Advertisement
E-Paper

সিদ্দায় আস্থা রাখায় জলে রাহুলের চেষ্টা

সনিয়া গাঁধীর হাইকম্যান্ড সংস্কৃতি থেকে সরে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ও রাজ্যের নেতাদের হাতেই ছেড়ে দেন রণকৌশল তৈরি ও প্রার্থী বাছাইয়ের ভার। সিদ্দাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার খেসারতই দিতে হল রাহুলকে

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০৫:০৯
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দোরগোড়ায় এসে ঠেকেছে বিজেপি। আর কংগ্রেস শিখছে ঠেকে। তিন দশকে কোনও দল পরপর দু’বার ক্ষমতায় ফিরতে পারেনি কর্নাটকে। সেখানেই আদা-জল খেয়ে নেমেছিলেন রাহুল গাঁধী। ফের এক দফা কংগ্রেসকে ক্ষমতায় রাখতে গোটা রাজ্য চষে ফেলেছেন। সনিয়া গাঁধীর হাইকম্যান্ড সংস্কৃতি থেকে সরে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ও রাজ্যের নেতাদের হাতেই ছেড়ে দেন রণকৌশল তৈরি ও প্রার্থী বাছাইয়ের ভার। সিদ্দাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার খেসারতই দিতে হল রাহুলকে।

পুরনো ব্যক্তিগত সংঘাতের কারণে ওবিসি নেতা সিদ্দা কিছুতেই এইচ ডি দেবগৌড়ার সঙ্গে সমঝোতায় রাজি ছিলেন না। কর্নাটকের ভোটে যে দেবগৌড়ার দল জেডি(এস)-এর ভূমিকা এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, তা বুঝতে ভুল হয় হাইকম্যান্ডের। ফলে জেডি(এস)-এর সঙ্গে জোট না করা, সিদ্দারামাইয়া সরকারের বিরুদ্ধে স্থানীয় স্তরে মানুষের ক্ষোভ এবং প্রতি ভোটেই কন্নাডিগাদের সরকার পাল্টে দেওয়ার ইচ্ছা— এই তিনটির সামনে হার মানতে হল রাহুল গাঁধীকে। একক ভাবে সরকার গঠনের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারল না দল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বারবারই বলে যাচ্ছেন, লড়াই হোক একের বিরুদ্ধে একের। বিজেপির বিরুদ্ধে যার যেখানে শক্তি বেশি, তাকেই গুরুত্ব দিয়ে জোট হোক। কর্নাটকের ফল দেখে তৃণমূল নেত্রীর বিশ্লেষণ, ‘‘কংগ্রেস জেডি(এস)-এর সঙ্গে জোট করলে, ফলটাই অন্য রকম হত। একেবারে অন্য রকম।’’

আরও পড়ুন:
ভাবাচ্ছেন মোদীর ঘনিষ্ঠ ভাজুভাই
বন্ধ হল বাজনা, উধাও লাড্ডুও

ফল বেরোনোর পরে এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। সেই জেডি(এস)-এর সঙ্গেই জোট করে সরকার গড়ার চেষ্টায় নামতে হয়েছে। এআইসিসি নেতারা মনে করছেন, প্রদেশ নেতৃত্বের উপর সব ছেড়ে না দিয়ে, রাহুল নিজেই দেবগৌড়া-কুমারস্বামীদের সঙ্গে বোঝাপড়ায় যেতে পারতেন। ভোটের পরে জেডি(এস)-কে দরকার হতে পারে ভেবে আগেই হাইকম্যান্ডের ‘প্ল্যান-বি’ তৈরি রাখা উচিত ছিল।

সিদ্দারামাইয়ার আত্মবিশ্বাস ছিল, নিজের ক্ষমতাতেই দলকে ১২০টি আসন এনে দেবেন। অতীতে জেডি(এস) থেকে তাঁকে বহিষ্কার করেছিলেন দেবগৌড়া। পুরনো শত্রুতা জিইয়ে রেখে প্রচার-পর্বে দেবগৌড়া ও তাঁর ছেলে কুমারস্বামীকে আক্রমণ করেছেন। জেডি(এস) অতীতে কংগ্রেসকে জোটের প্রস্তাব দিলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। দলিত ভোট টানতে কোনও দলিতকে মুখ্যমন্ত্রী বা উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবেও তুলে ধরা হয়নি।

কর্নাটকে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেলে ২০১৯-এর আগে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ত কংগ্রেসের। জেডি(এস)-এর সঙ্গে ভোটের আগে জোট করলে বড় শরিক হিসেবে কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকার হওয়ার পথ খোলা থাকত। তাতেও মনোবল চাঙ্গা হত দলের। তা না হওয়ায় ব্যর্থতার দায় অবশ্য রাহুলের ঘাড়ে চাপাতে রাজি নন কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় বা রাজ্য নেতৃত্ব।

এআইসিসি মুখপাত্র পবন খেরার বিশ্লেষণ, ‘‘স্থানীয় স্তরে প্রশাসনের উপরে মানুষের ক্ষোভ কতটা, তা বুঝতে ভুল হয়েছে।’’ কর্নাটকের প্রচার কমিটির প্রধান ডি কে শিবকুমারও বলেন, ‘‘রাহুলজি আমাদের যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন। কিন্তু আমরাই স্থানীয় স্তরে তার ফসল তুলতে পারিনি। ভোটারদের বোঝাতে পারিনি। ব্যর্থতা রাজ্য নেতৃত্বেরই। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে আমাদের আরও নজর দেওয়া উচিত ছিল। ’’

একা লড়ে কংগ্রেস চল্লিশের বেশি আসন খোয়ালেও ভোটের হার গত বিধানসভা ভোটের থেকে বেড়েছে। বিজেপির থেকেও কংগ্রেসের ভোটের হার বেশি। তবু অমিত শাহর নেতৃত্বে বিজেপি বিধানসভা ধরে ধরে ‘মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট’-এর জোরে অনেক বেশি আসন ঝুলিতে পুরেছে। এখানেও সিদ্দারামাইয়ার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ডুবিয়েছে বলে কংগ্রেস নেতাদের মত। তাঁদের বক্তব্য, কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে রাহুল এই ভোটে দু’টি বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছেন। এক, হাইকম্যান্ডের বদলে তিনি রাজ্যের নেতাদের ক্ষমতায়নের পক্ষে। দুই, ঠান্ডা ঘরে বসে রাজনীতি করার লোক নন তিনি।

গুজরাতে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় ফিরলেও ভোটে ধাক্কা খেয়েছিল বিজেপি। এর পরে উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানের উপনির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। এই ধারাবাহিক ব্যর্থতার সুযোগ নিতেই কর্নাটক ভোটের প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই শুরু করেছিলেন রাহুল। ভোট মে মাসে। জানুয়ারিতেই শুরু করে দেন প্রচার। পাঁচ মাসে রাজ্যের ৩০টি জেলাতেই ঘুরেছেন তিনি। বল্লারী থেকে গুলবর্গা, ৪০০ কিলোমিটার সফর করেছেন। বাসে-সাইকেলে প্রচার করেছেন। উঠেছেন গরুর গাড়িতেও। বিজেপির উগ্র হিন্দুত্বের মোকাবিলায় এক ডজন মঠ-মন্দিরে পুজো দিয়ে নরম হিন্দুত্বের রাজনীতি করেছেন। প্রচারের শেষ দিনেও পড়ে থেকেছেন বেঙ্গালুরুতে। রাহুলের সভাগুলিতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়াও মিলেছে।

কিন্তু ক্ষমতায় ফিরতে সিদ্দার সব চালই উল্টো পড়েছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুর তকমা দিয়ে লিঙ্গায়তদের ভোট জেতার কৌশল ব্যুমেরাং হয়েছে। দেবগৌড়াকে আক্রমণ করে ভোক্কালিগাদের চটিয়েছেন।
মায়াবতী জেডি(এস)-এর সঙ্গে জোট করায় দলিত ভোটে ভাঙন ধরেছে। নিজের ওবিসি ভোটব্যাঙ্কও ধরে রাখতে পারেননি।

Siddaramaiah Karnataka Election 2018 Congress কংগ্রেস
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy