উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও পঞ্জাবের পরে কৃষিঋণ মাফের পথে হাঁটল কর্নাটক সরকার। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া আজ বিধানসভায় এসে আচমকাই ঘোষণা করেন, কৃষক পিছু ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণ মাফ করা হবে। এবং অবিলম্বেই তা কার্যকর হবে, উত্তরপ্রদেশের মতো নির্দিষ্ট সময় পরে নয়। বিজেপির দাবি, তাদের চাপেই রাজ্যের কংগ্রেস সরকার কৃষকদের দাবি মানতে বাধ্য হলো। একই দাবি দেবগৌড়ার দল জেডি(এস)-এরও। রাজনীতির লোকজনেরা অনেকেই মনে করছেন, বিজেপি কৃতিত্ব নিতে চাইলেও কর্নাটকে নির্বাচনের আগের বছরে রাজনৈতিক ভাবে তাদেরই চাপে ফেলল সিদ্দারামাইয়ার ঘোষণা। চাপ বাড়ল নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি-শাসিত রাজ্য সরকারগুলির উপরেও।
সিদ্দারামাইয়া আজ বিধানসভায় বলেন, ‘‘চাষিরা দুর্দশায় রয়েছেন। ঋণ মাফের দাবি করছিলেন তাঁরা। আমাদের সাড়া দিতেই হবে। তাতে সরকারি কোষাগারে যত চাপই পড়ুক।’’ সরকারি সূত্রের দাবি, সমবায় ব্যাঙ্কগুলি থেকে নেওয়া ঋণ মাফের কারণে ৮ হাজার ১৬৫ কোটি টাকার দায় চাপবে রাজ্য সরকারের উপরে। উপকৃত হবেন ২২ লক্ষ ২৭ হাজার ৫০৬ জন কৃষক। এরই সঙ্গে সিদ্দারামাইয়ার দাবি, কেন্দ্রকে এ বার রাষ্ট্রায়ত্ত ও গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণ মাফ করে কৃষকদের দুর্দশা ঘোচাতে হবে। কারণ, কৃষকেরা ৮০ শতাংশ (৪২ হাজার কোটি টাকা) ঋণ নিয়েছেন কেন্দ্রের অধীনে থাকা এই দু’ধরনের ব্যাঙ্ক থেকেই।
আরও পড়ুন: জেল হতে হতে বেঁচেছি, খোলাখুলি রাস্কিন বন্ড
কংগ্রেস বা অন্য বিরোধী দলগুলি যতই দাবি তুলুক, নরেন্দ্র মোদীর সরকার কেন্দ্রের তরফে ঋণ মাফের পথে হাঁটতে রাজি নয়। রাজি নয় রাজ্যের মাফ করা ঋণের দায় নিতেও। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি গত কালও তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশে অবশ্য ভোটের আগেই ঋণ মাফের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। সেই প্রতিশ্রুতি রাখার দায় ছিল নরেন্দ্র মোদী ও যোগী আদিত্যনাথ উভয়েরই। তখনও জেটলি জানিয়ে দিয়েছিলেন, টাকার জোগাড় রাজ্যকেই করতে হবে। যোগী শেষে কৃষক পিছু ১ লক্ষ টাকা ঋণ মাফের ঘোষণা করেন ৩৬ হাজার কোটি টাকার দায় ঘাড়ে নিয়ে। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান— একের পর এক রাজ্যে এখন যে ভাবে ঋণ মাফ ও ফসলের সহায়ক মূল্য বাড়ানোর দাবিতে কৃষক আন্দোলন হচ্ছে কংগ্রেসের সমর্থনে, তাতে এমনিতেই বেশ চাপে রয়েছেন শিবরাজ সিংহ চৌহান, দেবেন্দ্র ফড্ণবীস, বসুন্ধরা রাজে। কৃষক-বিক্ষোভের চাপ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে শিবসেনাকে পাশে রাখার দায় থেকে ফড্ণবীস মহারাষ্ট্রে কৃষিঋণে ৩০ হাজার কোটি টাকার ছাড় ঘোষণা করেছেন বটে, তবে তা ৩১ অক্টোবরের আগে কার্যকর হবে না। এর পর গত সোমবার পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ ছোট ও প্রান্তিক চাষিদের জন্য ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ মকুব বা সুবিধার কথা ঘোষণা করেছেন।
কর্নাটক তীব্র খরায় জ্বলছে গত ৩ বছর ধরেই। এখানে সফরে এসে রাহুল গাঁধী তাই সিদ্দারামাইয়াদের পরামর্শ দিয়ে গিয়েছিলেন, কৃষকদের সমস্যার দিকে নজর দেওয়ার জন্য। দুই রাজ্যে তাদের সরকার ঋণ মাফের পথ নেওয়ার পরে কংগ্রেস ফের প্রশ্ন তুলেছে, ২০০৮-এ যদি মনমোহন সিংহের সরকার ৭৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ মকুব করতে পারে, কৃষকদের বাঁচাতে মোদী সরকার কেন তেমন পদক্ষেপ করছে না? সিদ্দারামাইয়া বিধানসভায় দাঁড়িয়েই বিজেপি নেতাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, ‘‘আপনারা মোদী সরকারকে ঋণ মাফে রাজি করিয়ে দেখান।’’
বিজেপির পাল্টা বক্তব্য, ঋণ মাফের দাবিতে দলের রাজ্য সভাপতি বিএস ইয়েদুরাপ্পা আগামী মাসেই তিন দিনের জন্য অনশনে বসবেন স্থির করেছিলেন। বিজেপি নিরন্তর চাপ দিয়ে যাওয়াতেই রাজ্য সরকার কৃষকদের দাবি মানতে বাধ্য হলো।
কর্নাটকে ২০১৩ সালে, একেবারে বিধানসভা ভোটের দোরগোড়ায় পৌঁছে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খৃষিঋণ মাফ করেছিল রাজ্য সরকার। ক্ষমতায় তখন ছিল বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy