Advertisement
E-Paper

জয়ললিতার মৃত্যুর দু’মাস পর মুখ খুললেন চিকিত্সকেরা!

জয়ললিতার মৃত্যুকে ঘিরে একটা রহস্য আগেই তৈরি হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছিল, ঠিক কী কারণে মারা গেলেন ‘আম্মা’? কিন্তু তার জবাব দিতে এমন একটা সময়কে বেছে নেওয়া হল, যাতে অন্য একটা প্রশ্ন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১৮:১৯
সাংবাদিক সম্মেলন করছেন তাঁর চিকিৎসকেরা।

সাংবাদিক সম্মেলন করছেন তাঁর চিকিৎসকেরা।

জয়ললিতার মৃত্যুকে ঘিরে একটা রহস্য আগেই তৈরি হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছিল, ঠিক কী কারণে মারা গেলেন ‘আম্মা’? কিন্তু তার জবাব দিতে এমন একটা সময়কে বেছে নেওয়া হল, যাতে অন্য একটা প্রশ্ন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। গোটাটার পিছনে কি তবে কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে?

গত ৫ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গিয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এআইডিএমকে-র নেত্রী জয়রাম জয়ললিতা। কিন্তু, ওই মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। অনেকেই তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। সোমবার সেই ধোঁয়াশা কাটাতে লন্ডন থেকে উড়িয়ে আনা হয় চিকিত্সক রিচার্ড বিয়ালকে। শেষ বার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় তিনিই জয়ললিতার চিকিত্সা করেছিলেন। অন্য দুই চিকিত্সককে পাশে বসিয়ে রিচার্ড সোমবার জানিয়ে দিলেন, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছিলেন জয়ললিতা। এ ছাড়া তাঁর দেহের একাধিক অঙ্গও কাজ করা বন্ধ করে দেয়। প্রশ্ন উঠেছে, এই কথাটা জানাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দু’মাস সময় নিলেন কেন? ওই চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের তরফে নয় রাজ্য সরকারের উদ্যোগেই এই সাংবাদিক বৈঠক।

অথচ, এই দু’মাসে একাধিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে রাজ্য। যার গোটাটাই জয়ললিতার এক সময়ের ছায়াসঙ্গী শশিকলা নটরাজনকে ঘিরে। দলের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁর অভিষেক হয়েছে। প্রথমে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে মনোনয়ন এবং পরে দলের পরিষদীয় নেতা নির্বাচিত হওয়া। দু’টি ঘটনাই প্রায় নিঃশব্দে সেরেছেন শশিকলা। হাত বাড়িয়েছেন প্রশাসনের অন্দরেও। নানা পদে তাঁর ঘনিষ্ঠদের বসানো হয়েছে। এর মধ্যেই পদত্যাগ করেছেন ও পনীরসেলভম। জয়ললিতার জেলে যাওয়া হোক বা মৃত্যু— তাঁর অবর্তমানে আগে দু’বার মুখ্যমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। কিন্তু, রবিবার দলীয় বৈঠকের মাঝেই রাজ্যপালের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শশিকলার নাম প্রস্তাব করেছেন। সেই প্রস্তাব গৃহীতও হয়েছে। কাজেই রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শশিকলার শপথ নেওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। এই রকম একটা সময়ে ওই বেসরকারি হাসপাতালের একাধিক চিকিত্সক সাংবাদিকদের সামনে আম্মার মৃত্যুর কারণ নিয়ে কথা বললে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। এবং উঠেওছে। তবে কি শশিকলার রাজনৈতিক পথ আরও মসৃণ করতেই এই সাংবাদিক বৈঠক? এবং তাঁরই নির্দেশে?

মারা যাওয়ার আগে ওই হাসপাতালে ৭৫ দিন ভর্তি ছিলেন ‘আম্মা’। অভিযোগ, তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রায় অন্ধকারেই রেখেছিলেন আম জনতাকে। নির্দিষ্ট কয়েক জনের বাইরে কেউ জানতেনই না, কেমন আছেন জয়ললিতা। এমনকী, তাঁর সঙ্গে প্রায় কাউকে দেখা করতে দেওয়া হত না। যদিও ওই চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শশিকলা এবং রাজ্যের মুখ্যসচিবকে প্রতিদিনই জয়ললিতার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য জানানো হত। পাশাপাশি, সমস্তটাই জানানো হত হাসপাতালের চেয়ারম্যানকে।

সেই সময়টায় কেমন ভাবে ছিলেন জয়ললিতা?

জবাব দিয়েছেন রিচার্ড এবং অন্যেরা। জানিয়েছেন, নেত্রী ভাল করে কথা বলতে পারতেন না। তবে, মুখ নাড়িয়ে হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিতেন। গত সেপ্টেম্বরে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রায় অচেতন অবস্থাতেই ছিলেন বেশ কয়েক দিন। সেই সময় লন্ডন থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল ফুসফুস বিশেষজ্ঞ রিচার্ডকে। তার পরেই আস্তে আস্তে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন তিনি। যদিও শেষরক্ষা হয়নি।

শেষের দিকে এক বার তাঁকে দ্বিতীয় বারের জন্য দেখতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তখন কাচের দরজার বাইরে থাকা রাজ্যপালকে চিনতে পেরে হাতও নেড়েছিলেন তিনি। কী কথা হত চিকিত্সকদের সঙ্গে? রিচার্ড জানিয়েছেন, নেত্রীর পছন্দের টিভি সিরিয়াল থেকে খাবার— এ সব নিয়েই কথা হত। কখনও কখনও রিচার্ডের সন্তানদের নিয়েও কথা বলতেন জয়ললিতা। রিচার্ডের কথায়, ‘‘আমাদের সাধ্যমতো সেরা চিকিত্সাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু, তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রু ডায়াবেটিস। ওটাই সব রকমের জটিলতা বাড়িয়ে তুলল।’’ এই কথাগুলো আগে কেন বলা হয়নি? জবাব এসেছে, ‘‘আমরা চিকিত্সক। সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নই।’’

আরও পড়ুন: কৃত্রিম কিডনি বানিয়ে চমক বাঙালির, বাজারে আসতে চলেছে খুব তাড়াতাড়ি

রিচার্ড জানিয়েছেন, যাঁদের সঙ্গে জয়ললিতা দেখা করতে চাইতেন তাঁদেরকেই দেখা করতে দেওয়া হত।

সব মিলিয়ে চিকিত্সকদের এ দিনের সাংবাদিক বৈঠক নিয়ে দেশ জুড়ে চর্চা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সব কিছুর পিছনে শশিকলার হাত নেই তো?

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর চিকিৎসাতে খরচ হয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। যা তাঁর পরিবারের তরফে মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Jayalalithaa Tamil nadu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy