে পেরেছিলেন তাঁরা? এই উপজাতীয় এলাকার উন্নয়নের জন্যই তো তৈরি হয়েছিল স্বশাসিত জেলা পরিষদ! বাঙালি আর উপজাতিদের শান্তিতে পরস্পর বসবাস করার কথাই তো বার বার তুলে ধরেছিলেন তাঁরা? সেই উপজাতীয় এলাকা খাস সিপিএমের থেকেই এ ভাবে মুখ ফিরিয়ে নেবে যে তফসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত ২০টি আসনের মধ্যে ১৯টিই চলে যাবে বিজেপি-আইপিএফটি-র হাতে?

গৌতমবাবুর কথায়: ‘‘উপজাতি এলাকায় মেজর সেটব্যাক।’’ কিন্তু অন্য এলাকাগুলোই বা কী করল? ‘‘আরবান আর আরবান মিক্সড এলাকায় আমাদের খারাপ হয়েছে। আমাদের গভীর ভাবে কারণগুলো অনুসন্ধান করতে হবে, বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে গন্ডগোলটা কোথায়।’’

সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, বিভিন্ন এলাকায় টাকা ছড়ানো হয়েছে, পেশী শক্তির প্রদর্শনও হয়েছে। বিভাজনের রাজনীতি করছে বিজেপি। খুব সঙ্গোপনে ‘টিপরাল্যান্ড’-এর দাবি তোলানো হয়েছে। বেতন কমিশনের সুপারিশ প্রয়োগ করা, যুবকদের হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দেওয়া, প্রতি বাড়ি থেকে এক জনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ‘কিছু যুবককে’ বিভ্রান্ত করেছে।

গণতন্ত্রে নির্বাচনে হারজিত থাকেই। কিন্তু একটানা পঁচিশ বছর সরকারে থাকার পরে কী এমন ঘটল যাতে এ হেন বিপর্যয় হতে পারে? এর উত্তর এখনও অজানা। তবে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা সাংসদ জীতেন চৌধুরীরও মন্তব্য: ‘‘একেবারেই অপ্রত্যাশিত ফল। ত্রিপুরায় যে এমন পট পরিবর্তন হবে তার কোনও লক্ষণ ছিল না।’’

সিপিএম নেতৃত্ব অন্তত প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন, প্রথমত, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছিল। দ্বিতীয়ত, আদিবাসীদের মধ্যে আলাদা রাজ্যের দাবি তুলে দেওয়াটা সিপিএমের মারাত্মক ক্ষতি করে দিয়েছে। এ ছাড়া, অন্তত ২০ শতাংশ ভোটার আগের জমানা দেখেনি। ফলে তাদের ভোটটা বেশির ভাগই বিজেপির দখলে চলে গিয়েছে।

ভোটের আগে একান্ত আলোচনায় সিপিএম নেতারা হিসেব কষতেন, কংগ্রেস কোন আসনে কত ভোট পেতে পারে। অর্থাৎ, কংগ্রেস যত ভোট পাবে, বিজেপির ক্ষতি ততই বেশি এবং তার ফায়দা তুলতে পারে সিপিএম। কিন্তু ভোটের ফল বেরনোর পরে দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেস স্রেফ মহাশূন্যে বিলীন হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের কথাও না তোলাই ভাল। এ দিন অবশ্য এক সিপিএম নেতার স্বীকারোক্তি: ‘‘কংগ্রেস কম পাবে জানতাম, তা-ই বলে এত কম!’’ আক্ষেপ আর যাচ্ছে না তাঁর।

শনিবার সন্ধ্যায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর বললেন, ‘‘যে ফল হয়েছে এটা অপ্রত্যাশিত। নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন জনগণের যে রেসপন্স আমরা পেয়েছি, এই ফল তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।’’

অর্থাৎ, মুখ আর মুখোশের তফাৎ পোড় খাওয়া সিপিএম নেতৃত্বও করতে পারেননি। অবশ্য, ক’জনই বা তা পারেন?

রাজনীতির চিত্রনাট্য কি জীবনের চিত্রনাট্যের থেকে আলাদা হতে পারে?

Tripura Tripura Assembly Election 2018 Election Assembly Election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy