Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কোন পথে উপত্যকায় শান্তি আসতে পারে, হাতড়ে বেড়াচ্ছে নয়াদিল্লি

অশান্ত কাশ্মীর নিয়ে কার্যত দিশাহীন কেন্দ্র। কাশ্মীর-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সন্ত্রাস ছড়ানোর প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আন্তর্জাতিক মহলে বারবার সরব হচ্ছেন। কিন্তু ঘরোয়া রাজনীতিতে কোন পথে উপত্যকায় শান্তি আসতে পারে, দু’মাস পরেও তা হাতড়ে বেড়াচ্ছে নয়াদিল্লি।

অশান্ত উপত্যকা। ছবি: রয়টার্স।

অশান্ত উপত্যকা। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪১
Share: Save:

অশান্ত কাশ্মীর নিয়ে কার্যত দিশাহীন কেন্দ্র। কাশ্মীর-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সন্ত্রাস ছড়ানোর প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আন্তর্জাতিক মহলে বারবার সরব হচ্ছেন। কিন্তু ঘরোয়া রাজনীতিতে কোন পথে উপত্যকায় শান্তি আসতে পারে, দু’মাস পরেও তা হাতড়ে বেড়াচ্ছে নয়াদিল্লি।

হিজবুল জঙ্গি বুরহান ওয়ানির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দু’মাস আগে উপত্যকা যখন অশান্ত হয়ে ওঠে, তখনও কেন্দ্রের ধারণা ছিল না পরিস্থিতি এই জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে। এরই মধ্যে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কেন্দ্র জানাচ্ছে, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পরিবর্তে কাশ্মীরের চলতি অশান্তি এখন ধীরে ধীরে কট্টর ধর্মীয় আন্দোলনের দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে।

সরকারের এক শীর্ষ মন্ত্রীর বক্তব্য, গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাশ্মীরে আন্দোলন যা হয়েছে, তা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য। কাশ্মীরের স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসনের অধিকার অর্জনই ছিল সেই আন্দোলনের লক্ষ্য। ধর্ম সেখানে কোনও দিনই গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু এ বারের অশান্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ক্রমশ ওই আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে ওয়াহাবি মতবাদ। যার একমাত্র লক্ষ্য হল, কাশ্মীরকে কট্টক ইসলামি শাসনের আওতায় নিয়ে আসা। সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজ্যের পিডিপি সরকারের পক্ষ থেকে দিল্লির কাছে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে, যাতে বিস্তারিত ভাবে বলা হয়েছে, কী ভাবে চরমপন্থী ইসলামিক মতবাদ উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ছে। আর মৌলবাদের এই বাড়বাড়ন্তই কেন্দ্রের চিন্তা বাড়িয়েছে।

প্রথমে কেন্দ্র মনে করছিল, উপত্যকায় অশান্তির পিছনে হুরিয়ত নেতৃত্বের উস্কানি আছে। কিন্তু গত এক মাসের বেশি সময় ধরে গৃহবন্দি ওই নেতারা। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘‘এখন দেখা যাচ্ছে আট থেকে আঠারো— যাঁরা পাথর ছুঁড়ছেন, তাঁদের উপরে এই হুরিয়ত নেতাদের প্রভাব প্রায় নেই। মুষ্টিমেয় কিছু ওয়াহাবি চরমপন্থী নেতা এঁদের প্রভাবিত করছে।’’

দু’মাস ধরে কাশ্মীর নিয়ে ঘরে-বাইরে অশান্তি। ব্যর্থ হয়েছে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের সফরও। এই অবস্থায় আজ কাশ্মীরের সর্বশেষ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের একটি প্রতিনিধি দল। সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব দাবি করেন, উপত্যকার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি কবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে, সে ব্যাপারে কোনও মত দেননি তাঁরা।

এরই মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী তথা ভারত-বিরোধী বলে পরিচিত হয়ে ওঠা হুরিয়ত নেতাদের পিছনে কেন করদাতার অর্থ ব্যয় করা হবে, তা জানতে চেয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে। সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের একটি অংশ হুরিয়ত নেতাদের সরকারি সুযোগ সুবিধে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সওয়াল করলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা জানান, ‘‘এখনই ওই ধাঁচের পদক্ষেপ করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা নেই সরকারের।’’

কাশ্মীর সফরের সময় সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের কাছে সামরিক বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা বা আফস্পা প্রত্যাহার করার দাবি জানায় একাধিক কাশ্মীরি সংগঠন। বেশ কিছু রাজনৈতিক দলও তা সমর্থন করে। কিন্তু কেন্দ্রের এক শীর্ষ মন্ত্রী আজ জানিয়ে দেন, কোনও অবস্থাতেই আফস্পা প্রত্যাহার করা হবে না। তিনি জানান, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে তা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। ওই অংশের লক্ষ্য হল আফস্পা প্রত্যাহার করিয়ে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে দেওয়া। যাতে জঙ্গি দমন অভিযান ধাক্কা খায়। সরকার কোনও ভাবেই সেই ফাঁদে পা দেবে না।’’ একই সঙ্গে কেন্দ্র জানিয়েছে, দিশাহীন হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে মেহবুবা মুফতির সরকারের উপরেই ভরসা রাখছে কেন্দ্র। পরিস্থিতি সামলাতে আপাতত রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার কোনও সম্ভাবনা নেই উপত্যকায়।

প্রাথমিক ভাবে পরিস্থিতি সামলাতে না পারার জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছে কেন্দ্র। এক জন জঙ্গির মৃত্যুর প্রতিবাদে কাশ্মীরে যে এত বড় মাপের অশান্তি হতে পারে, সে বিষয়ে কোনও ধারণাই ছিল না গোয়েন্দাদের। এমনকী দিল্লিতে বসে শীর্ষ গোয়েন্দাকর্তারা দাবি করেছিলেন, বিক্ষোভ সাময়িক। দশ দিনেই থেমে যাবে। তা যে কবে থামবে, সে ধারণাও নেই কারও!

উপত্যকার অশান্তি সেটাই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kashmir Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE